You dont have javascript enabled! Please enable it!

স্বাধীন বাংলা বেতার ও জাতীয় সঙ্গীত

কদিন আগে স্বাধীন বাংলা বেতারের অনুষ্ঠান শুনছিলাম। আমার সােনার বাংলা’ গানটি প্রচারের পর ঘােষক বললেন, দেশাত্মবােধক গানটি শুনলেন। এছাড়া আলােচ্য বেতারের অনুষ্ঠান শুরু ও শেষ হয় “জয় বাংলা বাংলার জয়” নামক গান দিয়ে। এই দুটি ঘটনা মিলিয়ে আমাদের কি ধরে নিতে হবে, ‘সােনার বাংলা, আমি তােমার ভালােবাসি’ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত নয়? একথা সত্য যে, বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের পতাকা কিংবা জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করেননি। যে তরুণ সমাজ সর্বপ্রথম স্বাধীন বাংলার দাবি উত্থাপন করেছেন তারাই বস্তুত এ পতাকার পরিকল্পনা ও জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার- আসলে যা এটি গণ-অভ্যুত্থানেরই ফলশ্রুতি- শেষ পর্যন্ত সেই জনতা কর্তৃক পরিকল্পিত পতাকাই মেনে নিয়েছেন। এমন কি বাংলাদেশ সরকার যেদিন মুজিবনগরের শপথ গ্রহণ করেন সেদিন এই পতাকা উত্তোলনের সঙ্গে-সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গেয়েছিলেন সােনার বাংলা, আমি তােমায় ভালােবাসি।” মন্ত্রিবৃন্দ এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি অন্যান্য সকলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে এ গানের প্রতি যথাযােগ্য মর্যাদাও প্রদর্শন করেছিলেন। সে ছবি আনন্দবাজার পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিল।

আজ তবে কাদের জন্য “সােনার বাংলা’ তার প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছে না? আমরা এই গােষ্ঠীকে মনে করিয়ে দিতে চাই, স্বাধীন বাংলা রাজনীতিকদের কীর্তি নয়, এ একান্তভাবে জনগণের সম্পদ। জনগণ তার জন্যে যে পতাকা ও সঙ্গীত নির্বাচন করেছেন, তাকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা সরকরের নেই । ‘সােনার বাংলা নানা কারণে জাতীয় সঙ্গীত হবার যােগ্যতা রাখে। শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা পৃথিবীর একজন শ্রেষ্ঠ কবির রচনা এই গান। এ-গানের সুর ‘আমি কোথায় পাবাে তারে’ গানটির ওপর ভিত্তি করে তৈরি। সে গান একজন বাংলাদেশের মানুষের রচনা এবং সে গানের সুর বাংলাদেশের নিজস্ব পল্লীগিতির।  ‘সােনার বাংলা মাটি ও মানুষের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশকে ভালােবাসার অঙ্গীকার এ গান। এবং সর্বোপরি এগানের সঙ্গে আমাদের বহু আবেগের ও সংগ্রামের স্মৃতি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সােনার বাংলাকে আমরা ভালােবাসি এবং উদাত্ত কণ্ঠে সেই কথাটাই আমরা ঘােষণা করতে চাই।

শ্যামসুল আলম,

কলিকাতা-৪৭

২৫ আগস্ট, ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খন্ড -০৭ , আনন্দবাজার পত্রিকা