বঙ্গবন্ধুর বিচার
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুক্তিকামী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বিচার প্রহসন চালাচ্ছেন। যে মহান ব্যক্তিটি সমগ্র বাঙালী জাতির গর্বকে পৃথিবীর কোণে কোণে পৌঁছে দেবার আয়ােজন করে বাংলাদেশের নতুন মুক্তির পথ দেখালেন, সেই অবিসংবাদিত নেতা ও শােষিত-নিপীড়িত অত্যাচারিত ও অবহেলিত মানুষের মুক্তি পথ-প্রদর্শককে আজ মৃত্যুর মুখে দাড় করিয়ে রাখা হয়েছে। রক্তলােলুপ ইয়াহিয়া খানের আশ্চর্য পর্যায়ের বিচার-এর রায় শােনার জন্যে এপার বাংলার মানুষের এত বেশি আগ্রহ যে, সেই জঘন্যতম বিচারের সম্ভাব্য, রায়ের বিরুদ্ধে আমরা এতটুকু উল্লেখযােগ্য ভূমিকা গ্রহণ করতে পারছি না। কিছুদিন আগে আমরাই তাে বিশ্ববিবেককে পুড়িয়ে মেরেছিলাম, অথচ এখন যে আমাদের বিবেকটাতেই মরচে ধরে গেছে। আমরা এপার বাংলার মানুষেরা এমন বােবা তাে কোনদিনই ছিলাম না!
অথচ আজ কেন কোনরকম সাড়া দিতে পারছি নাঃ ইয়াহিয়াকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে ভারত সরকার তাঁকে মানুষ’ হতে সাহায্য করছেন না কেন? বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতাদের কাছে মুজিবর রহমানের অমূল্য জীবনরক্ষার জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণের উপরি থাকলেও, তারা সবাই এখনাে আশ্চর্যজনকভাবে নীরব রয়েছেন-এটা বিশ্বের সমস্ত প্রগতিশীল ও আদর্শ সচেতন মানুষের কাছে নিঃসন্দেহে কলঙ্কজনক। ইয়াহিয়া খানের যাবতীয় কার্যকলাপের বিরুদ্ধে মানবতার জয় ঘােষণা করার জন্য বৃদ্ধ-অশােকের দেশের সরকার যে প্রশংসনীয় ভূমিকা নিয়েছেন, তা থেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শেষ শিক্ষা গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধুর জীবনরক্ষার জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।
কলকাতার শতাধিক লেখক সাংবাদিক শিল্পী ও বুদ্ধিজীবী সেক্রেটারি জেনারেল) উ থান্ট-এর কাছে, পাঠিয়েছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল এই যে, মুসলিম লীগের সদস্যরা সেই প্রস্তাবটিতে স্বাক্ষর করেননি। মুসলিম লীগ মূলত একটি সাম্প্রদায়িক দল। ওপার বাংলার কোটি কোটি শােষিত মানুষের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে মুসলিম লীগের সদস্যরা এ যাবং কোনরকম উজ্জ্বল আদৰ্শযুক্ত ভূমিকা নিতে পারেননি। ধর্মান্ধতাই তাদের বিবেককে কলুষমুক্ত করতে পারছে না। মুসলমান মা-ভাই-বােনদের কাছে অনুরােধ-আপনারা রাজনৈতিক নামধারী সাম্প্রদায়িক দলের মােল্লাতান্ত্রীকতার বিশ্বাসীদের প্রভাব থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে লেখকবুদ্ধিজীবীদের চিরকালীন সৎ আদর্শে উদ্বুদ্ধ হবার চেষ্টা করে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে সমর্থন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জীবনরক্ষাসহ তার মুক্তির দাবি জানিয়ে পাড়ায়-পাড়ায় অঞ্চলে-অঞ্চলে দৃঢ় মনােভাব নিয়ে সংগঠন গড়ে তুলে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে রবে বিক্ষোভে একটি মাত্র আওয়াজ তুলুন-বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ভারত সরকারের স্বীকৃতি চাই, মুজিবর রহমানের মুক্তি চাই। -কাজী মুরশিদুল আরেফিন, ২৪ পরগণা।
১৪ আগস্ট, ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খন্ড -০৭ , আনন্দবাজার পত্রিকা