সকালের অপেক্ষায়, ওপার বাংলায়
—সুভাষ মুখােপাধ্যায়
একই দিনে সকালের কাগজে আগরতলায় বােমা পড়ার খবর আর রাত্রে বেতারে যুদ্ধাবস্থার ঘােষণা। মাঝে শুধু ষােল ঘণ্টা সময় আমি কলকাতার বাইরে- তার মধ্যে পাঁচ থেকে ছ’ঘণ্টা কাটিয়েছি মাইল তিনেক ভেতর অবধি বাংলাদেশে। মুক্তি ফৌজের শিবিরে, বাঙ্কারে আর শত্রুমুক্ত গ্রামে। ৩রা ডিসেম্বর তারিখেই যে এমন একটা সুযােগ হাতে এসে যাবে এটা আমার কল্পনারও বাইরে ছিল। নানা মহলে চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়েই ধরে নিয়েছিলাম যে, আমার মত উটকো লােকের পক্ষে এ অবস্থায় সীমান্ত পার হয়ে দেখেশুনে আসা সম্ভব নয়। তবু অন্তত বরডার অবধি ঘুরে আসা যাবে এই রকমের একটা ভরসা পেয়ে মুক্তি ফৌজের সাহায্যকারী তিন বন্ধুর একটি দলের সঙ্গে আমি জুটে গিয়েছিলাম। সকালের বাসে গিয়ে সীমান্ত দেখে সন্ধ্যেয় শেষ বাস ধরে রাত্তিতে কলকাতায় ফেরা। সফরের এই ছিল ছক। আগে কি আর জানতাম এই ছকের জন্য পরে আপসােস করতে হবে? যখন জানলাম তখন আর তা থেকে ফেরবার কোন উপায় নেই। আমরা যারা নিরাপদ দুরত্বে থাকি, উপদ্রুত বরডারের কাছাকাছি এলাকা সম্পর্কে আমাদের ধারণাগুলাে
অনেক সময়ই হয় মনগড়া। বাসে আসতে আসতে সেটা টের পাচ্ছিলাম। সকালের বাসে তাে বটেই এমন কি শেষ বাসেও, সারা রাস্তা যাত্রীদের যাতায়াতের বিরাম নেই। লােকজনের কথাবার্তায় চালচলনে জীবন যাত্রায় কোথাও এতটুকু আতঙ্কের ভাব দেখলাম না। ইস্কুল কলেজ দোকানপাট সব কিছুই স্বাভাবিক ভাবে চলছে। নৌকায়-ইছামতী পার হয়ে আমরা প্রথমেই গেলাম মুক্তিফৌজের ছাউনিতে। গেটে দুজন কমবয়সী বন্দুকধারী পাহারা। হক সাহেব অভ্যর্থনা জানিয়ে আমাদের ভেতরে নিয়ে গেলেন। এক পাশে পূর্ববাংলার একটা পুরানাে বাস। এক জায়গায় ট্রাক থেকে খালাস করা হচ্ছে মরটারের গােলা। গাছের নিচে টেবিল পাতা। তার চারপাশে চেয়ার। খানিক পরেই চা এসে গেল। একটু ইতস্তত করে তারপর সীমান্তের ওপারে যাওয়ার কথাটা পাড়া হল। সঙ্গে সঙ্গে ‘না’ বলে দিলেও আমরা কিছু মনে করতাম। হক সাহেব একটু ভাবলেন। তারপরেই রাজী হয়ে গেলেন। পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে আমাদের। সঙ্গে লােক যাবে। তাছাড়া মুক্তিফৌজকে ডিফেনসের জায়গায় খাবার পৌছে দেবার জন্যে বাহকদের নিয়ে খানিকটা রাস্তা যাবে জীপ। কাজেই এপারে কিছুটা রাস্তা আমরা হাঁটার হাত থেকে বাঁচব। দেয়ালে টাঙানাে সেক্টরের বড় ম্যাপে অবস্থাটা একটু বুঝিয়ে দিলেন হক সাহেব। এই হল ভোেমরাসাতক্ষীরা রাস্তা। দুপাশ থেকে সরে এসে রাস্তা জুড়ে মাঝখানের এই দুটো জায়গায় পাক ফৌজ ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে। দ্বিতীয় জায়গায় মুখােমুখি হয়ে জমির ওপর বাঙ্কার খুঁড়ে আক্রমণের অপেক্ষায় আছে একদল মুক্তিফৌজ এই পর্যন্ত যেতে পারবেন আপনারা। দক্ষিণে এই বিরাট জায়গা জুড়ে একটানা মুক্তাঞ্চল। তাছাড়া সাতক্ষীরার রাস্তাটুকু ছাড়া ডাইনে বায়ে পুরােটাই আমাদের দখলে।
হতাহতের অনুপাত কি রকম? ওদের প্রতি এক শােতে আমাদের এক কিংবা দুই। শিবিরে আরও কয়েকজন ছিলেন। তারা বললেন আগে এলে দেখতেন এখানে গিজ গিজ করছে লােক। এখন সবাই ভেতরে অনেক দূর এগিয়ে এগিয়ে চলে গেছে। পাক সৈন্যদের মনােবল কি রকম? মারতে তাে কসুর করছে না ওরা। তবে ধরা পড়লে ওদের দেখতে হয় ভয়ে থর থর করে কাপে। মনের জোর বলে কিছু নেই। অস্ত্রের জোরই ওদের জোর। কথা শেষ করে জীপে উঠলাম। গ্রামের ভেতর দিয়ে দিয়ে গরুর গাড়ির রাস্তা যতদূর সেই অবধি গিয়ে থামল। খড়ের চাল দেওয়া মাটির ঘরে ইস্কুল হচ্ছে। আশেপাশে বাড়ি থেকে চরকা আর তাঁত চলার শব্দ । ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে ব্যাজের কাপড়। গ্রামের নাম পানিতর। দেখলেই বােঝা যায় বর্ষায় পাশের ঢালু জায়গাটা জলে জলাকার হয়। কিছু কিছু জায়গায় নদীর জোয়ারের জল আটকা পড়ে থাকে। তার ওপর বাঁশের সাঁকো। বেশ খানিকটা এগিয়ে গেলে কাটাখাল। এই খালের ওপারে আগেকার পাকিস্তান আর এখনকার বাংলাদেশ। এই খালের এপার-ওপার জুড়ে বিরাজ করছে সীমান্তের আইনভাঙ্গা বাঁশের এক সঁকো। পাক বৰ্গীর হাঙ্গামায় হাজার হাজার আপারের লােক শরণার্থী হয়ে এসেছে এপারে। এই সাঁকো দিয়েই আবার শরণার্থীরা ওপারে ফিরবে।
সঁকোটা পেরিয়ে যখন বাংলাদেশের মাটিতে পা দিলাম তখন খুব অবাক লাগল। মাটিতে, গাছপালায়, মানুষের হাবেভাবে আর ভাষায় কোথাও কোনাে তফাত নেই। | দুজন বয়স্ক লােক-বাঁধ রাস্তার ওপরদিকে যাচ্ছিল। একজনের বাড়ি সাকরায়, আরেকজনের গয়েসপুরে । বার বার করে তারা জানতে চাইল আমাদের সঙ্গে তাদের যাওয়ার দরকার আছে কিনা? আমাদের সঙ্গে মুক্তিফৌজের যে লােকটি পথ প্রদর্শক হয়ে হাঁটছিলেন, তিনি যেতে যেতে বললেন, এখানকার গ্রামের লােকই এতদিন গােপনে গােপনে আমাদের সাহায্য করে এসেছে। গ্রামে লােকজন থাকলে মুক্তিফৌজের খুব সুবিধা হয়। তাদের কাছে থেকে খাবার আর খবর একসঙ্গে দুটোই পাওয়া যায়। বাঁধের ডানদিকে একটু এগিয়ে একটা সুইস গেট। মুক্তিবাহিনী গােড়ার দিকেই ডিনামাইট দিয়ে সেটা উড়িয়ে দিয়েছিল ঃ তার ফলে বড় একটা এলাকা জলে ডুবে যাওয়ায় পাক ফৌজ বেশিদূর এগােতে পারেনি। বাঁদিকে বাধের রাস্তা বরাবর সাতক্ষীরার রাস্তার দিকে আমরা উত্তরে এগােতে থাকলাম। কিছুদূর অন্তর অন্তর রাস্তায় পাশে পরিত্যক্ত বাঙ্কার আর গড়খাই। মুক্তিফৌজ যেমন যেমন এগিয়েছে, সেই মত পুরনাে। বাঙ্কার ছেড়ে নতুন বাঙ্কারে গিয়ে ঘাঁটি গেড়েছে। সবচেয়ে আগুয়ান বাঙ্কার এখন পাঁচ মাইল ভেতরে। পাক ঘটির প্রায় নাকের গােড়ায়।
বাঁধের রাস্তা থেকে পূবের দিকে গাঁয়ের পায়ে-চলা রাস্তায় নামতে নামতে আমাদের পথপ্রদর্শক বন্ধুটি বললেন, ঐ যে দেখুন রিফিউজি লতা- এ অঞ্চলে বন্যার পর হয়েছে। | বাঁধ থেকে গাঁয়ের রাস্তায় নেমে গেছে খুঁটির গায়ে জড়ানাে তার। এই তার দিয়ে মূল শিবির আর অগ্রবর্তী প্রত্যেকটি ঘাটির মধ্যে টেলিফোনে যােগাযােগ রাখা হচ্ছে। | বুনাে ঝােপঝাড়ে চারিদিক ছেয়ে গেছে। দেখেই বােঝা যায়, এ রাস্তায় অনেকদিন মানুষ পদার্পণ করেনি। বেশ খানিকটা এগােবার পর মধ্যবিত্ত ঘরের দুটি ছেলেমেয়েকে আসতে দেখা গেল। কলেজ ইস্কুলে পড়া ভাই আর বােন। এতদিন ছিল না; মুক্তিফৌজ এগিয়ে যাওয়ায় দিন দুই হল আবার গ্রামে ফিরে এসেছে। মুচিপাড়ার ভেতর দিয়ে যেতে যেতে দুপাশে দেখলাম খাঁ খাঁ করছে ঘরবাড়ি। একটাতেও লােক নেই । দাওয়ার ওপর মাটির হাঁড়িকলসী। ধানের গােলাগুলি ভেঙ্গে তছনছ করা হয়েছে। খসিয়ে নেওয়া জানালা দরজা গুলাে হাঁ হাঁ করছে। এরপর ভােমরা গ্রামে এসে পৌছুলাম মুক্তিফৌজের এক ঘাঁটিতে। পরিত্যক্ত বাড়িটি কোনাে এক সম্পন্ন চাষীর। উঠোনে কয়েকটা মরাই। পৈঠে দেওয়া উঁচু দাওয়া। টিনের চালের মাথায় টিন কেটে লেখা ? “গােলাপ মিস্ত্রী ১৩৬৯ সাল ১লা বৈশাখ ভােমরা ধােনাই ভবন।”
ধােনাই ভবনে বসে থাকতে থাকতে মুক্তি ফৌজের মর্টার ঘাটির ভারপ্রাপ্ত নুরুলের সঙ্গে আলাপ হল। নুরুল বললেন; গ্রামে ঢুকবার সময় প্রথম বাড়িটি লক্ষ করেছিলেন কি? ঈদের দুদিন আগে ঐ বাড়ির দেয়ালে ঠিক দিয়ে গায়ের এগারাে জন লােককে দাঁড় করিয়ে খান সেনারা গুলি করে মেরেছিল। রক্ত ধুয়ে ফেলা হয়েছে বটে, কিন্তু গেলে এখনও তার দাগ দেখতে পাবেন। গ্রামে এখন একটা বাড়িতেও লােক নেই। আজকাল অবশ্য পুরুষরা দিনে এসে চাষবাসের কাজ করে দিন থাকতেই ফিরে চলে যায়। মেয়েদের নিয়ে এসে সপরিবারে বসবাস করতে এখনও তাদের ভয়। খান সেনারা গায়ে ঢুকে প্রথমেই টেনে নিয়ে যেত মেয়েদের। বলা যায় না খান সেনারা আবার যদি ফিরে আসে। গা পেরিয়ে খেজুর বনের মধ্যে মর্টারের যে ঘাটি, নুরুলের উপরােধে সেখানে যেতেই হল। সারারাত জেগেছে, ছাউনির তলায় মাচার উপর তারা তখনও ঘুমােচ্ছে। লড়াইয়ের ময়দানে বসেও আতিথেয়তার কোনাে ত্রুটি নেই। খুবই লজ্জা করছিল। কিন্তু ওঁরাও নাছােড়বান্দা। তারপর মঠ পেরিয়ে চৌবড়ির উত্তরে সুবেদার জাহাঙ্গীর সাহেবদের ঘাটি। আর মাইলদুই পূবে গেলে মুক্তিফৌজের সবচেয়ে সামনের বাঙ্কার। জাহাঙ্গীর সাহেবরা এ বাঙ্কার খালি করে একেবারে সামনের ঘাটিতে কালকেই চলে যাবেন। এখনও ওয়াকি টকিতে এই দুই ঘাটির যােগাযােগ রাখা হচ্ছে।
সেখানে ওদের বাঙ্কার, সেখান থেকে দেখা যাচ্ছিল মাঠের মধ্যে একদল লােক ধান কাটাই-মাড়াই করছে। ওরা চৌবাড়ি গাঁয়ের লােক। ওরা কেউ গ্রাম ছেড়ে যায়নি। পাক ফৌজের হাতে চৌবাড়ি গ্রামের কী দশা হয়েছিল তার গল্প বলল ঐ গ্রামের দাড়িওয়ালা রহিম বক্স গাঈন। পিঠটা দেখিয়ে বলল, সেপাইরা কি রকম পিটিয়েছে আমাকে দেখুন- আমাকে ওরা বলেছিল আমি। নাকি মুক্তিফৌজের লােক। জমাদার মজিদ সাহেব এতক্ষণ ছিলেন না। এসে রহিম বক্সকে দেখে বললেন- ফটো তােলার গল্পটা এঁদের বলেছ?
গায়ের সমস্ত মেয়েপুরুষকে কুলিয়া ব্রিজের তলায় নিয়ে গিয়ে নৌকায় বসিয়ে পাক ফৌজ ছবি তুলে কাগজে ছেপেছিল এই বলে যে, রিফিউজি দল আবার বস গ্রামে ফিরে আসছে। কিন্তু সাজানাে রিফিউজিরাও সেদিন সবাই তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারেনি। পরে পাক ফৌজের হাতে-পড়া সেদিনের নিখোঁজ পাঁচটি মেয়ের লাশ নদীর জলে ভেসে উঠতে দেখা গিয়েছিল। | রহিম বক্সের গলা ধরে গিয়েছিল বলতে বলতে। ওরা বাড়ীর পর বাড়ী জ্বালিয়ে দিয়েছে। আর এ কাজে তাদের ডানহাত ছিল ঐ গ্রামেরই মাতব্বর গফর সর্দার। দিন কয়েক হল সে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে। খান সেনারা হাটে হাটে এখন এই বলে ঢােল দিয়ে বেড়াচ্ছে যে, চল্লিশ বছরের নিচে যাদের বয়স পল্টনে নাম না লেখালে তাদের গর্দান যাবে। | তারপর একটু থেমে রহিম বক্স বলল, ওরা মানুষ নয়। ট্রেনিং-পাওয়া তিনজন নতুন রিক্রুট বন্দুক হাতে নিয়ে এসে হাজির। তারা লড়বে। উনিশ-কুড়ি বছর বয়স। লুঙ্গিপরা আবুল হােসেন আর ইউসুফ আলি। আর সেই সঙ্গে প্যান্টপরা রবীন্দ্রনাথ সাহা। মিলে কাজ করত। তিনজনই ইস্কুলে পড়েছে। চোখের দিকে তাকালাম- ভয়ের চিহ্ন নেই। | চা-জলখাবারের পর্ব সারতে সারতে বেলা পড়ে এল। আর ক্রোশখানেক রাস্তা এগােলে আর সন্ধ্যার মধ্যে ফেরা যাবে না। বাঁশের সরু সকো, নদীর এপারে কারফিউ। কাজে তাড়াতাড়ি রওনা হতে হলাে।
ক্ষেত্রের আল দিয়ে দিয়ে রাস্তা সংক্ষেপ করে আমরা যখন পদ্মসাকরায় পৌছুলাম, সূর্য তখন ডুবছে। মাঠের মধ্যে ছড়াসুদ্ধ কাটা ধান। লােকবল কম। তাই একেবারের নেওয়া যাচ্ছে না। কাজেই চুরি হওয়ার ভয় নেই। দুপাশে রাশি রাশি খেজুর গাছ। গ্রামের ধারে কাছের গাছগুলােতেই সবে দা-কাটা দাগ। বাড়ির আশে। পাশে দুচারদিন আগে বােনা সরষের চারাগুলাে সবে মাথা তুলতে শুরু করেছে। | কিন্তু এবারের ধান মানুষের বােনা নয়। প্রকৃতিদত্ত। আগের বছরের ধান থেকে আপনা আপনা ফসল ফলেছে।
অটোমেটিক রাইফেল হাতে আমাদের যিনি এগিয়ে দিতে এসেছিলেন, মুক্তিফৌজের সেই সৈনিক বললেন, এবারের ধান হয়েছে অটোমেটিক। কেননা চাষ করাতাে আর সম্ভব হয়নি। | পদ্মাসাকরায় ঢুকে আমরা অবাক হয়ে গেলাম। গ্রামের আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই গত দুই তিনদিন হয় ক্যাম্প থেকে ফিরে এসেছে। দেখে চেনবার জো নেই যে, কদিন আগে এরা ছিল লক্ষ লক্ষ হতভাগ্য শরণার্থীর দলে। চোখেমুখে আতঙ্কের লেশ নেই। উঠোনে স্তুপাকার ধান। | রাস্তা দিয়ে ফিরতে ফিরতে দেখলাম একটি পরিবার গ্রামে ফিরছে। এক ছেলের হাতে টিনের সুটকেস আর মেয়ের হাতে পুটুলি। মার কোলে শিশু।
একটা হানাবাড়ি যেন প্রাণ পেয়ে জেগে উঠছে। পেরিয়ে সীমান্তের এপারে এসে পানিতরের গ্রামে ঢুকতে যাব, ঠিক সেই সময় তিনবার মর্টার ছেড়ার আওয়াজ। সঙ্গে সঙ্গে চোখের সামনে ভেসে উঠল নুরুলের মুখ । যে মুখ ঘৃণায় বিকৃত নয়। ভালবাসায় উজ্জ্বল। যেদিকে নুরুলদের রেখে এসেছিলাম পেছন ফিরে সেইদিকে তাকালাম। আকাশে লাল চন্দনের ফোটার মত চাদ সেই শক্রদের সনাক্ত করছে- যারা মানুষ নয় । মুক্তি ফৌজের শিবিরে পৌছে শুনি খাবার তৈরি করে সাড়ে তিনটে থেকে তারা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। আমরা না আসায় সমস্ত ঘাঁটিতে টেলিফোন করে খবর নিয়েছেন। | কিন্তু তৎক্ষনাৎ ঝােলাঝুলি কাঁধে ফেলে ফেরী পার না হলে আমরা আর সে রাত্রে ফেরবার বাস পেতাম বাসে আসতে আসতে দেখলাম, হাজার হাজার শরণার্থী নদীর ধারে সার বাধা নৌকায় রাত্রি প্রভাতের অপেক্ষায়। আর তাদেরই ঘরের মানুষেরা বাংলাদেশের মাঠে মাঠে রাত জেগে আগুনের মুখে ঘুরিয়ে আনছে। স্বাধীনতার নতুন দিন।
৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খন্ড -০৭ , আনন্দবাজার পত্রিকা