বাগদাদের শেখ পরিবার কেমন করে টুঙ্গিপাড়ায় বসতি গড়লেন?
======
পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইসলাম প্রচারের জন্য হযরত বায়েজিদ বােস্তামি (রাঃ) চট্টগ্রামে তশরিফ আনেন। তাঁর সঙ্গীদের অন্যতম ছিলেন শেখ আউয়াল। বঙ্গবন্ধু এই দরবেশ শেখ আউয়ালের বংশের অষ্টম পুরুষ। বাগদাদের হাসানপুর নামক স্থানে শেখ আউয়াল জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শেখ আউয়ালকে আকৃষ্ট করে। চট্টগ্রাম থেকে তাকে একবার সােনারগাঁ যেতে হয়। সেখানে বাঙালি এক মহিলার সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হয়ে সােনারগাঁতেই তিনি থেকে যান। শেখ আউয়াল-পুত্র শেখ জহিরুদ্দিন কান্দারপাড়ে খােন্দকার পরিবারে বিয়ে করেন এবং বেশ কিছুদিন কান্দারপাড়েই থেকে যান। কলকাতাতে তার ছিল পাইকারি ব্যবসা, কিন্তু দূর কান্দারপাড় থেকে কলকাতা আসা-যাওয়া কষ্টসাধ্য ছিল বলে তিনি কলকাতাতেই স্থায়ী নিবাস গড়ে তােলেন। শেখ জহিরুদ্দিনের পুত্র ছিলেন শেখ জান মাহমুদ। শেখ জহিরুদ্দিনের পাইকারি ব্যবসা তার দৌহিত্র শেখ বােরহানুদ্দিন পর্যন্ত চলতে থাকে। ব্যবসায়িক কারণে শেখ বােরহানুদ্দিন পূর্ববঙ্গে আসেন এবং পরবর্তী সময়ে টুঙ্গীপাড়ার কাজি পরিবারে বিয়ে করেন। এরপর তিনি আর কলকাতা ফিরে যাননি। বাগদাদের শেখ পরিবারের গােপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়াতে স্থায়ী বসতি গড়ে তােলার এটাই হচ্ছে আদি কথা ।
শেখ বােরহানুদ্দিনের তিন ছেলে। শেখ এরহাম হােসেন, শেখ তাজ মাহমুদ এবং শেখ কুদরত উল্লাহ। কুদরত উল্লাহ তার পিতার মতাে কাজি পরিবারেই বিয়ে করেন। তারও ছিল তিন ছেলে যথাক্রমে শেখ আবদুল মজিদ, শেখ আবদুল হামিদ ও শেখ আবদুর রশিদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পিতা শেখ লুৎফর রহমান হলেন শেখ আবদুল হামিদের পুত্র। শেখ লুৎফর রহমান ছিলেন সিভিল কোর্টের একজন সেরেস্তাদার। বঙ্গবন্ধুর মাতা সাহেরা খাতুন ছিলেন শেখ লুৎফর রহমানের চাচা শেখ আবদুল মজিদের কন্যা। বঙ্গবন্ধু ছিলেন পিতামাতার তৃতীয় সন্তান। মধ্যবিত্ত মুসলিম সমাজের মধ্যে সেকালে বিবাহ সম্পর্ক স্থাপন প্রায়শ একই পারিবারিক গণ্ডর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতাে। বঙ্গবন্ধু নিজেও বিয়ে করেছিলেন অল্প বয়সে তার চাচাত বােন ফজিলাতুন্নেছাকে। ফজিলাতুন্নেছা তার জন্মলগ্নেই মাকে হারিয়েছিলেন। তাই বঙ্গবন্ধুর মা সাহেরা খাতুন তাকে কন্যাস্নেহে লালন করেন।
Reference:
অস্তরাগে স্মৃতি সমুজ্জ্বল-বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার ও আমি – মমিনুল হক খোকা