বাঙলাদেশে মানহারা মানবতার সঙ্গে পশুশক্তির লড়াই
— প্রবােধকুমার স্যান্যাল
পূর্ববঙ্গে পাক সৈন্যের নরহত্যা চলছে বহু বছর আগে থেকে। কারণ পাকিস্তান-সৃষ্টির প্রথম থেকেই পূর্ববঙ্গের। বাঙালীজাতি ইসলামভিত্তিক রাষ্ট্রকে একেবারেই পচ্ছন্দ করেনি। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে জিন্নাসাহেব বাঙালীকে বােঝাতে গিয়েছিলেন পাকিস্তানের এক ভাষা, এক জাতি এবং এক ধর্ম। কিন্তু তার কথায় বাঙালীরা কর্ণপাত করেননি। তাঁরা বলেছিলেন আমাদের ভাষা বাঙলা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বাঙালীর এবং আমরা সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ । তারা বলেছিলেন, আমাদের ধর্ম মসজিদে, মন্দিরে ঢুকবে না, আমাদের ধর্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষায়, বাঙলা সাহিত্যে, কাব্যে শিল্পে আমাদের ধর্ম বাঙলাদেশের সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নে, লােক কল্যাণ কর্মে, আমাদের ধর্ম বাঙালীর জাতীয়তাবাদের আদর্শের মধ্যে। সুতরাং জিন্নাকে মুখ মলিন করে ফিরে যেতে হয়েছিল।
পাকিস্তানের জন্মই হল জঙ্গী মনােবৃত্তির থেকে। তার প্রথম প্রকাশ কাশ্মীরে ঘটে। বরামুলার জাতীয়তাবাদী নেতা জনাব মকবুল শেরওয়ানি পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেন নি, সেজন্য তাকে এবং তার দলবলকে পেরেক দিয়ে পুঁতে মেরে ফেলা হয়েছিল। আমার মনে আছে পাকিস্তান সৃষ্টির মাত্র পনেরাে দিনের মধ্যে যখন পূর্ববঙ্গের পরিবর্তনের চেহারা দেখতে গিয়েছিলাম, তখন কুমিল্লার অধিবাসীরা আমাকে একটি বাময় ছবি উপহার দেয়। এই ছবির পটভূমিতে দেখলাম, দুখানা কঠিন ও বলিষ্ঠ বাহু লােহার শেকলে বাঁধা। ওর মধ্যে নিহিত্যৰ্থ ছিল এই উপমহাদেশ ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করল বটে, কিন্তু পূর্ব বঙ্গ শৃঙ্খলিত হয়ে রইল। পাকিস্তানে প্রথম দশ বছরে এগারােজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, কিন্তু জঙ্গীচক্রের প্রবল আধিপত্যের জন্য কেউই সুবিধা করতে পারেননি। এই জঙ্গীচক্রই পূর্ববঙ্গে শিল্পপতিদেরকে বসিয়ে বাঙালীদেরকে একদিকে যেমন শােষণ করতে থাকে, তেমিন অন্যদিকে সমালােচকদের টুটি টিপে রাখে । ফলে ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, যশাের-প্রভৃতি জেলখানাগুলি জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা ভরে ওঠে। একুশ বছর আগে আমি একখানা বইতে লিখেছিলুম পূর্ববঙ্গ হল পাক জঙ্গী শাসকদের উপনিবেশ মাত্র। ব্রিটিশ শাসকদের কৃপায় ওরা আসল বস্তু পাকিস্তান আদায় করে ছেড়েছে বটে, কিন্তু সুদ হিসেবে পেয়ে গেছে পূর্ববঙ্গ। ওটা ওদের দরকার। কেননা ওরা বাঙলাদেশ থেকে কেড়ে নিয়ে যেতে পারবে ধান, পাট, চা, বাঙলা ভাষা ও বাঙালী মেয়ে। কেনা জানে সংখ্যাতীত বাঙালী মেয়েকে নিয়ে ওরা মধ্যপ্রাচ্যের নানা স্থানে বিক্রি করে আসে। কিন্তু মেয়ে কেড়ে নিয়ে যাওয়াটা যত সহজ ছিল, বাঙলা ভাষাকে ছিনিয়ে নেবার চেষ্টাটা বাঙালী বরদাস্ত করেনি। সেজন্য ১৯৫২ সালে বাঙালীর রক্ত ঝরেছিল বাঙলাদেশের নগরে নগরে। পাকিস্তানের অর্থ ও সম্পদ সােনার বাঙলার ঐশ্বর্যে গড়ে উঠেছে কে না জানে? বাংলাদেশের বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক
হল পাকিস্তানের কুড়িটি নবাব বংশ ও জায়গীরদার গােষ্ঠী। প্রশাসন ব্যবস্থা, আমদানি-রপ্তানি, উচ্চতম সরকারি চাকুরি, সামরিক দপ্তর প্রভৃতি সমস্তই পাক জঙ্গীশাসকদের অধীনে। কিন্তু এসব কথা যাক। বিগত চব্বিশ বছরে একদিকে যেমন পাকিস্তানের প্রতি পূর্ববঙ্গের বিজাতীয় ঘৃণা জমে উঠেছে, অন্যদিকে পূর্ববঙ্গের প্রতি প্রচণ্ড আক্রোশ নিয়ে পাকিস্তান আজ মুখােমুখি দাঁড়িয়েছে। ওরা ছিল। মনিব, বাঙালীরা ছিল ভৃত্য। ভৃত্যরা পদলেহী থাকবে, ফরমাস খাটবে, মজুরি পাবে, বিলাসের উপকরণ যােগাবে, হুকুম তামিল করবে তার বদলে পাবে মুষ্টিভিক্ষা- এই তাে রীতি। কিন্তু বাঙালী যদি আত্মনিয়ন্ত্রণের। অধিকার চায়, যদি নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য দল পাকায়, সমান সমান ভাগ না পেলে চোখ রাঙ্গায় তব জঙ্গী-শাসক সহ্য করবে কেন? ওদের হাতে আছে দা, কুড়াল, খােন্তা, কাটারি এবং বড় জোড় লাঠিসোঁটা। পাকিস্তানের হাতে সর্বনাশা আধুনিক কালের অস্ত্রশস্ত্র মেসিনগান, মরটার, কামান, বিমান, বােমা, রাইফেল- আরও অনেক। সুতরাং বাঙালীদেরকে নিধন করতে কতটুকু সময় লাগবে? বড় জোর আটচল্লিশ ঘণ্টা।
গত মারচের প্রথম সপ্তাহে জঙ্গীশাসকরা শেখ মুজিবরকে ভয় দেখাবার জন্য খুচরাে হারে নরহত্যা আরম্ভ করেছিলাে বাঙলাদেশে। ‘বিশ, পঞ্চাশ, একশ’ মৃতদেহ ছড়িয়ে দিল ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম প্রভৃতি নগরে। কিন্তু অভয়মন্ত্রে দীক্ষিত শেখ মুজিবরের উত্তপ্ত কণ্ঠস্বর এই সব ঘটনায় গর্জিয়ে উঠল। সেই অগ্নিক্ষরা কণ্ঠের ডাক ছুটল নগরে ও গ্রামে, ময়দানে ও প্রান্তরে। সেই বজ্রনির্ঘোষে শুনতে পাওয়া গেল রয়াল বেঙ্গল টাইগারের এমন এক গর্জন- যা শুনলে শাসকশ্রেণীর হৃৎকম্প হয়। তিনি ঘােষণা করলেন, সাড়ে সাত কোটি বাঙালী কুকুর বেড়ালের মতাে মরবে না। এর পরের ঘটনাবলী সবাই জানে। কিন্তু নাদির শাহর বংশধর ইয়াহিয়ার হাতে পাকিস্তানের কোন এক নবাব নাকি সেদিন নাদির শাহর পুরনাে তলােয়ারটি উপহার দিয়েছেন। তা হবে। এবার সেই ক্ষিপ্তোন্মত্ত তলােয়ার ঘুরছে সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর বাঙলায়। কিন্তু গণহত্যার এই উন্মাদনার মধ্যেও ইয়াহিয়া এক বিশেষ পদ্ধতি ধরে চলেছেন। বাঙালীর সঙ্গে বাঙালীর সংস্কৃতি, জাতীয়তাবাদ ও নেতৃত্বকে তিনি এই সুযােগে ধ্বংস করবেন। সুতরাং গণহত্যার প্রথম বলি হয়েছে যুবক ও ছাত্র সমাজ, শিক্ষক ও অধ্যাপক, কবি, শিল্পী, সাহিত্যকর্মী, সাংবাদিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, মােক্তার, রাজনীতিক নেতা ও কর্মী, বিজ্ঞানবিদ্ ও কারিগরী বিশেষজ্ঞরা। দ্বিতীয় দফায় গণহত্যায় যারা বলি হয়েছে, তারা হল ছােট ছােট ব্যবসায়ী, দোকানদার, তাঁতী ও জোলা, জুতাের, কামার, স্বর্ণকার এবং অন্যান্য কাজ নিয়ে যারা থাকে।
বুদ্ধিজীবী ও শ্রমজীবীর পরে যারা থাকে তারা হল গ্রামবাসী ও চাষীসমাজ- ইয়াহিয়া তাদের কথা ভােলেননি। সেই কারণে শতশত গ্রাম বােমাবর্ষণের ফলে দাউ দাউ করে জ্বলছে এবং মেসিনগান ও কামানের গােলায় হাজারে-হাজারে কাতারে-কাতারে দরিদ্র নিরুপায় ও নিরস্ত্র চাষীসমাজ মরছে। এরপর সম্ভবত ইয়াহিয়া আরও দুটো নির্দেশ জারি করেছেন। সে দুটির একটি হল, সেখানে যা কিছু জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলিকে আগা গােড়া ধ্বংস করে দেওয়া। | প্রথম ধ্বংস-প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল কলেজ, ছাত্রাবাস, বিজ্ঞান-গবেষণা কেন্দ্র, প্রত্যেকটি লাইব্রেরি, কারিগরি বিদ্যাকেন্দ্র এবং বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, প্রতিটি হাসপাতাল, অফিস, আদালত, কাছারি এবং সর্বপ্রকার সাংস্কৃতিক সমবায় কেন্দ্র। এসব ছাড়া সর্বপ্রকার যােগাযােগ ব্যবস্থা, সংবাদ প্রতিষ্ঠান, বাছা বাছা রেল স্টেশন। ইয়াহিয়ার সর্বশেষ নির্দেশ বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ বিমান থেকে ছড়িয়ে দেওয়া শস্যশ্যামল মাঠে ও প্রান্তরে- যাতে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় অবিলম্বে। তিনি সীমান্তের পাহারা তুলে নিয়েছেন এবং সকল দরজা খুলে দিয়েছেন- যাতে লক্ষ-লক্ষ শরণার্থী ভারতে প্রবেশ করে নতুন এক সমস্যার সৃষ্টি করে। নরপশুর দল বাঙলাদেশকে শ্মশানে পরিণত করছে, একথা বার বার বলে লাভ নেই। স্বার্থ আঘাত পড়লে মানুষ বনমানুষ হয় এবং নিরস্ত্র দুর্বল জাতিকে ধ্বংস করার নির্দেশ দিলে প্রত্যেকটি সৈন্যকেই নরপশুতে পরিণত করতে হয়।
বাঙলাদেশকে ভিখারী সমাজে পরিণত করার জন্য অপর একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন ইয়াহিয়া। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুমিল্লা, রংপুর, যশাের, পাবনা অঞ্চলের কোষাগার থেকে যাবতীয় সােনা ও কারেন্সি তিনি জাহাজ বােঝাই করে করাচি চালান দিয়েছেন এবং তার পরামর্শে বড় বড় শিল্পপতিরা নিয়ে গেছেন টন টন বােঝাই টাকা, পয়সা, ধন, দৌলত। অন্যদিকে তারই ইঙ্গিতে নরহন্তা ও নারীঘাতীর দল গ্রামে ও নগরে ঢুকে যথেচ্ছ আক্রমণ চালিয়ে সােনা, রূপা, টাকা অলঙ্কারাদি লুণ্ঠন করেছে। এর ফলে বাংলাদেশে কারেন্সির দাম কমে গিয়ে দশ টাকার নােট মাত্র দুটাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে গ্রামের পর গ্রামে ঢুকে তার সৈন্যরা সর্বাগ্রে ধানের গােলা আর চাষির ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। ইয়াহিয়া শুধু দুর্ভিক্ষ চান না, মহামারীও চান, সেজন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম প্রভৃতি শহরে হাজার হাজার গলিত মৃতদেহ তিনি সরাতে চাননি। আগামী পঞ্চাশ বছরে যাতে বাঙালী মাথা না তােলে,- রাজনীতি, শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি বিষয়ে বাঙালী যাতে নেতৃত্ব লাভ না করে সেজন্য তিনি তৎপর। যারা অবাঙালী মুসলীম লীগ পন্থী তাদেরকে তিনি পুনরায় উসকিয়ে তুলে ইতিমধ্যেই অন্তর্দ্বন্দ্ব বাধাচ্ছেন। যারা দাগী আসামী, লুটেরা, সমাজশত্রু এবং গুপ্তচরতাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে গ্রামে গ্রামে শহরে নগরে। শেখ মুজিবরের সােনার বাঙলাকে মরুভূমিতে পরিণত করতে তিনি বদ্ধপরিকর।
এই আত্মভিমানী বলদর্পী জঙ্গীশাসকের অন্ধ হিংস্রতার মধ্যে একবারও মনে হয়নি যে, পূর্ববঙ্গের। প্রাকৃতিক সম্পদ ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলিই হল পাকিস্তানের অস্তিত্বের মূল ভিত্তি। একথা অনুধাবন করতে তার দেরি হচ্ছে যে, বাঙলার প্রত্যেকটি চাষী ও শ্রমিক পাকিস্তানের অন্নদাতা এবং তারাই পাকিস্তানের সাচ্ছল্যের উপকরণ যােগায়। এই মূঢ়তার পরিণাম হল পক্ষাঘাত গ্রস্ত পাকিস্তান।
এ লড়াই চলছে এবং এখনও চলবে। এ লড়াই হল শােষক ও শােষিতের মধ্যে। একদিকে বাঙালীর চিরন্তন জাতীয়তাবাদ, অন্যদিকে স্বৈরাচারীর পর্বতপ্রমাণ দম্ভ। একদিকে মানহারা সর্বহারা ক্ষুধার্ত নিপীড়িতঅন্যদিকে নীতি ও ধর্ম বিরােধী, সভ্যতা ও মানবতাবিরােধী পাশব শক্তি। সুতরাং এ লড়াই চলবে এবং পাইকারি হারে গণহত্যাও থামবে না। জীবনপণ করা বাঙালী জাতির সঙ্গে এই হিংস্র নরপশুদলের সংগ্রাম দেখার জন্য ইয়াহিয়া যেমন নাদির শাহর তরবারি হাতে নিয়ে আস্ফালন করছেন, তেমিন তার চারিদিকে দাঁড়িয়ে জয় পরাজয় দেখার জন্য পৃথিবীর বলবান জাতিরা প্রতীক্ষা করছেন। তারা এ যুদ্ধ থামাতে চান না, কেন না বাঙালীর যুদ্ধে তারা এক হাতে যেমন ইয়াহিয়াকে অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ বিক্রি করতে চান, অন্য হাতে তেমনি ঔষধপত্র, পথ্য ও খাদ্য সামগ্রীও পরােক্ষ ভাবে বেচতে চান। সেই কারণে দেখা যাচ্ছে কয়েকটি অপ্রকাশ্য যুদ্ধ । তার একদিকে। বিশ্বের বিবেক, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক কুটনীতি। এই কূটনীতির কাছে সােনার বাঙলা তুচ্ছ। একটি সংস্কৃতিমান দেশপ্রাণ জাতীয়তাবাদী এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বাঙালী জাতির মরণপণ সংগ্রাম তুচ্ছ এবং তার চেয়েও তুচ্ছ ওই রয়েল বেঙ্গল টাইগার শেখ মুজিবর রহমান। কিন্তু বড় কথা এই সর্বাধুনিক নাদির শাহকে চটালে মধ্যপ্রাচ্য, সুদূর প্রাচ্য এবং নিকট প্রচ্যেয় রাজনীতিক পাশা খেলা জটিলতর হয়ে উঠতে পারে এই আশঙ্কা। ইতিমধ্যে একই সঙ্গে চুম্বন করেছেন ক্যুনিস্ট ও ক্যাপিটালিসটকে সেন্টো ও সিয়াটোকে, নিরপেক্ষ ও নির্বিকারকে এবং সঙ্গে সঙ্গে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন ওই ‘যত দোষ নন্দ ঘােষ” ভারতের দিকে।
ওদিকে সােনার বাঙলা অবিশ্রান্ত জ্বলছে। জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে কোটি কোটি সােনার টুকরাে । পুড়ে-পুড়ে এরা অঙ্গার ও বিবর্ণ হচ্ছে। কিন্তু ধাতুবিদ্রা জানে এই দলিত স্বর্ণকণিকায় দল শুধু দগ্ধবর্ণই হবে ছাই হয়ে যাবে না। যথাসময় আবার এদের স্বভাব-ঔজ্জ্বল্য ফিরে আসবে। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পরিণাম কালে ধৃতরাষ্ট্র যখন মুখ থুবড়ে পড়েছেন তখন সেই দৃশ্য দেখে সঞ্জয় বলেছিলেন “তােমার ভিতরের সেই অবিনশ্বর আত্মিক শক্তি যদি সত্যি হয়, তবে সেই শক্তিই তােমাকে তুলে ধরবে। তুমি নিজেই উঠে দাঁড়াও। আর ইয়াহিয়া? মহাকবি রবীন্দ্রনাথ ওঁর জন্যেও দুটি ছত্র রচনা করে গেছেন। তাহল
“রক্ত মাখা অস্ত্রহাতে যতরক্ত আঁখি। শিশুপাঠ্য কাহিনীতে থাকে মুখ ঢাকি।”
১ মে, ১৯৭১