আওয়ামী লীগ পালা বদলের পালা | ১২ই আগষ্ট ১৯৮৩
শেহাব আহমেদ/মতিউর রহমান চৌধুরী/মাহমুদ শফিক/মাহফুজ উল্লাহ
৩১ জুলাই দুপুর। আউটার স্টেডিয়ামের দেয়ালে অসংখ্য দৃষ্টি নিবদ্ধ আওয়ামী লীগ (হাসিনা) দফতরের সামনের রাস্তায়।
তারা গ্যালারীতে দাড়িয়ে দেওয়ালের ঢালে সুরক্ষিত থেকে দেখছেন দলের কর্মীদের শরিকী লড়াই। পুলিশ এল।
কার্যালয়ে আহুত ওয়ার্কিং কমিটির সভার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে আসা এক তরফকে হটিয়ে শান্তি বজায় রাখলেন। কিন্তু ভাঙ্গনের পালা বদলের পালায় কর্মীদের প্রতিবাদ কতটুকু ভূমিকা রাখতে পেরেছে? পরের ঘটনাবলীতে দল ভাঙার প্রক্রিয়া এগিয়ে গেছে। দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত অনৈক্যের বিস্ফোরণে।
ধানমন্ডী আবাসিক এলাকার পুরনো ৩২ নম্বর সড়ক। শ্রাবণের বর্ষণক্রান্ত অন্ধকার ছড়িয়ে রয়েছে।
লোহার গেট বন্ধ বাড়িটির গাড়ি বারান্দায় কিছু কর্মী জটলা করছেন?
উন্মুক্ত মাঝারী সারির নেতারা ভেতরে উকি মেরে জানবার চেষ্টা করছেন কি হচ্ছে ভেতরে।
গাড়ি বারান্দায় ওঠার মুখে বাড়ির পরলোকগত মালিক শেখ মুজিবুর রহমান-এর একটি আবক্ষ তৈলচিত্র দাড় করানো পিলারের পাশে। অনুসারী নেতা কর্মীদের ওপর যেন তিনি নজর রাখছেন এমনভাবে ছবিটা দাড় করানো।
বর্ষার সময় তৈলচিত্রের ক্ষতি যেন না হয় সেজন্যে সেলোফোনের জলরোধক মোড়কে আবৃত করা হয়েছিল। কিন্তু অনুসারীদের কারো কারো হাতের স্পর্শে মোড়কের নীচের দিকের ছাল ক্রমাগত উঠে গেছে।
ভেতরে বন্ধ ঘরে সাতই মার্চ, ১৯৭১ এ বক্তৃতারত শেখ মুজিবের বিশাল একটি ছবির পাশে সমবেত হয়েছেন এখন তারা বড় কাতারের অনুসারীর।
২ আগস্ট ১৯৮৩ রাত ৯-২০ মিনিট বাড়ির একটি ঘরে বসা দীর্ঘ অপেক্ষমান সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হল বসবার ঘরে।
শেখ মুজিবের ছবির পাশে ১৯৭৭ সালে দলে যোগদানকারী প্রেসিডিয়াম সদস্যা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন উঠে দাড়ালেন গত তিনদিন ধরে দলের ওয়ার্কিং কমিটি কর্তৃক তার বর্ধিত সভায় সুপারিশের প্রেক্ষিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত পড়ে শোনাবার জন্যে।
পাশে বসা খানিকটা ম্লান কোরবান আলী, উৎফুল্ল আবদুল মান্নান, সাজেদা চৌধুরী, জিল্লুর রহমান। একটু পেছনে ভাবলেশহীন ডঃ কামাল হোসেন, ক্লান্ত তোফায়েল আহমদ প্রমুখ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।
উচ্ছ্বাসের আবেগকে টেনে ধরে গলা পরিষ্কার করে জোহরা তাজউদ্দিন ইতিহাসের এক নিমর্ম পরিহাসের মুহূর্তে ১৯৬৬ সালে ভেঙে যাওয়া আওয়ামী লীগকে গড়ে তোলার মূল নেতা শেখ মুজিবের বৈঠক খানায় ঘোষণা করলেন দলের শীর্ষস্থানীয় ছয় নেতার সাময়িকভাবে অব্যাহতি প্রদান।
এভাবেই সমাপ্ত হল শেখ মুজিববিহীন আওয়ামী লীগের পঞ্চম এবং গুরুত্বপূর্ণ ভাঙ্ন।
এর আগে অবশ্য ১৯৭৫-এর জানুয়ারী মাসে শেখ সাহেব নিজেই কবর দিয়েছিলেন তার ‘আওয়ামী লীগ’কে একদলীয় বাকশাল গঠনের মাধ্যমে।
এবং এ বাকশাল প্রশ্নেই শুরু হয় তার পরবর্তী আওয়ামী লীগ নেতাদের কোন্দল।
প্রথমে সরে যান, শেখ মুজিবের জীবদ্দশায় পার্লামেন্ট থেকে সদস্য পদে ইস্তফা দিয়ে জেনারেল (অবঃ) জেনারেল এম, এ, জি, ওসমানী।
পরে তিনি গঠন করে জাতীয় জনতা পার্টি। খন্দকার মোশতাক গড়ে তোলেন ডেমক্রেটিক লীগ। ১৯৭৮-এ সরে যান মীজানুর রহমান চৌধুরী।
১৯৮১-এ তার দল থেকে চলে যান আওয়ামী লীগ ব্যানারে দেওয়ান ফরিদ গাজী। বিএনপিতে যোগ দেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী। অবশ্য মূল সংগঠন থেকে যায় আবদুল মালেক উকিলের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।
১৯৭৬ সালের ডিসেম্বরে ৫৫ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটিতে কোন আহ্বায়ক নিযুক্ত না করতে পেরে মোল্লা জালালউদ্দিন ও মীজানুর রহমান চৌধুরী যুগ্ম-আহ্বায়ক নির্বাচিত হন।
এরপর ১৯৭৭-এর এপ্রিলে মরহুম তাজউদ্দিন আহমেদের বিধবা পত্নী, এককালীন সিপিবি প্রভাবান্বিত মহিলা পরিষদ নেত্রী আওয়ামী লীগে নবাগতা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিনকে সমঝোতার আহ্বায়িকা করা হয় দলের বিশেষ কাউন্সিলে। কারণ নেতৃত্বের দাবীদার অনেক তাই মালেক উকিল কিংবা মীজান চৌধুরী, কোরবান আলী প্রমুখ ‘ওল্ড গার্ডরা’ পিছিয়ে যেতে বাধ্য হলেন।
’৭৭-এর কাউন্সিল উদ্বোধন করেন পরলোকগত মনসুর আলীর বিধবা পত্নী। আর এ সময় ভারপ্রাপ্ত সম্পাদিকা ছিলেন বেগম সাজেদা চৌধুরী।
পুনর্জন্ম মুহূর্তেই অবশ্য সংঘাত বাধে। মালেক উকিলের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে দাড়ালেন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন এবং বাকশাল পূর্ব আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক।
এ সংঘাতে মালেক উকিলের পেছনে রইলেন ‘রক্ষণশীল’ আবদুল মান্নান, কোরবান আলী, সাজেদা চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ।
তিন-তরফের মোকাবিলা ঘটে ১৯৭৮-এর কাউন্সিলে। এখানে প্রকট হয়ে ওঠে দলের সংকট। ‘মুখে বললেও ভিতরে না পছন্দ’; বাকশাল প্রশ্নে এমন ভাব পোষণকারী আর কট্টর বাকশাল পন্থী যার যার শক্তির মহড়া প্রদর্শন করলেন। কিন্তু প্রকাশ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের রেখে যাওয়া সম্পত্তি বাকশালকে তার উত্তরাধিকারীরা অস্বীকার করতে ব্যর্থ হলেন।
আবার শেখ মুজিবের একক নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণে নিষ্ফল নেতারা কাউন্সিলে পুরো কমিটি প্রদান করতে অপারগ হলেন।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আপোষ করে দু-তরফ শুধু সম্পাদক মন্ডলী অবধি এগুতে পারলেন। আপোষের সভাপতি আবদুল মালেক উকিল ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক এরপর যার যার নেতৃত্বে পাল্টা ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেন।
কিন্তু হোটেল ইডেনে মারপিট, ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ি হট্টগোলে তড়িঘড়ি সমাপ্ত কাউন্সিল জন্ম দিল ভবিষ্যতে নতুন বৈরীতা ও পালা বদলের পালা।
সভাপতির পদে দাবীদার ছিলেন কোরবান আলী পাশ্চাত্য দিল্লী ঘেষা ‘রক্ষণশীল’দের পক্ষে মালেক উকিল ছাড়াও। অবশ্য কোরবান আলী, সাজেদা চৌধুরী, আবদুল মান্নানদের নেতৃত্বে একটি আলাদা লবীও দলে সক্রিয় ছিল। বাকশালের মাধ্যমে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের দাবীদার সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন ছিলেন আবদুর রাজ্জাকের সমর্থনপুষ্ট।
পরবর্তীতে অবম্য আপোষ অর্থাৎ ‘বাধ্যতামূলক’ ঐক্যের মাধ্যমে দু’তরফের আপাতঃসন্ধি হলেও মনের ক্ষোভ চাপা থাকেনি ১৯৭৮-এর প্রতিদ্বন্দ্বিদের।
ফলে ১৯৮৩-এ জোহরা তাজউদ্দিন ও কোরবান আলী এক সমীকরণে এসেছেন পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিদের ঘায়েল করতে। আর ত্রিমুখী কোন্দলে দু-তরফ এক হয়ে অপর পক্ষকে কুপোকাত করতেও ছাড়েননি। আবার বাকশালকে পুরোপুরি অস্বীকারে ব্যর্থ নেতারা শেখ মুজিবকেও অস্বীকার করতে পারেননি। ফলে ‘শেখ মুজিবের রক্তের গন্ধ আছে’ বলেই—১৯৭৮-এর সভাপতি আবদুল মালেক উকিলকে হটে যেতে হল নেতৃত্ব থেকে।
১৯৭৮-এর পর থেকেই দলে ভাগাভাগির ধারা সুস্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে। আর দেশের বৃহত্তম বিরোধী দলকে নিজ নিজ খাতে বইয়ে নেবার প্রচেষ্টার খেলা চলে পর্দার অন্তরালে।
দল ভারী করার জন্য ‘মস্কো-দিল্লী’ ঘেষা আবদুর রাজ্জাক ‘ন্যাপ’-এর মহীউদ্দিন-এর সহযোগিতায় এগিয়ে এলেন ’৭৫ পূর্ববর্তী পরবর্তী বাকশালের কাঠামো ‘গণঐক্য জোট’ (গজ)-এর ‘ভ্রাতৃপ্রতিম’ সহযোগী মণি সিং-এর কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ বা সিপিবি। মোজাফফর ন্যাপ-এর দু’দলে বিরোধের অজুহাত দেখিয়ে ন্যাপ থেকে হারুন, ন্যাপে আসা মতিয়া চৌধুরী, মোনায়েম সরকার প্রমুখ নেতারা ঢুকে পড়লেন শেষ অবধি আওয়ামী লীগে।
১৯৭৯-এর ১০ ডিসেম্বর ফুলের মালা দিয়ে তাদের বরণ করা হলো বিশেষ করে আবদুর রাজ্জাকের উদ্যোগে।
এর আগে তাদের অগ্রজ-মস্কোপন্থী বলে পরিচিত আবদুস সামাদ আজাদ ও মহীউদ্দিন আহমেদরা শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশায়ই আওয়ামী লীগ ছেড়ে ন্যাপ-এ যোগ দিয়ে আবার দলে ফেরত আসেন।
১৯৬৬ সালে ছয়-দফা প্রণয়নের পর সিপিবি ও তার সহযোগী মোজাফফর ন্যাপ অকুণ্ঠ সমর্থন দেয় শেখ সাহেবকে।
এ সময় থেকেই আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ চলছে বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের এক অংশের নেতারা।
১৯৭৮-এর কাউন্সিল এরপর দলের ছাত্র শ্রমিক, সংগঠন দু’ভাগ এমনকি ত্রি-খন্ডিত হয়ে পড়ে।
এদিকে বাকশাল প্রশ্নে আপোষ করতে না পেরে ’৭৮-এর কাউন্সিলে সভাপতির একজন দাবীদার মীজানুর রহমান চৌধুরী মারপিটের মধ্যে হতবাক হয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন যেমন করে, তেমনি আগস্টে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দল ত্যাগ করলেন।
তার বক্তব্য ছিল ঋজুঃ বঙ্গবন্ধু বাকশাল করে ভুল করেছিলেন। ১৯৭৮ কাউন্সিল-এর অব্যবহিত পরে নীতি নির্ধারণী ওয়ার্কিং কমিটির বর্ধিত সভায় বাকশাল প্রসঙ্গ নরম করা হলেও তার দলে থাকা দূরুহ হয়ে পড়ে।
৩-৫ এপ্রিলের এ সভায় বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সংসদীয় গণতন্ত্র আগে প্রতিষ্ঠা করে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ও পরে বাকশালের তথা বঙ্গবন্ধুর ‘দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী বাস্তবায়নের’ শপথ ঘোষণা করা হয়।
মীজান চৌধুরী দল ছাড়ার পর আবদুর রাজ্জাক ক্রমশঃ শক্তি সঞ্চয় করতে থাকেন। বলতে গেলে গোটা সংগঠনের কর্মী বাহিনী তার আওতাভূক্ত হয়।
এদিকে ছাত্র সংগঠনে ভাঙনের ব্যাপকতা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কার্যত দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে যায় ছাত্র সংগঠন।
এবং ১৯৮০ সালে দলের সংকট বাড়তে থাকে আসন্ন কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে। ১৯৮০’র শেষ ভাগে এবং ১৯৮১’র প্রথমে বিভিন্ন স্থানে ঘটে মারপিট, বোমাবাজী এমনকি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা পর্যন্ত লাঞ্ছিত হন।
১৯৮১’র ১৪, ১৫, ১৬ ফেব্রুয়ারী তীব্র উত্তেজনায় মুখোমুখি দু’দলের সংঘর্ষ কোন রকমে এড়িয়ে যান নেতারা ভারতে অবস্থানরত শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা ওয়াজেদকে আবার সমঝোতা’র সভানেত্রী করে।
এর মাঝে আওয়ামী লীগ-এর ত্রি-ধারার মাঝে আবির্ভূত হয়েছেন ‘পাশ্চাত্য-দিল্লী’ ঘেষা লবীতে ১৯৭৫ থেকে বিদেশে অবস্থানরত ডঃ কামাল হোসেন। ১৯৮০ সালের ১০ অক্টোবর তাকে বায়তুল মোকাররমে এক সভায় প্রথম দেখা যায়। তার আগমনে দলের দ্বন্দ্ব আরো প্রকট আকার ধারণ করতে থাকে।
যদিও ৮১-র কাউন্সিলের প্রথম দিনে ডঃ কামাল এবং শেখ হাসিনাকে (অনুপস্থিত) যথাক্রমে দ্বিতীয় ও প্রথম কাউন্সিলর হিসেবে কো-অপট করা হয়, শেষদিনে তারা দু’জনই দলের শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে চলে যান। ডঃ কামাল হোসেন কাউন্সিলের শেষদিনে প্রস্তাব করেন সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার নাম। যদিও তার আগে দড়ি টানাটানি চলছিল জোহরা তাজউদ্দিন বনাম মালেক উকিলের মধ্যে। দু’জনের মাঝখানে আপোষের প্রার্থী শেখ হাসিনাকে না মেনে কারো কোন উপায় ছিল না।
কিন্তু দ্বিতীয়বার জোড়াতালি দিয়ে আপোষ পরবর্তী কাউন্সিল অবধি টিকতে পারল না।
এর কারণ ১৯৮৩‘র জুনে দ্বিধা বিভক্ত ছাত্র সংগঠনের ইস্যুভিত্তিক ‘মেয়াদী বোমার বিস্ফোরণ’। এবং এটি ঘটান ডঃ কামাল, শেখ হাসিনা, তোফায়েল আহমেদ এবং ‘তৃতীয় পক্ষ’ জোহরা তাজউদ্দিন, আবদুল মান্নান ও কোরবান আলীদের সহযোগিতায়।
খুব ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আবদুর রাজ্জাকের শক্তি খর্ব করে ক্রমাগত শেখ হাসিনা নিজেকে সামনে আনতে থাকেন। হিসেবটা খুব পরিষ্কার ছিল। যত কিছুই ঘটুক না কেন শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগতভাবে বাধা দেওয়া সম্ভব নয় কারো পক্ষে। এবং সমালোচনা করলে দলের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সমালোচকের বিপক্ষে যাবে।
এছাড়া যতই আক্রমণ সমালোচনা করা হোক না আদর্শগতভাবে শেখ হাসিনার ভাষায়, আমাদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। অর্থাৎ একদলীয় বাকশাল ও শেখ মুজিবুর রহমান প্রশ্নে কোন প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব নেই।
আওয়ামী লীগের (হাসিনা) কারো পক্ষে এই দুই প্রশ্নে প্রকাশ্যে কোন বিরোধিতার সাহস নেই। কারণ হাসিনার পক্ষে তা পিতাকে অস্বীকার করার শামিল। আর রাজ্জাক-এর ব্যাপারে আরো পরিষ্কার।
এ পর্যায়ে আরো অনেক দূর গড়িয়ে যায় ঘটনা। ছাত্রলীগের ‘মেয়াদী বোমা’ ফাটানোর পর অর্থাৎ ছাত্রলীগ (জালাল-জাহাঙ্গীর) দফতর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় অফিসে স্থানান্তর করার ঘোষণায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন আবদুর রাজ্জাক।
৩ জুন, এক বিবৃতিতে তিনি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি মহিলা আওয়ামী লীগ ব্যতীত দলের অন্য সকল অঙ্গ সংগঠনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ব্যবহার না করার অনুরোধ জানান।
রাজ্জাক, ছাত্রলীগ (জা-জা) প্রদত্ত এক বিবৃতির সমালোচনা করে বলেন, তাদের এ বিবৃতি আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের পরিবেশ উত্তপ্ত করতে সহায়তা করবে। ৩ জুন ছাত্রলীগ (ফ-মু) অপর এক বিবৃতিতে, তাদের কার্যালয় আওয়ামী লীগ অফিসে স্থানান্তরের ঘোষণা দেন।
প্রতিবাদ না করেও তার পথ ছিল না। রাজ্জাক এরপর ক্রমাগত পিছিয়ে যেতে থাকেন শেষ অবধি, তার ভাষায়, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়।
এককালের আখড়ায় কুস্তি-লডা পেটানো শরীর আবদুর রাজ্জাককে এরপর আরো কোণঠাসা করে ফেলেন শেখ হাসিনা। ডাকা হল দলের ওয়ার্কিং কমিটির বর্ধিত সভা ৯ জুন।
১০ জুন রাতে তাড়াহুড়ো করে দেশে ফিরে এলেন বিদেশ সফররত ডঃ কামাল হোসেন। আবদুর রাজ্জাক আচ করতে পারেননি শেখ হাসিনার ব্যক্তিপ্রভাব কতটুকু ছড়িয়ে রয়েছে। কারণ জালাল-জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগকে তিনি নিজে দলের বৈধ ছাত্র সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এটা তার ব্যক্তি মর্যাদার লড়াইয়ে রূপান্তরিত হয়। যার প্রভাব বর্ধিত সভায় আগত জেলার নেতাদের মধ্যে পড়ে। আর ছাত্রলীগ (ফজলু-চুন্নু) সম্মেলনে মুকুল বোস বনাম লুৎফর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করা হবে কিনা এ প্রসঙ্গে রহমানের পক্ষাবলম্বী আবদুস সামাদ আজাদের সঙ্গে মতান্তর এবং ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। এছাড়া মতিয়া চৌধুরীও সরে গেছেন। দল ভারী দেখে তারা হাসিনার দিকেই আকর্ষিত হতে থাকেন।
এদিকে ডঃ কামাল হোসেন ‘তৃতীয় পক্ষ’ অর্থাৎ জোহরা তাজউদ্দিন, আবদুল মান্নানদের হাত ধরে রাজ্জাকের বিপক্ষে শক্তি জড়ো করেন। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমান-এর বাসভবনে ১০ জুন বর্ধিত সভায় ছাত্রলীগ প্রশ্নে ভোট গ্রহণ করা হলে রাজ্জাক হেরে যান ৩৪-৪০ ভোটে।
মূলতঃ দলে এরপর ভাঙনের ধারা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। শেখ হাসিনা দলীয় কোন্দলকে বাড়িয়ে নিয়ে যান নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা আহমদ চুনকার বাড়িতে ইফতার পার্টিতে যোগদান করেন। এতে আবদুর রাজ্জাকপন্থী কেউ ছিলেন না।
২৯ জুন রাজ্জাকের বাসভবনে ঢাকা নগর আওয়ামী লীগ কর্মীদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় এক ইফতার সমাবেশ। এখানে প্রদত্ত আবদুল মালেক উকিলের ভাষণ ক্ষিপ্ত করে তুলে হাসিনাপন্থীদের।
যদিও মালেক উকিল ছাত্রলীগ প্রশ্নে হাসিনার নাম উল্লেখ করেননি কিন্তু তার ইঙ্গিত সুস্পষ্টঃ কর্মীদের ইচ্ছা ও স্রোতের বিরুদ্ধে রাজনীতি করে বংশানুক্রমিকভাবে নেতা হওয়া যায় না, যদি তাই হতো তাহলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কন্য বেগম আখতার সোলায়মানই আওয়ামী লীগের নেত্রী হতেন।
এরপর রাজ্জাকের পক্ষে পাল্টা আক্রমণ না চালিয়ে টিকে থাকা মুশকিল হয়ে ওঠে। তাছাড়া তিনি প্রবল চাপের সম্মুখীন হন তার অনুসারীদের কাছ থেকে। তারা শেষ ফয়সালা করে, তাদের ভাষায় প্রতিক্রিয়াশীলদের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে সমাজতন্ত্রের তথা বাকশালের কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে পথ পরিষ্কার করার দাবী জানান।
বস্তুতঃপক্ষে ১১ জুন রাতে দলীয় কার্যালয়ে ওয়ার্কিং কমিটির সভায় জালাল-জাহাঙ্গীরকে স্বীকৃতি দেবার বিষয়ে বিরোধিতা করে কর্মীদের ‘এগিয়ে চল’-শ্লোগানের মাঝে বেরিয়ে যান রাজ্জাক ক্ষিপ্ত বিরক্ত হয়ে।
সেই থেকে তার তরফ থেকে দলীয় কার্যালয়ে কাজ-কর্ম প্রায় বন্ধ করে তার বাড়ির কাছাকাছি অস্থায়ী দফতর স্থাপন করেন।
এরপর চলতে থাকে ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ বিবৃতির লড়াই এবং জেলা পর্যায়ের নেতাদের সমর্থন আদায়ের প্রচেষ্টা।
এমনি অবস্থায় শেখ হাসিনা ১৮ জুলাই প্রেসিডিয়ামের সভা ডাকেন। দলের এক অংশের নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তৃতা বিবৃতি সম্পর্কে আলোচনার পর রাজ্জাকের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রেসিডিয়ামের সভা সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। আর শেখ হাসিনার মতে সভায় ৪ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মালেক উকিল, মহীউদ্দিন আহমেদ, মোমিন তালুকদার এবং আবদুর রাজ্জাকের নিন্দা করা হয়। এবং উদ্ভত পরিস্থিতি সম্পর্কে ৩১ জুলাই-১ আগস্ট ওয়ার্কিং কমিটির বর্ধিত সভা ডাকার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
পক্ষান্তরে রাজ্জাক দাবী করেন, কোরবান আলীর বাড়িতে বসে ১৯ জলাই এ ধরনের সিদ্ধান্ত বর্ণিত একটি প্রেস রিলিজ তৈরি করে সংবাদপত্রে পাঠানো হয়।
এ সভা ডাকা প্রসঙ্গে শুরু হয় শেষ পর্যায়ের লড়াই। রাজ্জাক সভানেত্রীকে অনুরোধ করেন সভা ১৫ আগস্টের পর ডাকতে। পরে শেখ হাসিনা সভানেত্রীর পদাধিকার বলে সভা আহ্বান করেন।
এ পর্যায়ে রাজ্জাককে পরিত্যাগকারী আবদুল জলিল, মতিয়া চৌধুরী, মোনায়েম সরকার প্রচেষ্টা চালান সমঝোতার। কিন্তু শেষ অবধি রাজ্জাক হাসিনার কথামত প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সভা ডাকা হয়েছে এ শর্ত মেনে নিয়ে চুক্তিনামায় সই করেন মালেক উকিলের বাড়িতে রাত ১১টায়।
এর আগে তার সঙ্গে ৩ ঘন্টা আলোচনা হয় হাসিনার সঙ্গে কোন ফয়সালা ছাড়া। কিন্তু সভা স্থগিত রাখার চুক্তিতে হাসিনার সই তার পক্ষে মধ্যস্থতাকারীরা যোগাড় করতে পারেননি। রাজ্জাকের ভাষায় সভানেত্রীকে ভোর চারটা অবধি খুজে পাওয়া যায়নি।
ফলে যা হবার তা ঘটল। ঢাকা নগর রাজ্জাক পন্থীদের প্রভাবান্বিত। তারা দেখিয়ে দিলেন শক্তির মহড়া। দলের কার্যালয়ে ওয়ার্কিং কমিটির সভার পুলিশের পাহারায় শুরু হল। টিয়ার গ্যাস ছুড়ে মারপিটরত দু’পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। রাজ্জাক সমর্থকদের দূরে রাখা হয় আর হাসিনার সমর্থকরা পলিশের ব্যারিকেডের পেছনে দলের কার্যালয়ে দাড়িয়ে থাকেন।
আর এ দৃশ্য, দল ভাঙার লড়াই, ব্যথিত চিত্তে অবলোকন করেন আউটার স্টেডিয়ামের দেয়ালের পেছনে দাড়ানো অসংখ্য সাধারণ কর্মী যারা ভাঙন মেনে নিতে পারছিলেন না। ভাঙন না চাইলেও অনেককে তা মানতে হল।
শেষ মুহূর্তে শেখ হাসিনা আর আবদুল মালেক উকিলের একান্ত বৈঠকে ২ জুন বিকেলে দীর্ঘ বৈঠকেও ফয়সালা হলো না।
শেখ হাসিনা না চাইলেও আবদুল মালেক উকিলসহ ৬ জন নেতার বিরুদ্ধে ‘সাময়িকভাবে বরখাস্ত’ ও কারণ দর্শানোর নোটিশ জারীর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ওয়ার্কিং কমিটির সভায়। ৫৩ সদস্য বিশিষ্ট ওয়ার্কিং কমিটির ৪৯ জনের মধ্যে হাজির ছিলেন এখানে ৩৩ জন। এর আগে বর্ধিত সভায় আবদুল মালেক উকিলের প্রতি কোন ব্যবস্থা না নেবার সুপারিশ করে শুধু মহীউদ্দিন, মোমিন তালুকদার, আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ আহমেদ ও এস, এম, ইউসুফ-এর বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
কিন্তু আবদুল মান্নান, জোহরা তাজউদ্দিন এটা মানতে অস্বীকার করেন। তাদের চাপে জোহরা তাজউদ্দিনের পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বী মালেক উকিলকেও ‘দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি’ দেওয়া হয়। অথচ ১৯৮৩‘র ২৩ ফেব্রুয়ারী সরকারের পক্ষে ছাত্রদের আন্দোলনের বিপক্ষে বিবৃতি দেবার জন্যে রাজ্জাকপন্থীরা অভিযোগ করলেও তা সঙ্গত কারণে শেখ হাসিনা রাজ্জাক বিরোধী লড়াইয়ে নিজ শিবির জোরদার করার জন্যে এড়িয়ে যান।
অপরদিকে ৩ আগস্ট আবদুর রাজ্জাকের বাসভবনে অনুষ্ঠিত মালেক উকিলের সভাপতিত্বে ওয়ার্কিং কমিটির জরুরী সভায় শেখ হাসিনা বাদে ডঃ কামাল হোসেন, আবদুস সামাদ আজাদ, কোরবান আলী, আবদুল মান্নান, জোহরা তাজউদ্দিন, জিল্লুর রহমানসহ ছয়জন প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং তোফায়েল আহমেদ, সাজেদা চৌধুরী, আমীর হোসেন আমুকে সেক্রেটারীয়েট থেকে ‘সাসপেন্ড’ করা হয় ‘দলীয় শৃঙ্খলা বিরোদী কার্যকলাপের অভিযোগে।
১৫ দিনের নোটিশ দেয়া হলেও উভয় পক্ষ নোটিশ প্রদানে বিরত রয়েছেন। এমনকি দলীয় কার্যালয়ে (এ রচনা লেখাকালীন) উভয় দলের যাতায়াত অব্যাহত থাকে ও ৭ আগস্ট হাসিনার সভানেত্রীত্বে প্রেসিডিয়ামের সভা হলেও কোন সংঘর্ষ হয়নি।
দলে ভাঙন আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো না ঘটলে ভাঙন সমাপ্তির মুখে। এরপরও শেখ হাসিনা অংশ জোহরা-মান্নানের সঙ্গে ঐক্য বজায় রাখতে পারবে কি?
সামনের প্রশ্ন রয়েছে আর কয় ভাগ হবে দল? কারণ ‘সুবিধা’র ঐক্যে যখন দু’তরফ এক হয়েছেন সাধারণ শত্রুর প্রশ্নে সেখানে দলের কাউন্সিল জানুয়ারী ১৯৮৪তে ডাকা হয়েছে ততদিন কি বজায় থাকবে এ ঐক্য?
০০০০
মস্কোপন্থী রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না
‘আমরা মস্কোপন্থী রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী। যারা আমাদেরকে মস্কোপন্থী বলে চিহ্নিত করতে চান তাদের উদ্দেশ্য ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা।’
রাজ্জাক গ্রুপের সাংস্কৃতিক সম্পাদক জনাব শফিকুল আজিজ মুকুল এ কথা বলেছেন। মুকুলের মতে, কোন দেশপ্রেমিকই পন্থীর রাজনীতিতে বিশ্বাস করতে পারেন না। তাই মার্কিন, চীন, সৌদি, ভারত কিংবা পাকিস্তানের সমর্থক হবার প্রশ্ন সবার উর্ধ্বে স্থান দেই। আমাদের বিরুদ্ধে যারা অপপ্রচার করেন তাদের পরিচয় কি এবং তারা কাদের হাতের পুতুল বলার অপেক্ষা রাখে না।
মুকুল মনে করেনঃ দলের ভাঙন রোধ করা সম্ভব ছিল। কিন্তু দলের সভানেত্রী সে প্রচেষ্টা নেননি। তার পক্ষে নেয়া সম্ভবও নয়। কারণ তিনি কতিপয় ব্যক্তির কথায় উঠেন, বসেন। এক কথায় বলা চলে তিনি কোটারীদ্বারা ঘেরাও অবস্থায় আছেন। আমরা বার বার তাকে বলেছি, আন্তরিক হোন, কথা ও কাজে মিল রাখুন। দেশ ও দলের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিন। কিন্তু আমাদের কথা তিনি শুনলেন না। আজ যাদের কথায় দল ভাঙছেন টের পাবেন ক’দিন পরেই যখন মোহ ভাঙবে। সেদিন বেশি দূরে নয় তাকে রাজনীতি থেকেও বিদায় নিতে হতে পারে। তার আশেপাশের লোকজন সম্পর্কে আমরা সতর্ক হতে বলেছি—শেষ সুযোগ দিয়েছি। এখনও সময় আছে কোটারী হতে বের হতে পারলে মান-সম্মান—নেতৃত্ব সবই থাকবে। তা না হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে—দল হতে বহিষ্কৃত হবেন।
মুকুল বলেনঃ সহানুভূতি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেইনি এ কথা সত্য নয়—আমরা তাকে শেষবারের সুযোগ দিয়েছি, যাতে বিপথগামীদের কবল হতে বের হয়ে আসেন। সাম্প্রতিক ভাঙনকে সম্পূর্ণ আদর্শিক বর্ণনা করে মুকুল বলেনঃ যারা আওয়ামী লীগকে পশ্চাতমুখী রাজনীতির দিকে ঠেলে দিতে চায় তাদের বিরুদ্ধেই আমাদের জেহাদ। পরিষ্কার ভাষায় বলে দিতে পারি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থরক্ষার জন্য দলে ভাঙন সৃষ্টি করা হয়েছে। কর্মীরা এরা বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবেই। কর্মীরাই রাজ্জাকের মূল শক্তি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রক্ষণশীলদের কোন স্থান নেই। তাই যারা রক্ষণশীল ধ্যান ধারণায় বিশ্বাস করেন দয়া করে অন্য কোথাও চলে গেলে পারেন। রাজ্জাক আপোষকামী, মধ্য ফেব্রুয়ারীর ঘটনার পর আন্দোলনের পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও কেন আন্দোলন করেননি এ অভিযোগ খন্ডন করে মুকুল বলেনঃ যেটুকু আন্দোলন হয়েছে তা রাজ্জাকই করেছেন।
বাকশাল প্রশ্নে মুকুল বলেনঃ আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রে বাকশালের কর্মসূচী সন্নিবেশিত হলেও ওরা বিশ্বাস করে না। তাই তারা নানাভাবে বাকশালের বিরোধিতা করে। আবার জোড়াতালির কোন সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে শফিকুল আজিজ মুকুল বলেনঃ কই সে ধরনের কোন আলামত দেখতে পাচ্ছি না।
… …
এখনো ঐক্যের সুযোগ আছে
সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব তোফায়েল আহমদ দল ভেঙেছে একথার সঙ্গে একমত নন। তবে যা ঘটেছে তা সত্যিই বেদনাদায়ক। তার মতে, কতিপয় লোক চলে গেলেই দলে ভাঙন বোঝায় না। তাই দলের ভাঙন রোধ করা যেত কিনা এ প্রশ্ন অবান্তর।
একথা বলতে পারি গঠনতন্ত্রের প্রতি রাজ্জাক সাহেবদের বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ থাকলে শোকজ নোটিশ পর্যন্ত হয়ত এড়ানো যেত। অতীতে এ ধরনের ঘটনা কয়েকবার ঘটেছে। দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে চুলচেরা বিশ্লেষণ শেষে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। এবার তারা বৈঠকেই বসতে রাজী হননি। ফলে ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরা তাদের কার্যকলাপ বক্তৃতা-বিবৃতি দেখে ব্যবস্থা নিয়েছেন যা গঠনতন্ত্র সম্মত। ওয়ার্কিং কমিটির ৫২ জন সদস্যের মধ্যে ৩৫ জনের উপস্থিতিতে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ নজীরবিহীন। কেননা এত বিপুলসংখ্যক সদস্য সাধারণতঃ বৈঠকে উপস্থিত থাকেন না।
এক প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমদ বলেন, ঐক্যের সম্ভাবনা একেবারে যে নেই তা বলা যায় না। শোকজ নোটিশের জবাব সন্তোষজনক দিলে ওয়ার্কিং কমিটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা পুনঃ মূল্যায়ন করে বিবেচনা করতে পারেন। এটা নির্ভর করবে শোকজপ্রাপ্তদের মনোভাবের উপর। আমার কথা হলো, দল কোন ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর নয়। দলের গঠনতন্ত্র আছে, নিয়মনীতি আছে। এটা মেনে চলতে হবে সবাইকে।
আমি অন্যায় করলে আমার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে দলে শৃংখলা থাকে না। ইফতার পার্টি, ঈদ পুনর্মিলনী ও বর্ধিত সভা সম্পর্কে রাজ্জাক সাহেবরা প্রকাশ্যে যে বক্তৃতা ও বিবৃতি দেন তা ছিল সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্রবিরোধী। বার বার তাদেরকে বলা হয়েছে আসুন ওয়ার্কিং কমিটির সভায় বসে কথা বলি। আপনাদের বক্তব্য দলের নেতৃবৃন্দের কাছে বলুন, মতভেদ বা মতপার্থক্য থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আলাপ-আলোচনা করলে শেষ হয়ে যেতে পারে। তারা শুনলেন না আমাদের। বরং বৈঠক বানচালের উদ্যোগ নিলেন। গুলি, বোমাবাজি ও লাঠালাঠি হলো আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে। জেলা পর্যায়ের নেতারা এ কার্যকলাপে দুঃখে পেলেন। তারা টিয়ার গ্যাসের মধ্যেও সভায় যোগ দিলেন। বৈঠক চলল। শেখ হাসিনা বৈঠক চলা অবস্থায়ও উদ্যোগ নিলেন রাজ্জাক সাহেবদের বৈঠকে যোগদানের ব্যাপারে। সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো। তারা বয়কটের সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন।
বৈঠকের শেষ দিনেও ডঃ কামাল হোসেন একঘন্টা কথা বললেন জনাব মালেক উকিলের সঙ্গে। মালেক উকিল কথা দিলেন বৈঠকে এসে তার বক্তব্য রাখবেন। তিনি এলেন না। ডঃ কামাল এটাও বলেছিলেন আপনি বৈঠকে আসুন, কথা বলুন, বক্তব্য দিন। আপনার সঙ্গে আমি থাকব। দলের স্বার্থে আমি বৈঠকে স্থগিত রাখার পক্ষে অভিমত দেবো। শেখ হাসিনার সঙ্গেও নানাভাবে উকিল সাহেবের কথা হলো। তিনি রাজি হলেন অথচ বৈঠকে যোগ দিলেন না। রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে সম্পর্কিত কতিপয় জেলা নেতা উদ্যোগ নিলেন বৈঠকে যোগদানের ব্যাপারে। তাদের প্রচেষ্টাও বানচাল হলো একগুয়েমী মনোভাবের জন্য। এরপর যা হবার তাই হয়েছে।
কি কারণে তারা (রাজ্জাক সাহেবরা) বৈঠকে যোগ দেননি তার সঠিক কারণ আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তবে আমার ধারণা তারা মনের দিক দিয়ে ছিলেন দুর্বল। ছাত্রলীগ (ফ-মু) নেতারা যেমন রক্তের উত্তরাধিকারী মানি না—ছবির মুজিবকে চিনি না প্রভৃতি বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে সকল মহলের সহানুভূতি হারিয়েছিলেন রাজ্জাক সাহেবরা ও বৈঠক ডাকার অধিকার নেই, আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত ভুল, চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত মানি না, শেখ হাসিনা ব্যর্থ হয়েছেন প্রভৃতি বক্তব্য রেখে দলের নেতা ও কর্মীদের সহানুভূতি হারিয়ে ফেলেন। তাই তারা ধরে নিয়েছিলেন সভা হলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণ সম্পর্কে তোফায়েল বলেনঃ দলে নেতা, কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের সহানুভূতি হারানোর ভয়ে তারা ব্যবস্থা নেননি। গত দু’মাস তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেই মূলতঃ বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে আসছিলেন। জনাব মালেক উকিল এমন সব বক্তব্য দেন যা ছিল সত্যিই দুঃখজনক। আর যে বৈঠকে তারা ৯ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন তা সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক। যতদূর জানা গেছে, বৈঠকে কোরামই হয়নি। ১৫ আগস্টের আগে তারা বৈঠক ডাকবেন না বলেছিলেন অথচ তারাই বৈঠক ডাকলেন। তাহলে কি ধরে নেব এটা ছিল তাদের একটা অজুহাত মাত্র। বৈঠকে ১৬ জন উপস্থিত ছিলেন দাবী করা হয়। আমার জানা মতে দিনাজপুরের আবদুর রহিম, যশোহরের জনাব রওশন আলী, ঢাকা মহানগরীর হানিফ ও চট্টগ্রামের আবদুল্লাহ আল হারুন সভায় উপস্থিত ছিলেন না। তাই ১২ জন নিয়ে বৈঠক হয় না গঠনতন্ত্র অনুযায়ী।
বিশেষ মহলের সঙ্গে যোগসাজসের প্রশ্নে জনাব তোফায়েল রেগে যান। এ অভিযোগকে সম্পূর্ণ অসত্য বর্ণনা করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে কোনদিন রাজনীতি করে না। এটা জনগণের সংগঠন। জনগণের ইচ্ছার উপরেই দল পরিচালিত হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ কোনরূপ ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। মধ্য ফেব্রুয়ারীর ঘটনার পর শেখ হাসিনাসহ ১৫ দলের নেতারা যখন গ্রেফতার হই তখন তারা (রাজ্জাক সাহেবরা) কোথায় ছিলেন? সামনে ছিল ২১শে ফেব্রুয়ারী। জনগণ আশা করেছিল তারা ২১শে ফেব্রুয়ারী অন্ততঃ শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়ে কর্মসূচী দেবেন। কিন্তু সেদিন তারা দারুণভাবে হতাশ করেন। এরপরও কি এ প্রশ্নের জবাব চান বলে আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন? আপনিই বলুন রাজ্জাক সাহেবরা সেদিন কোথায় ছিলেন?
বাকশাল প্রশ্ন দলে কোন বিরোধ নেই বলে জনাব তোফায়েল মন্তব্য করেন। বাকশালের কর্মসূচী আওয়ামী লীগের বর্তমান ঘোষণাপত্রে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। যারা এখন বাকশাল প্রশ্নে কথা বলেন, এটা শুধু যে কর্মীদের বিভ্রান্ত করার জন্যই তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
রাজ্জাকের পরে তিনি হবেন সাধারণ সম্পাদক এ প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল বলেনঃ আমি কোন পদের জন্য রাজনীতি করি না। এ প্রশ্ন কারা তুলল? আমি কিছু জানি না। একথা লিখে নিন আমি আওয়ামী লীগের একজন নগণ্য কর্মী হিসেবে সারাজীবন কাজ করে যেতে চাই।
……….
রাজ্জাক আন্তরিক নয়
‘রাজ্জাক আন্তরিক না, তাই তার সাথে রাজনীতি করা যায় না। দীর্ঘদিন তার সঙ্গে রাজনীতি করে দেখেছি তার মধ্যে আন্তরিকতার দারুণ অভাব। বহুবার বলেছি, কিন্তু কোন কাজ হয়নি। ফলে তার সাথে যারা ছিল তারা অন্যত্র অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছে।’
এ অভিমত জনাব আবদুস সামাদ আজাদের। প্রেসিডিয়ামের সদস্য জনাব সামাদ আজাদ ১৯৭৫ সনের পট-পরিবর্তনের পর থেকে রাজ্জাকের সঙ্গেই ছিলেন। সাম্প্রতিক ভাঙনে তিনি রাজ্জাকের সঙ্গে নেই।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেনঃ রাজ্জাকের সঙ্গে ছিলাম একথা ঠিক নয়। বিভিন্ন ইস্যুতে রাজ্জাককে সমর্থন করেছি। তার মানে এ নয় আমি রাজ্জাকের লোক। আমি রাজনীতি করি, কারো লোক হবো কেন? লোক যদি হতে হয় আমি ‘বঙ্গবন্ধুর’ লোক হবো। গঠনতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপে রাজ্জাকের সঙ্গে কেন অন্য কারো সাথেও থাকব না।
সাম্প্রতিক ভাঙন সম্পর্কে সামাদ আজাদ বলেনঃ ভাঙন শব্দটি এখানে যথার্থ নয়। ভাঙন হয়নি। মত-পার্থক্য হয়েছে শুধু। তবে যা হয়েছে দলের জন্য সুখকর নয়। এগুলোও রোধ করা যেত—যদি রাজ্জাক আন্তরিক হতেন। দলের গঠনতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতেন। এর কোনটাই তার মধ্যে নেই। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের মত সংগঠনের নেতৃত্বে থাকার পর সবাই আশা করেছিল দলের বর্ধিত সভা ও ওয়ার্কিং কমিটির সভায় যোগ দেবেন। কিন্তু আমরা কি দেখলাম। সভা বানচালে তারা উদ্যোগী হলেন। গুলি, টিয়ার গ্যাস ও বোমাবাজি হলো আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে। ফল দাড়ালো কি? জনগণের সামনে আমাদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হলো।
জনাব সামাদ আজাদ বর্তমান অবস্থার জন্য মালেক-রাজ্জাককে সম্পূর্ণভাবে দায়ী করেন। তিনি বলেন ১০ জুনের বর্ধিত সভায় ছাত্রলীগ সম্পর্কে যখন সিদ্ধান্ত হয় তখন সে সিদ্ধান্ত তারা মেনে নেন। বরং আমি নিজে প্রস্তাব দেই মালেক উকিল, ডঃ কামাল, কোরবান আলী ও আবদুর রাজ্জাককে নিয়ে ছাত্রলীগের সম্মেলনের ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করার। মালেক উকিল প্রস্তাব শুধু সমর্থনই করেননি এটাকে ম্যান্ডেটরী বলে আখ্যায়িত করেন। পরে সাধারণ সম্পাদক নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বের হয়ে যান।
যাবার সময় বলে যান এগুলো প্রেসে দেবেন না। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার ঐদিনই অফিস সম্পাদক সৈয়দ আহমদ সংবাদপত্রে বিবৃতি দেন। এরপর শুরু হয় বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি। ২৯ জুন রাজ্জাক আয়োজন করলেন এক ইফতার পার্টির।
মালেক উকিল ছাড়া দলের অন্য কোন নেতাকে তাতে আমন্ত্রণ জানাননি। মালেক উকিল সাহেব এমন সব বক্তৃতা করলেন যা পরদিন সংবাদপত্রে বিস্তারিত প্রকাশ পায়। এরপর প্রকাশ্যে বিরোধ দেখা দেয়।
১৮ জুলাই প্রেসিডিয়ামের সভা ডাকা হলো। বিকাল ৪টার পরিবর্তে ৫টায় সভার কাজ শুরু হলো। রাজ্জাক বললেন ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ডাকেন। সভায় স্থির হলো আর কেউ কোন বক্তৃতা বিবৃতি দেবেন না। এসময় মালেক উকিল উপস্থিত ছিলেন না। ১৮ তারিখ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত সেক্রেটারী সাহেব সভা ডাকলেন না। সভানেত্রী আবার অনুরোধ করলেন।
তাও যখন মানলেন না, তখন বাধ্য হয়ে গঠনতন্ত্রের ১৯ ধারা অনুযায়ী সভানেত্রী সভা ডাকলেন। এর পরের ঘটনা সবার জানা। আমরা শেষ চেষ্টা করেছি সভায় যাতে তারা উপস্থিত হয়ে বক্তব্য পেশ করতে পারেন। আমার দৃঢ়বিশ্বাস ছিল সভায় উপস্থিত হলে এ দুঃখজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। সকল চেষ্টাই উবে যায়—তাদের আন্তরিকতার অভাবে। কেন জানি আমার মনে হয় দল ভাঙ্গার দায়িত্বে তারা কমিটেড। তা না হলে দলের সর্বোচ্চ কোরাম বয়কটের সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারেন না। এ কোরাম কোন ব্যক্তির নয়। এখানে সুবিচার তারা পেতেন।
শেখ হাসিনার প্রতি কারণ দর্শাও নোটিশ না দেবার পেছনে কি কারণ রয়েছে? এর জবাবে সামাদ আজাদ বলেনঃ এটা নতুন কিছু নয়। শেখ মুজিব ভাল বাকি সব খারাপ। শেখ হাসিনা ভাল সব খারাপ। এর মধ্যে নতুনত্ব কি আছে? সবচাইতে মজার ব্যাপার হলো গত দু’মাস তারা কেবল হাসিনার বিরুদ্ধেই বক্তৃতা বিবৃতি দিয়েছেন। এখন শেখ হাসিনা ভাল একথা বলার অর্থ এটা হতে পারে কর্মীদের সহানুভূতি লাভ। তবে এ প্রচেষ্টাও সফল হবে না। কারণ তাদের কার্যকলাপ দিবালোকের মত স্পষ্ট।
সামাদ আজাদ বলেনঃ ঐক্যের সম্ভাবনা একেবারে নেই এটা বলা ঠিক হবে না। রাজনীতিতে শেষ কথা নেই। এক্ষেত্রে রাজ্জাক সাহেবদের ভূমিকা বেশি। তারা যদি ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং শোকজ নোটিশের সন্তোষজনক জবাব দেন তখন নিশ্চয়ই ওয়ার্কিং কমিটি বিবেচনা করে দেখবেন।
বাকশাল প্রশ্নে মতভেদ থাকার কথা নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। কারণ এটা সম্পূর্ণ বিতর্কের উর্ধ্বে। শেখ হাসিনা দেশে আসার আগেই বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। বাকশালের কর্মসূচী আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রে সন্নিবেশিত হয়েছে। তাই আদর্শের বিরোধ আছে আমি একথা স্বীকার করি না। নেতৃত্বের অবস্থানের কারণেই অর্থাৎ অবস্থানে হের-ফের ঘটলেই বাকশালকে সামনে নিয়ে আসা হয়। এবারও তাই করা হয়েছে।
রাজ্জাকের সমর্থনে কাদের সিদ্দিকী
বর্তমানে ভারতে আশ্রয়রত কাদের সিদ্দিকী তার সমর্থকদেরকে রাজ্জাক গ্রুপের সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। রাজ্জাক গ্রুপের একজন কেন্দ্রীয় নেতা এ কথা স্বীকার করেন। এ নেতা অবশ্য বলেনঃ কাদের সিদ্দিকীর সমর্থকের সংখ্যা খুব বেশি নয়। তবে যারাই আছে, তাদের অবস্থান খুবই মজবুত।
রাজ্জাক গ্রুপের অপর একজন নেতা বলেনঃ শেখ হাসিনার কার্যকলাপে কাদের সিদ্দিকী নাখোশ। অনেকদিন আগেই হাসিনার প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
০০০০
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
যে বন্ধ্যাত্ব রাজনৈতিক দলকে সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে, এবার তার প্রথম সফল শিকার আওয়ামী লীগ। একই কারণে অতীতেও আওয়ামী লীগে ভাঙন এসেছে, কিন্তু সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে যে শক্তি, তা দলত্যাগী হয়নি।
আওয়ামী লীগ এতদিন পর্যন্ত মূলতঃ কর্মীনির্ভর রাজনৈতিক দল ছিলো—একক নেতৃত্ব দলকে ধরে রেখেছে, রাজনৈতিক তত্ব বা আদর্শের সংঘাত প্রাধান্য লাভ করেনি।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শুরু করে, আজ পর্যন্ত সবগুলো ভাঙনের মধ্যে এটা তৃতীয় ভাঙন যা আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। পূর্বেকার দুই ভাঙনের সময় আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠিত করার জন্য মওলানা ভাসানী ও আ, স ম আবদুর রবের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে শেখ মুজিবের সর্বগ্রাসী ব্যক্তিত্ব।
১৯৮৩ এসে মুজিবের মত নেতৃত্ব অনুপস্থিত। কিন্তু উত্তরাধিকারের বোঝা বহন করতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। এই পর্বতের মতো ভারী উত্তরাধিকারকে আবদুর রাজ্জাকের মত সংগঠকও আঘাত করার সাহস পাননি। তিনিও বিরুদ্ধবাদীদের কাতারে মুজিব তনয়া শেখ হাসিনাকে এখনো দাড় করাননি। বরং শেখ হাসিনাকে আখ্যায়িত করা হয়েছে ‘সমঝোতা’ ও ‘ঐক্যের’ প্রতীক হিসেবে। নিজের অজান্তেই জনাব রাজ্জাক বলটা ঠেলে দিয়েছেন হাসিনার কোর্টে।
দু’ভাবে এর ব্যাখ্যা হতে পারে। একঃ শেখ মুজিবের উত্তরাধিকারের দাবীদার দুজনেই। শেখ হাসিনা পিতৃত্বের কারণে এবং রাজ্জাক রাজনৈতিক সাহচর্যের কারণে।
দুইঃ এখনো ঐক্যের সম্ভাবনা সম্পূর্ণ অপসারিত নয় বলে রাজ্জাক হাসিনাকে আঘাত করতে সাহস সঞ্চয় করতে পারছেন না। ৩ আগস্ট সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্জাক অবশ্য মন্তব্য করেছিলেনঃ আমাদের মধ্যে ভাঙন জোড়াতালি অতীতেও হয়েছে। আবার হতেও পারে।
তবে রাজ্জাকের সকল ইচ্ছাই স্বপ্ন থেকে যাবে। উত্তরাধিকারের জন্য শেখ হাসিনাকে নতুন করে কিছু প্রমাণ করতে হবে না এই সামন্ত মূল্যবোধের সমাজে। কিন্তু রাজ্জাক কি করবেন? মুজিবের ঘনিষ্ঠ সহচরদের অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত তার প্রতি অনুগত থাকেননি।
দ্বিতীয়তঃ হাসিনাকে এখনো ঐক্যের অবশিষ্ট প্রতীক আখ্যায়িত করে রাজ্জাক রাজনৈতিক পরিচ্ছন্নতার খেলা খেলতে চাইলেও মোহের রাজনীতিতে হেরে গেছেন।
শেখ মুজিব জীবদ্দশায় প্রবীণদের সঙ্গে অন্তঃদলীয় বিরোধে অবতীর্ণ হয়ে সামনে এগিয়ে গেছেন, প্রবীণদের ‘স্নেহের’ বন্ধনে ফিরে যাননি। আজ যারা রাজ্জাক এবং হাসিনার দলে বিভক্ত হয়েছেন, বয়সের হিসেবে এরা নবীন এবং প্রবীণে অন্তর্ভূক্ত। এরা প্রাকৃতিক নিয়মেই একে অপরের ঔদ্ধত্য এবং কর্তৃত্ব মেনে নেবেন না।
দলের ভাঙন সম্পর্কে শেখ হাসিনা সম্প্রতি এক নতুন অবস্থান গ্রহণ করেছেন। একটি সাপ্তাহিকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি মন্তব্য করেছেনঃ যে খুনীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর ক্ষমতায় ছিল এবং যারা এর পরবর্তী সময়ে ক্ষমতা এসেছে তারা চাইবে কোন্দল সৃষ্টি করে দলের ইমেজ নষ্ট করতে। তারা চাইবেনা আমাকে সুস্থির মতো কাজ করতে দিতে। এটা আওয়ামী লীগে নতুন নয়।
অবশ্য খুনীদের বিরুদ্ধে দল ভাঙার অভিযোগ রাজ্জাকেরও। এবং মালেক উকিলর ভাষায় ‘যারা বিদেশ থেকে চুক্তি করে এসেছিল, দল ভাঙার জন্যে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছে।’ অবশ্য ’৭৮ সালের কমিটিতে মালেক উকিল রাজ্জাকের বিপক্ষে দাড়িয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের বর্তমান ভাঙন কি নীতিগত? রাজনৈতিকভাবে অনেকে তাই মনে করেন এবং মূল দায়িত্ব ডঃ কামাল হোসেনের উপর চাপিয়ে দেন। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, অনুল্লেখ্য থাকলেও সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রতি সম্ভাব্য দৃষ্টিভঙ্গিও ভাঙনের একটি কারণ।
এতদিন যাদের আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হতো এবং মনে করা হতো রাজ্জাকের সম্ভাব্য অনুসারী, তারা এ বিরোধে হাসিনার পক্ষ নিয়েছেন। ১৯৮৩ সালে এই অবস্থানগত পরিবর্তন জাতীয় অবস্থা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন নয়।
সুস্পষ্টভাবে কোন গ্রুপই বিরোধের রাজনৈতিক কারণ তুলে ধরতে পারেনি। তবে হাসিনা ঘনিষ্ঠ মহলের প্রভাবান্বিত একটি দৈনিকে অভিযোগ আনা হয় যে, রাজ্জাকপন্থীদের হাতে হাসিনার জীবন নিরাপদ নয়।
রাজনৈতিক সংগঠন বলেই, ভাঙনের প্রক্রিয়ায় দলীয় শক্তি সমভাবে উভয় গ্রুপে বিন্যস্ত হবে না। চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায় মালেক উকিল ও আবদুর রাজ্জাক কি করবেন?
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে তারা বহুদলীয় গণতন্ত্রের ভিত্তিতে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) নামে দল গঠন করবেন। ঘোষণাপত্রে ১৯৭৫ এর বাকশাল কর্মসূচীর এক দলীয় ব্যবস্থাবাদে বাকী অংশ থাকবে বলে জানা গেছে।
কিন্তু হাসিনা কি করবেন? ভাঙনের প্রক্রিয়ায় দলকে ধরে রাখার জন্য শেখ মুজিব যা করতেন, হাসিনা কি ব্যক্তিগতভাবে তা পারবেন? মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে যে আবেগ কার্যকর, জীবিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে সেই আবেগই ধারণ করে ভিন্ন রূপ।
নির্বাচন ও ক্ষমতার সঙ্গে হাসিনার অনুসারীদের অনেকে এমনভাবে জড়িত, সম্ভাব্য সে পরিস্থিতিতে তাদের আনুগত্য হয়তো অটুট নাও থাকতে পারে। তাই উত্তরাধিকারের সার্থক প্রতীক হতে হলে হাসিনাকে শুরু করতে হবে প্রথম থেকে। ঘনিষ্ঠ অথচ অধিক রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার অধিকারী সহকর্মীরা কি তাকে সে সুযোগ দেবেন?
আওয়ামী লীগের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
১৯৪৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকার ২৫০ নম্বর মোগলটলীতে এক কর্মী শিবিরে শওকত আলী একটি সম্মেলনের আহ্বান জানান। কর্মী সম্মেলনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিতহন যথাক্রমে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও ইয়ার মোহাম্মদ খান। অফিস সম্পাদক নির্বাচিত হন মোস্তাক আহমদ।
কাজী বশীরের (হুমায়ুন) রোজ গার্ডেনের বাসভবনে ২৩ ও ২৪ জুন ’৪৯ সনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কর্মী সম্মেলনে গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শামসুল হক। যুগ্ম সম্পাদক হন দু’জন—শেখ মুজিবুর রহমান ও খোন্দকার মোশতাক আহমদ।
১৯৪৯ সালের ২৪ জুন বিকেলে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক খসড়া ম্যানিফ্যাস্টো পাঠ করেন। ১৯৫০ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ গঠন করেন। সভাপতি হন তিনি নিজে এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মাহমুদুল হক ওসমানী।
১৯৫৩ সালের ১৪ নবেম্বর পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে যুক্তফ্রন্টে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৫৪ সালের ৪ ডিসেম্বর মওলানা ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। তখন যুক্তফ্রন্টের বৃহত্তম অঙ্গ দল ছিল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের শ্লোগান ছিল সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী। এ কারণে প্রগতিশীল বহু কর্মীই আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। ফলে এ দলের অভ্যন্তরে ডান-বাম ও মধ্য পন্থীদের সংঘাত লেগে থাকতো।
১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগের প্রগতিশীল অংশ গঠন করে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি। এর নেতৃত্ব দেন মওলানা ভাসানী। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারী হলে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ একটি নিষ্প্রভ রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হয়।
১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে শেষ বারের মতো পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে মওলানা ভাসানী সভাপতিত্ব করেন। ঐ অধিবেশনেই তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি তার ঐতিহাসিক ‘আচ্ছালামু আলাইকুম’ উচ্চারণ করেন। কিন্তু বৈদেশিক নীতির প্রশ্নে সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে তার মতভেদ তীব্র আকার ধারণ করে। সে কারণেই মওলানা ভাসানী পর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠন করেন ১৯৫৭ সালের ২৭ জুলাই।
এদিকে ইস্কান্দার মির্জার চক্রান্তে ১৯৫৭ সালের ১০ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রী সভার পতন ঘটে। তার ৫৯ দিন পর ১৬ ডিসেম্বর ফিরোজ খান নন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ফিরোজ খান নুন ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র অনুযায়ী পাকিস্তানের প্রথম নির্বাচন ঘোষণা করেন ১৯৫৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী। ’৫৮ সালের ৭ জুন রাত আটটায় ইস্কান্দার মির্জা শাসনতন্ত্র বাতিল এবং সামরিক আইন জারী করেন। কিছুদিনের মধ্যেই আইয়ুব খান হলেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। ১০ অক্টোবর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন।
সামরিক আইন জারীর ফলে রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ১৯৬২ সালের ৩১ জানুয়ারী করাচীতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রেফতার হন। ১৯৬২ সালে সামরিক সরকার পূর্ব পাকিস্তানে হামিদুর রহমান কমিশনের রিপোর্টের মাধ্যমে শিক্ষা সংকোচনের চেষ্টা করল সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে প্রবল ছাত্র বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর সাফল্যের সঙ্গে শিক্ষা দিবস পালিত হয়। ঐদিন সামরিক সরকার ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলের ওপর গুলি চালায়। নিহত হন অনেক ছাত্র। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন মুস্তাফিজুর, বাবুল ও ওয়াজিউল্লাহ। ‘৬২-’৬৩ সালে সারা বছর ধরে স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। সারা বছরে এক মাসও ক্লাস হয়নি। কারা মুক্তির পরে সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের উভয় অংশে ব্যাপকভাবে সফর করেন। ৬২ সালের ৫ অক্টোবর গঠন করেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট।
’৬৩ সালের মার্চে সোহরাওয়ার্দী চিকিৎসার জন্যে বিদেশে যান। ৭ ডিসেম্বর বৈরুতের এক হোটেলে তার রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে। তার ব্যাপক প্রভাবের কাছে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন নিষ্প্রভ। সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারী আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবন ঘটান শেখ মুজিবুর রহমান। ‘৬৫ সালের ২ জানুয়ারী পাকিস্তানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কনভেনশন মুসলিম লীগের টিকেটে আইয়ুব খান এবং সম্মিলিত বিরোধী দলের প্রার্থী হন মিস ফাতিমা জিন্নাহ। মৌলিক গণতন্ত্র প্রথায় আইয়ুব খান নির্বাচনী প্রহসনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালের গোড়ার দিকে আওয়ামী লীগ ৬ দফা কর্মসূচী গ্রহণ করে। ঐ বছরই মে মাসে শেখ মুজিব সহ আরো অনেক আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার হন। গ্রেফতারকৃত নেতাদের মধ্যে ছিলেন খোন্দকার মোশতাক আহমেদ, মীজানুর রহমান চৌধুরী, শামসুল হক, আবদুল মোমেন, ওবায়দুর রহমান, মোল্লা জালালুদ্দীন আহম্মদ, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, জহুর আহমদ চৌধুরী, আবদুল আজিজ, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, মুস্তফা সারওয়ার, মোহাম্মদ উল্লাহ, শেখ ফজলুল হক মণি প্রমুখ।
১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সংগঠিত হবার পর তিনি আস্তে আস্তে পরিণত হন এই দলের অধিপতিতে।
১৯৭৫-এ বাকশাল গঠনের পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ দলের সভাপতি ছিলেন। এবং মধ্যমণি হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে সাধারণ সম্পাদকের পদ বদল হয়েছে বহুবার। এই দলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন তাজউদ্দীন আহমদ, মীজানুর রহমান চৌধুরী, আমেনা বেগম, জিল্লুর রহমান।
১৯৪৯ সনে প্রতিষ্ঠার পর থেকে একটি সংগঠন আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে যে দ্বিধাবিভক্তির সম্মুখীন পাশের চিত্রটি থেকে তা জানা যাবে। শেখ মুজিবের দানবীয় নেতৃত্ব ১৯৭৫ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে সংগঠন হিসেবে শক্তি জুগিয়েছে। বর্তমান ভাঙনের প্রতিক্রিয়া সাংগঠনিকভাবে আরো কিছুদিন পরে স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
০০০০
[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2021/02/1983.08.12-bichitra-copy.pdf” title=”1983.08.12 bichitra copy”]