You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.11 | ২৪ আশ্বিন ১৩৭৮ সোমবার ১১ অক্টোবর ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

২৪ আশ্বিন ১৩৭৮ সোমবার ১১ অক্টোবর ১৯৭১

-মুক্তি সংগ্রামের আজ অনন্যদিন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নিয়মিত সামরিক অফিসারের প্রথম দলটি প্রশিক্ষণ শেষ করে মুক্তিবাহিনী মুলধারায় শরীক হয়।

-বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম মুক্তঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য বলেন, ‘সেদিন আর দেরি নাই, যে দিন শত্রুর জেল থেকে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে এসে আমাদের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিব ঢাকায় মুক্তিবাহিনীর অভিবাদন গ্রহণ করবেন। মুক্তবাহিনীর বীরযোদ্ধারা শীঘ্রই হানাদারদের বঙ্গপোসাগরে নিক্ষেপ করবে। পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশ তাঁর নিজের শক্তিতেই রাষ্ট্রহিসাবে পরিচিত আছে এবং থাকবে। উল্লেখ্য এদিন মন্ত্রীসভার সদস্য ও গণপরিষদ সদস্যগণ মুক্তাঞ্চল সফর করেন। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানী এম এন এ মন্ত্রীসভার সদস্যদের যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতি অবহিত করান। (সাপ্তাহিক জয়বাংলা)

-কুমিল্লা জেলার রিও এলাকায় মুক্তিবাহিনী ভারী মর্টারের সাহায্যে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করে। পলাতক পাকবাহিনী বহু হতাহত হয়। এ অপারেশন সকাল ১১টায় চালানো হয়েছিল।

-তেজগাঁ বিমান বন্দরে মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের মর্টার আক্রমণ অসফল হয়

-বুয়েনস অ্যায়ার নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত জনাব এ মামন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য ও ঐকমত্য প্রকাশ করেন। ১৩ অক্টোবর তিনি লন্ডনের বিচার প্রতি আবু সাইদ চৌধুরী কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে আনুগত্য প্রকাশ করেন।

-ফালিট লেঃ সুলতান মাহমুদের দুঃসাহসী গেরিলাদল মদনঘাটে অপারেশন শেষে হরিয়ানায় ফিরে আসেন। (১০ খঃ পৃঃ২৩)

-পিপলস পার্টির প্রেস সেক্রেটারী মওলানা কাওসার নিয়াজী ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জামাতে ইসলামীর মতো একটি ফ্যাসিবাদী ধর্মীয় দলকে অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত করা হচ্ছে। এই দলটি পাকিস্তানের আর এক ইন্দোনেশিয়ার পরিণত করতে চাচ্ছে। দলটি সম্পর্কে জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

-পাকিস্তান পিপলস পার্টির ঢাকা সফররত প্রতিনিধি দলের নেয়া মাহমুদ আলী কাসুরী ও পার্টির প্রচার সম্পাদক কাউসার নিয়াজীর সাথে হোটেল ইন্টার কন্টিনেণ্টালে ভাসানীপন্থী পূর্ব-পাকিস্তান ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান(যাদু মিয়া) ও যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার জাহিদ এক আলোচনা বৈঠকে মিলিত হন।

-সামরিক সরকার নিয়ন্ত্রিত বিরোধিদল গুলোর সংবাদ প্রচারের ওপর বিধিনিষেধ ছিল। এয়ার মার্শাল আসগর আলী খান এক বিবৃতি দিয়ে উপনির্বাচন থেকে স্বরে দাঁড়ালেন।

                                                                         

Keesing’s Contemporary Archives (পৃঃ২৪৯৫৩) লিখেছে, “ Opposition parties had been probibted access to the Government-controlled press; Air Marshall Mohammad Asghar Khan, Leader of the Freedom Movement, stated on Oct.11 that his party had withdrawn from the by-elections because the press had been forbidden to publish an announcement that it would contest them.

-Pindi troops in Barisal, Jessore, Dinajpur, Sylhet, Commilla sectors suffer heavy casualties. Pakistan envoy to Argentina, Mr, Abdul Momin quits his post and joins Bangladesh.

-যুক্তবাংলা পরিকল্পনা বাংলাদেশের জনগণ অভিনন্দিত করবে, তবে ভারত তা পছন্দ না করতে পারে” বলে ডঃ মাজহারুল ইসলাম সম্প্রতি কেরালার কেজিকটে প্রকাশিত সংবাদপত্রে যে মন্তব্য করেছেন, সে প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের জনৈক্য মুখপাত্র ও উক্তিকে অবান্তর ও ডঃ ইসলামের ব্যক্তিগত মত বএল অবিহিত করেছে। (সাপ্তাহিক জয় বাংলা ১৫/১০/৭১)

-বিভিন্ন রনাঙ্গন থেকে প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অব্যাহত আক্রমণের ফলে হানাদার খান সেনাদের তাবেদার রাজাকাররা ময়মনসিংহ ও সিলেট রনাঙ্গনে প্রতিদিন মুক্তিবাহিনী হাতে অস্ত্র-শস্ত্র সহ আত্মসমর্পণ করছে।

-রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ও জামাতে ইসলামীর নেতা মওলানা ইউসুফ খুলনায় রাজাকার সম্মেলনে বলেন, দুস্কৃতিকারী ও ভারতীয় সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারীদের দমন এবং দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর হামলায় যে কোন অপচেষ্টা নসাৎ করে দেওয়ার জন্য আমাদের সাহসী জনগণ,সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের পেছনে থাকবে। (দৈঃপাঃ)

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী