রণাঙ্গন থেকে ফিরে শেখ বনাম খান
–সুদেব রায়চৌধুরী
মুনিরা ইসলামের সঙ্গে পাবনা শহরের দিলাল পাড়ায় আলাপ। আলাপ করিয়ে দিলেন মুনিরার বড় ভাই মােফায়েতুল সাহেব- আওয়ামী লীগের কর্মী। মুনিরা বললেন, পাবনা শহরে আমরা মেয়েরাই হানাদারদের। রুখবার ক্ষমতা রাখি। বি-এ ক্লাসের ছাত্রী মুনিরার চোখে মুখে প্রত্যয়ের চিহ্ন। রাত তখন নটা। সারা শহরে ব্ল্যাক আউট। হ্যারিকেনের ম্লান আলােয় লক্ষ্য করলাম মুনিরা একখানি চেয়ারের হাতল ধরে দাঁড়িয়ে। পিছনে টিনের দেওয়ালে দুখানি ছবি- ফজলুল হক ও শেখ মুজিবর রহমান- গলায় ফুলের মালা চোখে কালাে ফ্রেমের চশমা। সামনের দিকে নেতাজীর একখানা পুরােনাে ফটো। | কুষ্টিয়া পদ্মর উপর সারা ব্রীজ পার হয়ে ঢাকার পথে পাবনা শহরে পৌছেই মােফায়েতুল সাহেবের সঙ্গে আমার দেখা হয়। গত দশদিন ধরে বাংলাদেশের ভিতরে প্রায় চারশ মাইল এলাকা ঘুরে দেখেছি। শুধু মুনিরা কেন? ঢাকার পথে মানিকগঞ্জ এবং তার পরেও আরও বেশ কিছুটা পথ এগিয়ে যাবার সময় সকলের চোখে মুখে এই দৃঢ় প্রত্যয়ের চিহ্ন প্রত্যক্ষ করেছি।
মানিকগঞ্জের কাছে পীর গাছিয়া গ্রামের কাছে এসে মুক্তি সেনার অফিসার ক্যাপটেন সামসুজ্জামান আমাকে ট্রাক থেকে নামতে বললেন, ওখানে দেখি একদল কৃষক লাঠি, তীর, ধনুক, দা নিয়ে হাজির। ওরা পাবনার দিকে চলেছে। প্রশ্ন করার আগেই ওদের মধ্যে থেকে এগিয়ে এলেন শেখ অসিরউদ্দীন। নাসিরউদ্দিনের পরণে লুঙ্গি। গায়ে গেঞ্জি। নাসিরউদ্দিন বললেন খানের মিলিটারিকে আমরা দা দিয়ে কোপাইয়া মাইরা ফেলুম। বেশী কথা বলতে পারিনি, খান বলতে কি বােঝাতে চাইছে? এই প্রশ্ন করাতেই ক্যাপ্টেন সামসুজ্জমান জানালেন আমাদের যুদ্ধ হল-খান বনাম শেখ। অর্থাৎ খান বলতে ইয়াহিয়া খাঁর সৈন্য আর শেখ বলতে স্বাধীন বাংলার সাড়ে সাত কোটি লােক। জয় বাংলা বলে ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এগিয়ে চললাম।
১ এপ্রিল, ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খন্ড -০৭ , আনন্দবাজার পত্রিকা