You dont have javascript enabled! Please enable it!

গৃহাঙ্গন ছেড়ে রণাঙ্গনে

  • পার্থ চট্টোপাধ্যায়

মুজিবনগর, ১৭ এপ্রিল – যেখানে আজ স্বাধীন বাংলা সরকারের মন্ত্রীরা শপথ গ্রহণ করছিলেন সেখানে বিশেষ অভ্যাগতদের মধ্যে হাজির ছিলেন মাত্র ৩ জন মহিলা। তাদের একজন নাজমা বেগম। পশ্চিম রণাঙ্গনে মুক্তিফৌজের অধিনায়ক মেজর ওসমানের বীরাঙ্গনা পত্নী। প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর রূপবতী বেগম ওসমান আজ পশ্চিম রণাঙ্গনে মুক্তিফৌজের সবচেয়ে শ্রদ্ধার পাত্রী । গত তিন সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্তে গৃহ অঙ্গন থেকে রণাঙ্গনে তিনি তার স্বামীকে ছায়ার মত অনুসরণ করেছেন, প্রেরণা জুগিয়েছেন, উৎসাহ ও উদ্দীপনায় সঞ্চার করেছেন শত শত মুক্তিযােদ্ধার মনে। শক্রর প্রচণ্ড বােমাবর্ষণে চুয়াডাঙ্গায় তাদের আবাস বিধ্বস্ত হয়েছে। তবুও মৃত্যুর সেই প্রচণ্ড গর্জনের মধ্যেও অকম্পিতা এই নারী প্রতিদিন স্বামীকে রণসাজে সাজিয়েছেন, তত্ত্বাবধান করেছেন জওয়ানদের পাকশালা । আহত জওয়ানদের শুশ্রুষার ব্যবস্থা করেছেন। কুমিল্লার মেয়ে নাজমা বেগম। মেজর ওসমানও কুমিল্লার ছেলে। বেগম ওসমান আমাকে বললেন, জানেন বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামই বুঝি এখানকার মাটিতে টেনে নিয়ে এল। নয়তাে আমার স্বামী বরাবর পাঞ্জাবে। মাত্র ফেব্রুয়ারীর শেষে ওকে চুয়াডাঙ্গার উইং কমানডাের করে বদলি করা হয়। গত ২৬ মারচ স্বামী খবর পেলেন যুদ্ধ বেধে গিয়েছে। মনে মনে তিনি তৈরিই ছিলেন। আর এক মুহূর্তও দ্বিধা করলেন না।

সঙ্গে সঙ্গে তার বাহিনী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। তারপর থেকে আমার স্বামী কখনও কুষ্টিয়াতে, কখনও যশাের রণাঙ্গনে। একটার পর একটা অপারেশনে বেরিয়ে যান। অনেক সময় খানা নিয়ে বিকেলে পাঁচটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে বসে থাকি। সারাক্ষণ ধরে আমার মনে হয়, জয় আমাদের হবেই। | শুক্রবার যখন মেজর ওসমানের বাড়ি লক্ষ্য করে চুয়াডাঙ্গায় প্রচণ্ড বােমা পড়ে তখন বেগম ওসমান তার দুই মেয়ে নিয়ে ট্রেনচের ভিতরে। ওঁদের দুটি মেয়ে চম্পা ও কলি। একটির বয়স ৫ আর একটির বয়স ৮। পাঁচ বছরের কলিকে দেখলাম জয় বাংলার একটি ছােট পতাকা হাতে মায়ের পাশে বসে আছে। আমাকে বেগম ওসমান বললেন পতাকাটি ওই তৈরি করেছে। খুব সাধ মুজিবর সাহেবকে দেখার।

১৮ এপ্রিল, ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খন্ড -০৭ , আনন্দবাজার পত্রিকা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!