You dont have javascript enabled! Please enable it!

উদ্বাস্তু-সমস্যা ও বাংলাদেশ সরকার’

–নিরঞ্জন হালদার

বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিনই অগণিত উদ্বাস্তু পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরায় এসে হাজির হচ্ছেন। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, উদ্বাস্তুদের আগমন বন্ধ করতে না পারলে এই বৎসরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে দেশত্যাগীর সংখ্যা দেড় কোটিতে পৌছে যাবে। সীমান্তের ওপারে সাধারণ মুসলমান গ্রামবাসীরা সাময়িকভাবে পাকিস্তান পতাকা তুলে রেহাই পেলেও মার্কা মারা আওয়ামী লীগ সদস্যদের পরিবার ও হিন্দুরা সেভাবে থাকতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। ১৯৬৯ সালে পূর্ব বাংলায় ১১ লক্ষ টন খাদ্য আমদানি করতে হয়েছিল। গত বছর বন্যার জন্য ফসল কম হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মারচ মাস থেকে খাদ্যশস্যের গুদাম পুড়ানাে হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে রাস্তাঘাট নষ্ট, রেল লাইনও ক্ষতিগ্রস্ত।  বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করে বন্দরে মাল খালাসের সুযােগ নেই। কোথাও জাহাজ থেকে খাদ্যশস্য নামানাে হলেও গ্রামাঞ্চলে পাঠানাের সুযােগ নেই। সরকারী প্রশাসন ব্যবস্থারও কোন অস্তিত্ব নেই ফলে বাংলাদেশে তীব্র খাদ্যাভাব, নুন, তেল ও অন্যান্য নিত্য প্রয়ােজনীয় জিনিসের অভাবের জন্য অনেকেই সীমান্তের এপারে আসবে। রাজনৈতিক কারণে দেশ ছাড়ার দরকার না থাকলেও কেবল খাদ্য ও আশ্রয়ের আশায়ও বহু লােক ভারতে চলে আসবে।

বাংলাদেশ থেকে আগত উদ্বাস্তুদের খরচ প্রথমে ভারত সরকারই বহন করবেন ঠিক করেছিলেন। বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা সরকারী ও বেসরকারী সাহায্যে বিভিন্ন উদ্বাস্তু শিবিরে সেবাকার্য চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজ্য সরকারগুলিও যথাসাধ্য করছেন। কিন্তু এই বিপুলসংখ্যক উদ্বাস্তুর ভরণপােষণের ভার কেবল ভারত সরকারের পক্ষে বহন করা অসম্ভব। রাষ্ট্রপুঞ্জ প্যালেস্টাইনের উদ্বাস্তু বা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ইউরােপের শরণার্থী ও শিশুদের দায়িত্ব গ্রহণ করায়, বাংলাদেশ থেকে আগত উদ্বাস্তুদের দায়িত্ব গ্রহণের দাবি সঙ্গতভাবেই করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম বা ত্রিপুরার উদ্বাস্তু আগমন কোন নতুন ঘটনা নয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ব্রহ্মদেশ থেকে উদ্বাস্তু আসা আরম্ভ হয়েছিল, সেই ধারা আজও অব্যাহত আছে। তবে এবারে যারা আসছেন, এখানে। তাদের স্থায়ী পুনর্বাসনের কথা ভাবা হচ্ছেনা। যুদ্ধের শেষে অর্থাৎ বাংলাদেশে পুরােপুরি প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে এঁদের সকলকেই ফিরে যেতে হবে। এক অর্থে, তারা ভারতের উদ্বাস্তু শিবির গুলিতে প্রতিবেশী বন্ধু-দেশের নাগরিক হিসাবে বসবাস করবেন। এই দেশত্যাগীদের সঙ্গে একমাত্র আলজেরিয়া, পালেস্টাইন ও ভিয়েতনামী উদ্বাস্তুদের মিল আছে। আলজেরিয়ার সীমান্ত বরাবর প্রতিবেশী তিউনিসিয়া ও মরক্কোয় আশ্রয় নিয়েছিলেন। উদ্বাস্তুদের মধ্য থেকেই বিপ্লবী আলজেরিয়া সরকার সেনাবাহিনীর লােক রিকরুট করতেন। আলজেরিয়া যুদ্ধের অবসানে তারা দেশে ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু প্যালেস্টাইনের আরব উদ্বাস্তুরা ১৯৪৯ সাল থেকে জরডন, সিরিয়া, লেবানন, সংযুক্ত আরব সাধারণতন্ত্র উদ্বাস্তু শিবির গুলিতে বসবাস করছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের সদস্যেরা এই উদ্বাস্তুদের জন প্রয়ােজনীয় খরচ জুগিয়ে থাকেন। ১৯৩৭ সালে স্পেনে গৃহযুদ্ধের পর যেসব উদ্বাস্তু প্রতিবেশী ফ্রানসে আশ্রয় নিয়েছিল, তারা আর দেশে ফিরতে পারেনি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ে যে ৭০ হাজার উত্তর ভিয়েতনামের উদ্বাস্তু থাইল্যানডে আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের মধ্যে ৪০ হাজার এখনও উত্তর-পূর্ব থাইল্যানডে বসবাস করছে এবং দীর্ঘদিন যাবৎ থাইল্যানডের নিরাপত্তায় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

এই যুদ্ধ কতকাল চলবে, তা কারাে পক্ষে বলা সম্ভব নয়। সুখের বিষয়, ইয়াহিয়া খা নিজেই। বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে ফৌজ লেলিয়ে দিয়ে প্রথম দিন থেকেই বাংলাদেশের মুক্তিফৌজ গড়ে তুলতে সাহায্য করেছেন। আলজেরিয়া যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ফরাসী অর্থনীতি পর্যদস্ত হয়েছিল। বাংলাদেশে যুদ্ধের প্রথম এক মাসেই পাকঅর্থনীত তার চেয়ে অনেক বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পূর্ববাংলা হাতছাড়া হলে। পাকিস্তানের সামরিক রাজনৈতিক গুরুত্ব হ্রাস পাবে। তাই যত দিন পারবে ইয়াহিয়া খাঁ বাংলাদেশের শহর গুলিতে থাকার চেষ্টা করবে। এই অঞ্চলে ভারতের বিরুদ্ধে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য বৃহৎ শক্তিগুলি পাকিস্তানের অখণ্ডতা বজায় রাখতে চায়। মুক্তিফৌজের প্রধান সেনাপতি করনেল ওসমানি মুজিবনগরে। বলেছিলেন, এ যুদ্ধ ২০ বছরও স্থায়ী হতে পারে। আমার ধারণা, মুক্তি ফৌজের আক্রমণ তীব্রতর করতে। পারলে অনেক কম সময়ের মধ্যে একটা ফয়সালা হতে পারে। হয়তাে বা এক বা দুই বছরের মধ্যে।

আগেকার উদ্বাস্তুদের সঙ্গে এবারের উদ্বাস্তুদের অন্য একটি ব্যাপারেও পার্থক্য আছে। এবারে যারা এসেছেন, তাদের অনেকের পরিবারে অনেকে মারা গিয়েছে, জীবন নিয়ে এপারে এসেছে হয়তাে স্বামী হারাস্ত্রী, পুত্র হারা মা বাবা, কিংবা এক বা একাধিক শিশু, বা বালক। পরিবারের কেউ হয়তাে মুক্তিফৌজে যােগদান করেছে। তাদের গ্রাম আক্রান্ত হলে, যারা বেঁচেছিল তারা এপারে পালিয়ে এসেছে। বাপ, মা হারা শিশু বা ছেলে-মেয়ে অভিভাবকহীন যুবতীরাও উদ্বাস্তু শিবিরে আছে। শিবিরের অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে এই মানবিক সমস্যার দিকেও দৃষ্টি দেওয়া দরকার। | বাংলাদেশে যুদ্ধ বন্ধ হলে এই উদ্বাস্তুদের দেশে ফিরে যাওয়ার সময় এই সমস্যা অনেক বড় হয়ে দেখা দেবে। পরিবারের হারিয়ে যাওয়া কোন সন্তান অন্য কোন ক্যামপে আছে কিনা; বর্তমানে তাও জানার উপায় নেই। 

পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা চারটি রাজ্যই, খাদ্যশস্যের ব্যাপারে ঘাটতি এলাকা। হঠাৎ, এই বিপুলসংখ্যক উদ্বাস্তুর আগমন খাদ্যসমস্যা ছাড়া অন্যান্য জটিল সমস্যার সৃষ্টি করেছে। হঠাৎ এক এক জায়গায় এত লােক এসে পড়ছে যে, স্থানীয় লােকেরা চেষ্টা করেও প্রয়ােজনীয় চাল-ডাল কিনতে পাচ্ছেন না। সরকার চাল-ডাল সরবরাহ করলেও কোথাও এত বেশী জিনিস মজুত করার ব্যবস্থা নেই। উদ্বাস্তুদের জন্য অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়েছে। অপরদিকে স্থানীয় লােকেদের আয় কমে যাচ্ছে। সীমান্ত-এলাকায় দীন মজুরির হার কমেছে, কোথাও উদ্বাস্তুরা রিকশাচালক হওয়ায় আগেকার রিকশা চালকদের আয় কমেছে। তাছাড়া, যেখানেই উদ্বাস্তু, সেখানেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। খালি জমিতে হয়তাে তাঁবু টানানাে হয়েছে । ঐ জমিতে স্থানীয় কৃষকরা চাষ বাস করবে, আউস ধান বুনবে, তরকারি সবজির চাষ করবে। এবারে তা সম্ভব হচ্ছে না। স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখে বছরের পর বছর সেখানে উদ্বাস্তু রাখা সম্বব নয়। স্থানীয় অধিবাসীরা সাময়িকভাবে ত্যাগস্বীকার করেছেন, কিন্তু এই ত্যাগস্বীকার, এই অসুবিধা দীর্ঘস্থায়ী হলে স্থানীয় অধিবাসীদের মনে বিরূপতা সৃষ্টি হবে এবং তার ফলে উদ্বাস্তুদের স্বার্থ ও বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ব্যাপার দেখে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মী এবং বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের কথাই ভাবছেন, উদ্বাস্তুদের সমস্যা ভারত সরকারের হাতে রেখে এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে চান। সম্ভবত, এদেশে উদ্বাস্তুদের শােচনীয় অবস্থার কথা বাংলাদেশের লােকদের জানা নেই। ১৯৭০ সালে আগত আড়াই লক্ষ উদ্বাস্তুর পুনর্বাসন সরকার করতে পারেননি। প্রায় সকলেই খাদ্য ও বাসস্থানের অভাবে নানা রােগে আক্রান্ত। কাজেই এদেশের সরকার প্রশাসনের পক্ষে এই বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুদের দেখাশুনা করা একেবারেই অসম্ভব। সীমান্তের দুই পারে চোরাচালানকারীরা উদ্বাস্তুর ভেক ধরে এপারে আসবে, অনেকে পাক-জঙ্গী সরকারের এজেন্ট হিসাবে কখনও উদ্বাস্তুদের সঙ্গে ভিড়বে, পয়সা কড়ি এজেনট তৈরি করবে, কখনও বা এপারে এসে ভারতীয় গ্রাম বাড়ি আক্রমণ করবে। এরাও উদ্বাস্তুদের বাংলাদেশ সরকার-বিরােধী করতে পারেন আর মাসের পর মাস উদ্বাস্তুদের খরচ ভারত সরকার চালালে স্থানীয় গরীব ও মধ্যবিত্তপরিবারের লােকেরা এদেশের সরকারের বিরােধী হবে এবং তাতে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আলজেরিয়ার মরিস লাইনের অপর সীমান্তে নির্দিষ্ট এলাকায় আলজেরিয়ান উদ্বাস্তুদের থাকবার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত-এলাকায় বাংলাদেশের উদ্বাস্তুদের জন্য পৃথক এলাকা নির্দিষ্ট করা সম্ভব নয়।

কিন্তু তাদের যেখানেই রাখা হােক, বাংলাদেশ সরকারকেই উদ্বাস্তুদের দেখাশুনার লােক নিয়ােগের দায়িত্ব নিতে হবে। পূর্ববাংলা থেকে সরকারী প্রশাসনন্ত্রের অধিকাংশ বাঙালী অফিসার এদেশে চলে এসেছেন- কমিশনার, জেলাশাসক, এস-ডিও প্রভৃতি। পৃথিবীর কোথাও মুক্তিযােদ্ধারা সরকারী প্রশাসনের লােকেদের এমন ভাবে পাননি। বাংলাদেশ সরকারের উচিত, সরকারী অফিসার, কর্মচারী, ডাক্তার, অধ্যাপক, শিক্ষক, রাজনৈতিক কর্মী ও অন্যান্য স্তরের লােকেদের বিভিন্ন উদ্বাস্তু-শিবিরের কাজে লাগানাে। একমাত্র এই ভাবেই শহরে বসবাসরকারী উদ্বাস্তুদের কাজে লাগানাে যাবে। শিবিরগুলিতে গুপ্তচর, মতলববাজ, মেয়ে শিকারীর আনাগােনা বন্ধ করা সম্ভব হবে। বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষিত ব্যক্তিরা উদ্বাস্তুদের মনে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা সৃষ্টি করতে পারবেন, যুবকদের মুক্তিফৌজে রিকরুট সহজ হবে। আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীদের পক্ষে সীমান্তের অপরপারের সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের সহজে চিনতে পারবেন। এত বেশি লােক, এত বেশি টাকার লেনদেন। সুতরাং দুর্নীতিও সেই হারে বাড়বে। উদ্বাস্তুরা চলে আসায়, গ্রামের যে সব লােক তাদের জমি, বাড়ি বা দোকান সব দখল করেছে, তারা যুদ্ধের অবসানে উদ্বাস্তুদের গ্রামে ঢুকতে দিতে চাইবে না। উদ্বাস্তুদের  এখানে সংগঠিত ও রাজনৈতিক সচেতন করলেই, যুদ্ধের শেষে গ্রামাঞ্চলে নতুন সরকারের পক্ষে প্রভাব বিস্তার করা সহজ হবে। আলজেরিয়ার উদ্বাস্তুরা যেমন মুক্তি ফেীজের পিছন পিছন দেশে গিয়েছিল, এই উদ্বাস্তুদের সেইভাবে দেশে নিয়ে যেতে হবে। ভারতের কোন শিবিরে কারা আছেন তারও তালিকা তৈরি করে একটি কেন্দ্রীয় অফিস তা রাখা দরকার। কলকাতাতেই এই কেন্দ্রীয় অফিস স্থাপিত হতে পারে। এই তালিকা তৈরি করলেই আপাতত অভিভাবকহীন ছেলেমেয়ে বা বড়দের অভিভাবক খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। যারা আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে আছে, তাদেরও পূর্ণ তালিকা কেন্দ্রীয় অফিসে রাখা দরকার।

এই উদ্বাস্তুদের কাজের মধ্যেও ব্যস্ত রাখতে হবে। যেমন, উদ্বাস্তুদের জন্য জামা, প্যান্ট, ফ্রক প্রভৃতি। দরকার হবে। এদের কিছু লােককে ট্রেনিং দিয়ে এই সব পােশাক তৈরি করানাে যেতে পারে। বাংলাদেশ থেকে আর্থিক অসুবিধার জন্য যাতে উদ্বাস্তু না আসে, সেজন্য রাষ্ট্র সংঘের রিলিফ ভারতের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানাের চেষ্টা করতে হবে। প্রতি রাজ্যে ভারত সরকার একজন অফিসার নিয়ােগ করুন, যার মাধ্যমে এক দিকে বিদেশ থেকে সাহায্য এনে এখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযােগিতায় ত্রাণকার্য ও শ্রমের কাজ করবেন। কিন্তু ক্যাম্পের প্রশাসন, শিক্ষার ব্যবস্থা, উদ্বাস্তুদের নিরাপত্তা, নাশকতামূলক কাজ সম্পর্কে সতর্ক দৃষ্টি রাখার দায়িত্ব নেবেন প্রধানত বাংলাদেশের লােক।

১৯ মে, ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খন্ড -০৭ , আনন্দবাজার পত্রিকা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!