You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশের বিষয়ে বিরােধী নেতৃবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীকে আপনারা কী বলবেন

— সন্তোষ কুমার ঘােষ

বিরােধী দলের নেতৃবৃন্দ। আজকের এই খােলাচিঠি আপনাদের প্রতি। শুনেছি প্রধানমন্ত্রী আপনাদের সলাপরামর্শে ডেকেছেন। বিষয় ও বাংলাদেশ। কিন্তু ওই বিষয়ের বিশেষ কিছু কি আর অবশিষ্ট আছে? প্রাক্তন জেনারেল জে, এন, চৌধুরী বলেছেন, তথা বাস্তববােধ বলে, অবশিষ্ট নেই। আমাদের লক্ষ লক্ষ পাঠকবৃন্দের সঙ্গে গলা মিলিয়ে আপনারাও আমাদের বলতে পারেন, তবে প্রতারিত করেছিলেন কেন? জবাব- সে এক মজার ব্যাপার। এদেশে সকলেই মনে মনে ভাবেন, কাগজগুলাে, ঠিক করছে না, ঠিক বলছে না, চান্স পেলে তারা যথাবিহিত পুনঃসর কর্তব্যমিদং নির্দেশ করতে পারতেন। এ যেন-হাটের বেওয়ারিশ হাঁড়ি, যে পারে সেই চাঁটা মারে। তবু দলনিরপেক্ষ কাগজগুলাে ঠিকই আছে- চলছে। অ্যামেচার কারও মর্জিমাফিক নয়, রাজনৈতিক দলবাজ অথবা দলপতিদের ইচ্ছানুযায়ীও নয়, কাগজগুলাে চলছে তাদের মৌল নির্ভরযােগ্যতার উপরে। সচেতন স্বীকারােক্তিতে এই সত্য সরকারী বে-সরকারী, বিপ্লবী শ্রেণী কবুল করুন বা না করুন অবচেতন মনে সকলেই স্ট্যান্ডারড পত্রিকাগুলির নির্ভরযােগ্যতাকে মানেন। এরা চলে সেই কারণেই। নতুবা এই কাগজগুলাে জোর করে কেউ তাে গছিয়ে দেয় না কিংবা কেনায় না। এরা যদি সর্বোতাে মিথুক হতাে- তা হলে এগুলাে না কিনলে বা পড়লেই চলতাে এর জন্যে শাসানি অথবা  হামলাবাজির দরকার হতাে না। স্রেফ না কেনা-এই সােজা রাস্তা খােলা ছিল। পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশ সম্পর্কেও সত্যকার সংবাদপত্রগুলি জনমত বিভ্রান্ত করেনি। যতদিন অলৌকিক এক সাফল্য ঘটেছিল, ততদিন এই কাগজগুলিই সততার সততার বিবরণ পরিবেশন করেছে। সেদিন থেকে সামরিক এবং সামরিক অর্থে ভাটার টানের শুরু, সেদিন থেকে তারা কোনও অলৌকিক আশাবাদ প্রচার করেনি। তাদের দাম এবং দায়িত্ববােধের প্রকৃত চিত্র এইটাই।  আজ যখন প্রাথমিক আবেগ আর উচ্ছাস কেটে গেছে, তখন বিচার করে দেখা যাক অবস্থাটা ছিল কী? বিরােধী নেতৃবৃন্দ, আমি আগে এই বাংলার সাধারণ মানুষের বুদ্ধিজীবী, নির্বুদ্ধিজীবী এবং দুবুদ্ধিজীবী কিছু কিছু মানুষের চোখ দিয়ে ব্যাপারটাকে যাচাই করতে চেষ্টা করব।

আমাদের মধ্যে যারা অবিশ্বাসী, কিংবা বিশেষ কোনও বামপন্থায় সরলবিশ্বাসী, তারা গােড়ায়-যখন বাংলাদেশের সংগ্রাম শুরু হয়নি- সবটাকে কিছু নয় বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। মুজিব সি, আই. এর এজেনট, এসব শেখানাে শস্তা ধর তাই বুলি একেবারে যে শুনিনি, তা নয়। পরে যখন ঘটনাপ্রবাহ অন্যরকম তাৎপর্যের ইঙ্গিত দিতে থাকল, তখন এঁরা চুপসে গিয়েছিলেন। সেদিন মুজিবের সততায় বা জনপ্রিয়তায় সন্দেহ প্রকাশের সাহস কারও ছিল না। যেভাবে একদিন নেতাজীবিরােধী গােষ্ঠী নেতাজীরই নাম কপচাতে শুরু করেছিলেন, সেইভাবে এঁরা মুজিবের সুরে “জয়বাংলা” বলতে বাধ্য হন। | তারপর ঘটনা স্রোতের মােড় ফিরেছে, এঁদের মুখের বুলিও বদলেছে। আওয়ামী লীগ নামে নিছক জাতীয়তাবাদী একটি দলের তারিফ করতে এঁদের বাধছিল। তাহলে মুখস্ত করা সব তােতাপাখী-কথা মিথ্যা। হয়ে যায়। এখন এঁরা আগেই বলেছিলাম- মার্কা বাগাড়ম্বরের আড়ালে আশ্রয় নিচ্ছেন। | ঘষেমেজে দেখা যাক আগে কে কী বলেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা? আমি যদি এই সম্প্রদায়ভুক্ত হতাম, তবে আমারও প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া বলতে যা বােঝায়, ত হুবহু এই হতাে। প্রথমত, সীমান্ত পেরিয়ে তাকাবার মতাে, যাবার মতাে একটা পাকিস্তান থাকতাে না। সেই ভয়েই মুহ্যমান হয়ে বাংলাদেশের। বাড়াবাড়িকে আমিও ধিক্কার দিতুম। কিন্তু একদিন আমারও বাড়িতে ওপার থেকে আত্মীয়-স্বজনেরা এসে ভিড় করতাে, কারও মা নিহত, কারও বােন অপহৃত বা ধর্ষিত, তখন আমি প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করে সুর বদলতাম। বাংলাদেশে বাঙালী মুসলমানরা যদি বাঁচে তবে পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালী মুসলমানেরাও বাঁচবে, বরং পানজাবী শাসিত বঙ্গদেশ তাদের কদাচ হবে না, তাদের নয়। যেমন নয় তুরস্ক অথবা আরব অথবা পাখতুনিস্তান কিংবা বালুচিস্তান। পানজাবী অধ্যুষিত পূর্ববঙ্গ পশ্চিমবঙ্গীয় মুসলমানরা কখনও স্বাগত হবে না, এই সােজা সত্যটা মরমগত হত। 

কাশ্মীরের তুলনা টেনে কাজ নেই। কেননা, কাশ্মীরী মুসলমানেরা যাই বা চান কিংবা না চান, তাঁরা এদেশে সংখ্যালঘু। যেমন সংখ্যা লঘু এই বাংলার হিন্দুরা। পূর্ববাংলার সঙ্গে কারও ভাগ্য মেলে না। শুধু ধর্ম ছাড়া পিনডির সঙ্গে ঢাকার কোনও ঐক্যসূত্র নেই, তদুপরী কাশ্মীরীর মুসলমানদের যা আছে, এখানেই তাওভৌগলিক নৈকট্য আদৌ নেই। পূর্ববঙ্গের জনতা পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাগ যে গরিষ্ঠতা পিনডির করাচির গলার কাঁটা। সেই গরিষ্ঠতা পাঞ্জাবী শাসক শ্রেণী আজ গণহত্যার মারফৎ বিনষ্ট করতে চায়। দড়িতে কষে বেঁধেও “ঐক্য” তৈরী করা যায়। এর পরও পাকিস্তান যদি ‘এক থাকে, তবে তা হবে সেই দড়িতে বাঁধা ঐক্য। এ এক উন্মত্ত আসুর আস্ফালন। পশ্চিম পাকিস্তানীরা বাংলাদেশের মাটি চায়, চায় সেখানকার সুজলাসুফলা উর্বরতা, কিন্তু সেখানকার বাঙালীদের চায় না। তারা কি সিন্ধী কৃষকদের বসাতে চায় সেখানে? এই সর্বনাশা আশা সত্য হয়ে থাকতে পারে অতীতে, জনহীনপ্রায় দেশে বা মহাভুগে। যথা, আমেরিকায় কিংবা অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে। কিন্তু সাড়ে সাত কোটি মানুষের বাসভূমি পূর্ববঙ্গের স্থানীয় মানুষের হত্যার পর হত্যায় একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া? ইতিহাসে কুত্রাপি এর কোনও নজির নেই,এই অসম্ভব সম্ভব বলে কোনও ইতিহাস লেখে না।

বিরােধী নেতৃবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীকে আপনারা কী শলাপরামর্শ দেবেন জানি না। বাঙালী-বিনাশের এই ভয়াবহ চিত্রটা আশাকরি তুলে ধরবেন। যে পশ্চিমবঙ্গীয় হিন্দুদের হৃদয়ে এখনও সাড়া জাগেনি, তাদেরও পরিত্যক্ত আত্মীয়স্বজন যদি ওই বাংলায় আজ এই ভাবেই লাঞ্ছিত, নিগৃহীত, বলাকৃত হতেন, তবে তাঁদেরও সব তাত্ত্বিক সংশয় ঘুচে যেত। ঘুচে যেত, কেননা জলের চেয়ে রক্ত ঘন। রাতারাতি ওই বাংলার বাঙালী মুসলিম চরিত্র এতই অসাম্প্রদায়িক কিংবা স্বাদেশিক হয়ে গেছে, এই তথ্য যারা বিশ্বাস করেন না, তাঁরা একা একা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টের নিশ্চয়ই পেতেন, হয়, এইভাবেই পরিবর্তন হয়। এক একটা জাতিরঅকস্মাৎ এক একটি ক্ষণে। যে বঙ্গবাসীরা একদা “প্যাক্স ব্রিটানিকার” মধুতে মজেছিল, তারা একদিন আর একটি বঙ্গভঙ্গের সময়- ইংরেজ ন্যায়বিচারে বীতশ্রদ্ধ হয়ে বিদ্রোহ কি করেনি? পূর্ববাংলার মুসলিম-প্রধান জনগণও আজ সেইভাবে বিদ্রোহ করেছে। একদিনে নয়, হঠাৎ নয়, এর প্রস্তুতি চলছিল। আজ তারা প্রথমে বাঙালী, দ্বিতীয়তও বাঙালী, সর্বশেষে বাঙালী, এই সত্তায় উত্তীর্ণ হয়ে অতীত ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেছে। যেভাবে ইউরােপও একদিন ছিল শুধুই খৃস্টান, পরে- মাত্রই তিন চার শতক আগে সে সহসা আবিষ্কার করে যে, ধর্মের চেয়ে জাতি বড়। সেই আবিষ্কারকেও যদি বিবিধ প্রমাণ দৃষ্টে স্বীকৃতি দিই, তবে পূর্ববঙ্গের জনগণকেই বা দিতে বাধছে কেন?

বাঁধছে সংস্কারে, বাধছে শেখা তত্ত্বের প্রতি অভ্যাসগত দাসত্বে। ওই বাংলার নেতৃত্ব যদি কোনও বামপন্থী দলের হতাে তাহলে এত প্রশ্ন উঠত না। এ এক আশ্চর্য মতিচ্ছন্নতা, যা ভিয়েৎনামের প্রতিরােধকে বিনাবাক্যে গদগদ স্বাগত জানায়, অথচ পূর্ববঙ্গের সংগ্রামকে সর্বান্তঃকরণে গ্রহণ করতে পরানুখ হয়। এদের সহসা অতিমাত্রায় সাহসী করেছে বাংলাদেশ মুক্তিফৌজের সামরিক বিপর্যয়। যদি ওঁরা জয়ী হতেন, তবে সেই ঐতিহাসিক ঘটনার প্লাবনে সংশয়ীদের সব মনােগত প্রতিরােধ ভেসে যেত। আওয়ামী লীগকে বুরজোয়া পারটি বলতে মুখে আটকাতাে। এঁদেরই পূর্বগামীরা একদিন এদেশের কংগ্রেসকে নিছক বুরজোয়া বিদ্রোহের প্রতীক বলে নস্যাৎ করতে চেয়েছিলেন। পরে অনিবার্য ঘটনা তাদেরও সেই কংগ্রেসের মঞ্চেও টেনে এনেছে। দেশান্তরী চিন্তাবীদেরাও অবশেষে একদিন স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, কংগ্রেস কেবলই ‘বিলাতফেরতা।  ক’ভাইয়ের” রটনা ছিলনা। সেই তত্ত্ব-বলা আজকের আওয়ামী বিদ্বেষীদের অদৃষ্টে আছে, যদি বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়। বলতেই হবে। সাময়িক সামরিক পরাভবকে শেষ কথা বলে বিচার করা মূঢ়তা। একটা জাতির আকাঙ্খ, একটা জাতির প্রাণ মৃত্যুজয়ী হবেই। যেহেতু কাল নিরবধি।  কিন্তু নিরবধি কালের দিকে তাকিয়ে আজকের প্রাণ প্রবােধ মানে না। চিরন্তনের ভরসা অদ্যতনের কোনও সান্তুনাই নয়। বিরােধী নেতৃবৃন্দ, আপনারা প্রধান মন্ত্রীকে অতএব ভাবাবেগের কোনও কথা নয়, যা দৃঢ়, যা বাস্তব চিত্র তাই দেখুন। বলুন যে সময়ের স্রোত অনলস রীতিতে পড়ে ভাঙছে। বলুন যে, পিকিং-এর ভ্রুকুটিকে ভয় করা নিরর্থক। স্বাধীন বাংলাদেশ মানে ভারতের প্রতি মিত্রভাবাপন্ন। একটি দেশের জন্ম- সেটা চীন কোন মতে বরদাস্ত করতে পারে না। যেহেতু চীন যতই সমাজবাদী হােক, আসলে জাতীয়তাবাদী। নিজের স্বার্থ সবচেয়ে আগে দেখে বলেই সে আমেরিকার সঙ্গেও পিংপং খেলায় মেতেছে। সমাজতন্ত্রী হয়েও জঙ্গীতন্ত্রের পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে।

হয়তাে বাংলাদেশের বিষয়ে প্রত্যেক্ষ হস্তক্ষেপে পূর্ব পাঞ্জাবেরও প্রতিরােধ আছে। কেননা, পূর্ব পাঞ্জাবে ‘৬৫র যুদ্ধে এবং তারও আগে পার্টিসনের সময় আগুনের আঁচে ঝলসে গেছে। দ্বিতীয়বার সে পুড়তে চায় । সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা আঞ্চলিক বিচার। গােটা দেশের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী কী করবেন? বিরােধী নেতৃবৃন্দে, সেই কথাই তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। বলতে হবে যে, গােড়ায় ভারত কী করে, করে, সে বিষয়ে পিন্ডির জঙ্গীচক্রের মনে সমূহ সংশয় আর আশঙ্কা ছিল। আজ ভয় অতটা নেই দেখে তারা আরও বেপরােয়া হয়েছে। নতুবা আমাদের সীমান্ত লঙ্ঘনের কোনও ব্যাখ্যা নেই। আন্তর্জাতিক পাঞ্জা কষাকষিতে আসল লড়াই স্নায়ুর শক্তিতে। যে শক্তিতে কিউবার ব্যাপারে কেনেডি একদিন ক্রুশ্চেভের উপরে টেক্কা দিয়েছিলেন। কিছু করাটা বড় কথা নয়, করব বলে বিপক্ষের মনে সত্যিকার ত্রাস সৃষ্টিই বাহাদুরি । সেই ত্রাস সৃষ্টির সুযােগ ভারতেও ছিল। ততটা আর নেই, তবুও এখনও একটু আছে। পরামর্শদাতারা প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে বলুন “কী সুবর্ণ সুযােগ আপনি হেলায় হারাইয়াছেন। হারাইতেছেন আপনি জানেন।” কবে তুমি আসবে বলে ভূমণ্ডলের এই এই অঞ্চলের ইতিহাস বসে থাকবে না। 

অন্য কোন বিকল্প শেষ পর্যন্ত এই দেশের স্বার্থসম্মত হবে না, কোনও কূটনৈতিক মাত্রাজ্ঞান না। অপবাদ যা রটবার তা রটেছে। এবং রব, রটতে থাকবে। ইত্যবসরে আমাদের নিষ্ক্রিয়তা শুধু শরণার্থীর সংখ্যাই বাড়াবে, তার চাপে সব শুভেচ্ছা, সব ভালবাসা ক্রমে ক্রমে উবে যাবে, যেমন উবে গিয়েছিল একদিন, দেশ বিভাগের অব্যাবহিত পরবর্তিকালে। আমরা আমাদের চিনি, তাই শরনার্থীদের প্রতি প্রকৃত মনােভাবকে চিনতে দ্বিতীয়বার যেন ভুল না করি। মুসলিম লীগের ভােটনির্ভর পশ্চিমবঙ্গের জোড়াতালি সরকার সাহসের সঙ্গে সব কথা উচ্চারণ করতে পারবেন না, কিন্তু সেই ভয়তাে আজকের কেন্দ্রীয় সরকারের নেই? নতুন শরণার্থীরা হয়তাে ফিরে যাবেন কিন্তু তার জন্য অনুকূল পরিবেশ, উপযুক্ত ক্ষেত্র চাই। দীর্ঘস্থায়ী। গেরিলা লড়াই বাংলাদেশকে বামপন্থী নেতৃত্বের হাতে সঁপে দেবে। ইয়াহিয়ার শঠতা সম্পর্কে যে সারল্য আওয়ামী নেতাদের প্রতারিত করেছে, সংকটের দিনে দেখেছে ছত্রভঙ্গ এবং অপ্রস্তুত, সেই সারল্য, সেই অপ্রস্তুতি এবং অপেক্ষা যেন দিল্লিকেও গ্রাস না করে। বস্তুত অপেক্ষাই বা কীসের? সাময়িক পরিস্থিতি যদি সম্পূর্ণ হস্তচ্যুত হয়ে যায়, তবে আর কীসের অপেক্ষা? কবে, কত দিনে পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনীতিক বুনিয়াদ বিধ্বস্ত হবে, বাংলাবিধ্বংসী জুয়াড়ীদের রাশিয়ার দাম হ্রাস পাবে, সেই নিষ্ক্রিয় অপেক্ষা-অর্থাৎ ঝানু মিলিটারি নায়ক জেনারেল চৌধুরী বা বলছেন, তাই? তার মানে রাজনীতি, মানবিক নীতির উপর জয়ী হবে নিছক কূটনীতি আর রণনীতি, এর কোন অর্থ নেই। যেমন অর্থ নেই তথাকথিত মনসুনের জন্য প্রার্থনার। “আল্লা মেঘ দে, পানি দে”, আমাদেরও শেষ পর্যন্ত সেই? আর কিছু কি উচ্চাৰ্থ নেই- সক্রিয়, সদর্থক কোনও কিছু?

৪ মে, ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খন্ড -০৭ , আনন্দবাজার পত্রিকা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!