You dont have javascript enabled! Please enable it! কলকাতা-ঢাকা-কলকাতা (৩) বাংলাদেশের ডায়েরি - অরুণ চক্রবর্তী - সংগ্রামের নোটবুক

কলকাতা-ঢাকা-কলকাতা (৩) বাংলাদেশের ডায়েরি।

–অরুণ চক্রবর্তী

৩০ মার্চ রাত অনেক এখন অনেক রাত। সিরাজগঞ্জ ঘাটের এক কুঁড়ে ঘরের হােটেলের পাশে একটা বেঞ্চে বসে আছি। আকাশে ঝকঝকে চাঁদ উঠেছে। তৃতীয়া অথবা চতুর্দশীর চাঁদ, পঞ্চমীরও হতে পারে। তাহলে, সবে পঞ্চমী। নদীতে নৌকা চলেছে। দূরে দূরে এক একটা আলাের বিন্দু দেখতে পাচ্ছি, সেগুলাে নৌকোর বুঝতে পারছি। সিরাজগঞ্জ ঘাটে আরাে অনেক মানুষ এসেছে। বােরখা-পরা অনেক ভদ্রমহিলাক দেখলাম। এই ভীড়ে মুসলমানদের বেশী নজরে পড়ছে। আমি শুধু কানখাড়া করে রেখেছি। চারপাশের খবরের আশায়। নিজেকে নির্দেশ দিয়েছি, কোন প্রশ্ন কাউকে করবে না। প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে নিজেকে কি বলছি জেনে নিতেও নির্দেশ দিয়েছি। আমার মনে ভীতি আমাকে এমনিতেই করুণ করে রেখেছিল, তবু একটা উদাস অসহায়তা সারা চোখে মুখে ছড়িয়ে রেখেছি।

আমি ইতিমধ্যেই আমার শত্রুকে চারভাগে ভাগ করে নিয়েছি। এক, মিলিটারি- যারা দেখা মাত্র গুলি করবে, দুই, জামাত-ই-ইসলামী, নিজামে ইসলামী, মুসলীম লীগ ইত্যাদি গোঁড়া ঐশ্লামিক দলগুলাে, যারা আমাকে আওয়ামী লীগের সমর্থক ভেবেও খতম করতে পারে, কিংবা মিলিটারির হাতে তুলে দিতে পারে। তিন, অবাঙ্গালী মুসলমান, যারা নির্দয় ভাবে আমাকে জবাই করবে তাদের আওতায় পেলেই। এবং চতুর্থত,  সমাজবিরােধী, চোর ডাকাত ইত্যাদির দল। এরা পাঁচটি টাকার জন্য আমাকে হত্যা করতেও দ্বিধান্বিত হবে আমি ছাতাটাতে থুতনি লাগিয়ে চুপচাপ ভাবছি। এবার কি করব? সিরাজগঞ্জ নিরাপদ শহর নয়। সবাই। এদিকে চলে এসেছে। রাতে নদী পেরুতে সবাই ব্যস্ত। ঈশ্বরদি এখান থেকে সােজা সড়ক পথে যুক্ত। পাক সৈন্যদের শক্ত ঘাঁটি। সিরাজগঞ্জে মিলিটারি এসেছে। সিরাজগঞ্জ টাউনে গােলাগুলি চলছে ২৬ তারিখে। পরের দুদিনও। সিরাজগঞ্জে অনেক মানুষ নিহত হয়েছে সবাই আলােচনা করছে। সিরাজগঞ্জের এক সিনেমা হলের কাছে ব্রিজের ধার দিয়ে অনেক বাঙ্গালী অবাঙ্গালীর মৃতদেহ পড়ে আছে। দাঙ্গা হয়েছে বলে জানতে পারলাম।

আমি কোথায় কোন্‌দিকে যাবাে বুঝতে পারছি না। নৌকা থেকে নেমেই শুনেছি আকাশবাণী খবরদিয়েছে ময়মনসিংহে প্রচণ্ড যুদ্ধের পর মুক্তিফৌজ বিজয়ী। বুঝলাম নদীর ওপারে ময়মনসিংহ জেলায় প্রবেশ করা মূর্খামি হবে। | আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। কি করব বুঝতে পারছি না, আমি জানি, সিরাজগঞ্জ পাক সমর্থকদের শক্ত ঘাঁটি। কাল সকালের আগে এখান থেকে পালাতে না পারলে আমি নিজেকে বাঁচাতে পারব বলে বিশ্বাস। হয় না। নদীর চরের দিকে এগিয়ে গেলাম। একটু সরে মাটিতে বসলাম। চাদের আলােয় লুকিয়ে ম্যাপটা বার করলাম। আমি এমন অসহায়তা আগে কোথাও কোন অবস্থায় বােধ করেছি বলে মনে হল না। সব কিছুই ধূসর মনে হচ্ছিল। নদীর তীরবর্তী ফরিদপুর প্রায় ৭০-৭৫ মাইল পাখী-ওড়া দূরত্ব। পাবনা প্রায় ৫০ মাইল পাখী-ওড়া দূরত্ব। ঈশ্বরদি পাবনার কাছে। ভয় পেলাম খুব।

চিক্কার করে কেঁদে উঠলেন একজন পুরুষকণ্ঠে। নৌকো থেকে তিনি নামছেন। কয়েকজন তাকে ধরে নামাচ্ছে। কী আকুল চিৎকার। চারদিক থেকে অনেকে ছুটে দ্রুত পায়ে সেদিকে এগিয়ে গেলেন। আমিও। রক্তে ভেজা জামা। পিঠের কাছে গভীর ক্ষত হয়েছে। একটা ছেড়া লুঙ্গি দিয়ে বাঁধা। লুঙ্গিটাও রক্তস্নাত । কারা ওকে নিয়ে গেল অন্য দিকে। শুনলাম স্ত্রী ও শালাকে সঙ্গে করে গােপালগঞ্জ থেকে পায়ে হেঁটে নিরাপদ আশ্রয়ের খুেঁজে বেরিয়েছিলেন। পথে ডাকাতদল স্ত্রীকে অপহরণ করেছে। শালাকে খুন করেছে। লােকটা কোনরকমে প্রাণে বেঁচেছেন। সমস্ত কিছুই লুঠ হয়ে গেছে। 

৩১ মারচ সকাল কিছুক্ষণ আগে আমরা চারাবাড়ী ঘাট পেরিয়ে এলাম। আমি ঘাট থেকে দুই হাঁড়ি চমচম কিনে নিয়েছি। যতদূর বয়ে নিয়ে যেতে পারব নিয়ে যাবাে। এখানকার কয়েকজনকে কিছু দিতেও হবে। সিরাজগঞ্জ ঘাটে যে ভদ্রলােককে একজন প্রফেসরের মতাে দেখতে লেগেছিল আসলে তিনি সিরাজগঞ্জ কাস্টমস অফিসে কাজ করেন। নাম, সিরাজুল হক। হক সাহেব কিছু একটা উঁচু পদে কাজ করেন। আমি কথা বলবার জন্য একমাত্র তাকেই ঠিক করলাম। তাঁর সঙ্গে স্ত্রী আছেন। আর আছেন বছর পাঁচেক বয়সের একটা ছেলে।

হক সাহেব বরিশালী ভাষায় কথা বলেন। অনেক সময় তার বক্তব্য অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। আমি যতটা সম্ভব বাঙাল ভাষা (ঢাকা-ময়মনসিংহের) ব্যবহার করেছিলাম (এ ভাষাটা আমার অনেক আয়ত্তে)। এখন লঞ্চটা কোথা দিয়ে চলেছে জানি না। তবে এ এক সুন্দর পরিবেশ। পশ্চিমের পড়ন্ত রােদে নদীর জল হলুদ হয়ে উঠেছে। মাঝে মাঝে নৌকা নজরে পড়ছে। দুপাশে বিস্তীর্ণ নদী। এপার ওপার দেখা যাচ্ছেনা। স্রোতের অনুকুলে যমুনার বাম কোল ঘেঁষে লঞ্চটা ঝঝক্ করে এগিয়ে চলেছে। আমাদের দলের সবাই লঞ্চটায় চারপাশের রেলিংয়ের ধার দিয়ে বসে। কেউ ঘুমােচ্ছে। কেউ নদী দেখছে। বাচ্চাদের কান্নার আওয়াজও আসছে। 

৩১ মারচ, দুপুর গতকাল শেষ রাত্রে ‘ভৈরব’ নামের এই লঞ্চটায় আমরা একদল বরিশালের উদ্দেশ্যে সিরাজগঞ্জ ত্যাগ করেছি। বরিশাল সেখান থেকে পাখী ওড়া দূরত্বে প্রায় দেড়শ’ মাইল। লঞ্চ ঠিক কোন্ পথে যাবে ঠিক হয়নি তবে প্রায় দুশ’ মাইল পথ তাকে পাড়ি দিতেই হবে। গত রাতে এই দলটা লঞ্চটা যখন ভাড়া করছিল তখন আমি তাদের দলে ভিড়ে যাই। অনেকক্ষণ এক মধ্যবয়সী প্রফেসর ভদ্রলােককে লক্ষ করবার পর আমার বিপদের কথা তাকে জানাই। বলি, ঢাকায় পড়ি, দিনাজপুরে বাড়ি যেতে পারছি না। বরিশালে মেজভাইয়ার শ্বশুরবাড়িতে যাবাে। ভদ্রলােক সহৃদয় । একশ টাকায় রাজী হয়ে গেলেন। সাতটা পরিবারের লােক দু’হাজার টাকায় ভৈরবকে ভাড়া করেছে। এবাই সিরাজগঞ্জ টাউনের লােক, বরিশালে বাড়ি। সব মিলিয়ে ২০-২৫ জন লােক হবে।। আমাদের লঞ্চ নন্-স্টপ চলছে। লােকালয় দেখলে একটু জোরেই চলছে। দু’পাশে গাছের সারি। নৌকার সারি। জল ঢেউ তুলে ছলছল করছে। আজ আকাশটা মেঘলা। রৌদ্রের দেখা নেই। দক্ষিণ-পূর্ব কোনে কালাে মেঘ জমতে দেখেছিলাম একবার। এখন আর চোখে পড়ছে না।

একটা অস্বস্তি বােধ করছি সব সময়। মৃত্যুর কবল থেকে নিজেকে উদ্ধার করতে পারব, এমন প্রত্যয় এখনাে জাগছে না। আমার কেমন অসহায় বােধ হচ্ছিল। আমি ভাবছিলাম এখন যদি গানবােট আসে। ভাবতে পারি না। যে নৃশংসতার কথা সিরাজগঞ্জে শুনে এসেছি, ঢাকায় প্রত্যক্ষ করেছি তা থেকে এটুকুই বুঝেছি কামানের গােলা অবিরাম ছুটে আসবে। আর্ত চিৎকার উঠবে। লঞ্চটা ডুববে। ভাসবে শুধু মৃতদেহ। গভীর রাত চাঁদের আলােয় সারা প্রকৃতিতে মায়া ছড়িয়ে আছে। দূরে একটা দুটো আলাের বিন্দু কাপছে। হয়তাে নৌকা চলছে যাত্রী নিয়ে। লঞ্চের ঝকঝক শব্দ একটানা শুনেই চলেছি। হক সাহেবকে একটা সিগ্রেট অফার করলাম। হক সাহেব বসলেন। গল্প হচ্ছিল। ঢাকার খবর তাকে আগেই দিয়েছি। সিরাজগঞ্জের কথাও জেনেছি। গল্প যুদ্ধের বাইরে বেরুতে পারছেনা। ভেবে দেখলাম, সম্ভবও নয়, ওপাশে দুজন ভদমহিলা আতঙ্কের চিত্তে যুদ্ধের কথা আলােচনা করছেন। আমরাও। সবই এমন হতে পারে, তেমন হতে পারে। আমি প্রকৃতিকে উপভােগ করতে পারছি না। ১ এপরিল, সকাল আমাদের লঞ্চ গােয়ালন্দ ছাড়িয়ে কিছুক্ষণ আগে ফরিদপুর পার হয়েছে। ফরিদপুরের নদীর তটে অনেক মৃতদেহ। কিছু মৃতদেহ নদীতে ভেসে যাচ্ছে। কয়েকটা কুকুরকে লাশ নিয়ে টানাটানি করতে দেখেছে অনেকে। | গােয়ালন্দে ভৈরব থেমেছে। অনেকে সেখানে নেমেছিল। আমি চারাবাড়ীতে নামার পরে এখনাে মাটি দুইনি। হক সাহেব বলেছিলেন, ফরিদপুর সামরিক বাহিনীর দখলে। সেখানে বাঙ্গালী অবাঙ্গালীদের মধ্যে দাঙ্গা হয়েছে। অল্প যুদ্ধেই নাকি সামরিক বাহিনী ফরিদপুর দখল করেছে। | গােয়ালন্দ থেকে লঞ্চ ছাড়তে তাই দেরী হয়েছে। আমাদের দলের সবাই এবং লঞ্চের সারেং আবদুল্লাও ইতস্তত করছিল। ফরিদপুরের কাছে কোন বিপদ হতে পারে। আমি এদিকে এখন ন-আসারই পক্ষপাতী ছিলাম। | তবে পরে ফরিদপুরের ওদিক থেকে আসা একদল যাত্রীর কাছে শােনা গেছে, নদীপথ মােটামুটি ভালাে। বিপদের সম্ভবনার কথা স্বভাবতই কেউ বলতে পারল না।

শেষে সারেং বুদ্ধি করে পদ্মার পূর্বের তীর ঘেঁষে লঞ্চ চালিয়ে এনেছে। ফরিদপুরের তট আমাদের চোখে পড়েনি। বিশাল পদ্মার দিগন্তের আড়ালে ছিল তা। কিছুক্ষণ পরেই আমরা ডান দিকে আঁড়িয়াল খাঁ নদীতে ঢুকবাে পদ্মাকে বাঁয়ে রেখে। শুনেছি, এই পথে  সােজা গেলেই পৌছুবাে বরিশালে। আমি ম্যাপ দেখেছি। আড়িয়াল খাঁ নদীটা একটা সুতাের মতাে এঁকেবেঁকে গেছে। হক সাহেব বললেন, এখনাে ৮০-৯০ মাইলের পথ। সন্ধ্যার আগে পৌছুনাে যাবে না হয়তাে। বিকাল আমার নিস্তার নেই দেখছি। বরিশাল পৌছুতে রাত হয়ে যাবে ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। থাকবাে কোথায়? হক সাহেবকে সিরাজগঞ্জে মিথ্যাকথা বলেছিলাম। বরিশাল সম্বন্ধে আমার কোন জ্ঞানই নেই। সেখানে কাউকে চিনি না। | কি করব ভেবে পাচ্ছি না। হক সহেব যখন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, বলেছি, বাস স্ট্যান্ডের কাছে বাড়ি। মেজভাইয়ার সাদীর সময় এসেছিলাম। তাও পাঁচ বছর আগে। শ্বশুর সাহেবের নাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন, বলতে পারিনি।

কিছুক্ষণ আগে জানতে পেরেছি, হক সাহেব পিরােজপুরে যাবেন। বরিশাল থেকে বেবী ট্যাক্সিতে যেতে হয়। কিছু দূর (জায়গাটার নাম বিদ্ঘুটে, মনে পড়ছে না), তারপর নৌকায় পিরােজপুর। সব মিলিয়ে ৪০ মাইলের পথ । আমি মহাবিপদে পড়লাম। শুনেছি, বরিশালে কোন গােলাগুলি চলেনি। শহরে মিলিটারিও নেই। জয় বাংলা পতাকা উড়ছে শুরু থেকেই। ভাবছি, হক সাহেবকে সব খুলে বলি। কি করবাে, বুঝতে পারছি না। দ্র লােক মন্দ নয় বলেই মনে হচ্ছে। বরিশালে নেমে বিস্মিত হয়েছি। থানায় জয় বাংলা পতাকা উড়ছে। আলাে জ্বলছে। লােক চলাচল করছে। রিক্সা, সাইকেল, বেবী ট্যাক্সি সবই স্বাভাবিক। আমি হক সাহেবকে সব খুলে বলেছি। আমি কলকাতার ছেলে, স্কুল শিক্ষক। গল্প-উপন্যাস লিখি। উপকরণ সংগ্রহ করতে ঢাকায় গিয়েছিলাম। হক সাহেব প্রথমটা চিন্তিত ছিলেন। বরিশালের কালীবাড়ি রােডে তার আত্মীয়ের বাড়িতে উঠলাম। হক  সাহেব আমাকে পিরােজপুরে নিয়ে যাবেন বলছেন।

৩ এপ্রিল রাত গত ১ তারিখের রাতে এখানে পৌছেছি। কাল ভােরে পিরােজপুরে রওনা হবাে। এই দুই দিনে বরিশাল শহর ঘুরে ঘুরে দেখলাম। ছােট শহর। নতুন ধরনের বিল্ডিং চোখে পড়ল অনেক। তবে পুরনাে বাড়ি-ঘরই বেশী। এখানকার মানুষগুলােকে যােদ্ধা মনে হয়। অধিকাংশেরই পেশিই শক্ত, দৃঢ়মুষ্টি। প্রত্যেকেই একটু স্পীডে কথা বলে। একমনে না শুনলে তাদের বক্তব্যের অনেক অংশই অস্পষ্ট থেকে যায়। বরিশালে এসে এবং দুদিন থেকে আমার প্রথম যা মনে হল, তা’, এখানে যুদ্ধ তার কোন ছায়া ফেলতে পারেনি। বিপুল শব্দে আকাশবাণীর সংবাদ প্রচারিত হয় বিভিন্ন রেডিও থেকে। সবাই উৎকণ্ঠা নিয়ে সেই সংবাদ শােনে বাজারের বিভিন্ন দোকানের চার পাশে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে। | আমি খুবই বিস্মিত বােধ করলাম। মাত্র দশ মাইলের মধ্যেই শক্ত নৌবহরের ঘাটি। অথচ এখানে কোন গােলাগুলি চলেনি। বরিশালে অবাঙ্গালীরা মােটেই নেই জানলাম। সম্ভবত সে কারণেই দাঙ্গার কোন কালাে ছায়া এখানে। দেখা দেয়নি। তবে একটা চাপা উত্তেজনা সর্বত্র লক্ষ্য করা গেল। মুক্তিফৌজের কোন বাহিনীকে আমি এই দু’দিনে 

দেখতে পাইনি। বাজার এলাকায় আমি আর হক সাহেব গতকাল বিকেলে গিয়েছিলাম। সেখানে শুনেছি, মুক্তিফৌজ নাকি তৈরীই আছে। প্রয়ােজনে ছুটে আসবে। | হক সাহেবের কাছেই শুনলাম, বরিশালের নৌঘাটিতে বাঙ্গালীদের প্রাধান্য বেশী। নৌ-বাহিনীর খুব কম লােকই নাকি অবাঙ্গালী। একজনের কাছে শুনেছি আজকে যে, অবাঙ্গালী বাহিনী এখানে সীমিত, তাই তাদের অনেকেই ছুটিতে আছে।  বরিশালে বসে খুলনা এবং যশােরের সংবাদ পেলাম। যশােরের জেলখানা ভেঙ্গে অনেক কয়েদী নাকি পালিয়েছে। এদিকেও এসেছে দু একজন।খুলনা নিউজ প্রিন্ট মিল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। খালিশপুর এবং দৌলতপুরে ব্যাপক দাঙ্গা হয়েছে। ভৈরব নদী দিয়ে মৃতদেহের স্রোত বয়ে গেছে। আমি হক সাহেবকে সবই বলেছি। তিনি আজ বন্ধুর জুট মিলের আশেপাশের অঞ্চলের খবর জোগাড় করে আনবেন। তাছাড়া পিরােজপুর থেকেও আরােও সংবাদ পাওয়া যাবে আশা করা যাচ্ছে। | আমি ভাবছি, খুলনা যাওয়া কতখানি যুক্তিযুক্ত হবে। তবে পিরােজপুরে যাওয়াটা স্থির করলাম। কেননা, ঘাড়ের কাছে নৌ-ঘাটিকে রেখে আমি খুব একটা নিশ্চিন্ত হতে পারছিনা।

২৬ এপ্রিল, ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খন্ড -০৭ , আনন্দবাজার পত্রিকা