You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অভ্যন্তরে কি ঘটছে?

এ বছরের ৬ই এপ্রিল সংখ্যায় বিচিত্রার ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনে একটি বিজ্ঞাপন ছিল নিম্নরপঃ

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রতিঃ স্বাধীনতার শত্রুরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলো, বিপুল ভোটে জয়ী হলো, এমন কি অনেকে পূর্ব হতেই ক্ষমতাসীন। আর আপনারা কল্যাণ ট্রাস্টের স….ভাগাভাগি নিয়ে ব্যস্ত। যারা স্বাধীনতার শত্রুদের প্রশ্রয় দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সময় থাকতে দুর্বার আন্দোলন শুরু করুন নতুবা ইতিহাসে মুক্তিযোদ্ধাদের স্থান আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। মুখের হাসি, স্টকহোম।

বিজ্ঞাপনে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের স…ভাগাভাগির হদিস পেয়ে বিচিত্রার পক্ষ থেকে এক অনুসন্ধান চালানো হয়। অনুসন্ধানে দেখা যায় ট্রাস্টের সম্পত্তি বিক্রি করে ১০৯টি পরিবারের জন্য ২৯.৬৯ লাখ টাকা কল্যাণ ভাতা দেয়া হয়েছে। বর্তমান অর্থবছরে এই কল্যাণ ভাতা দেয়ার জন্য আরও ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের সম্পত্তি ট্রাস্টকে বিক্রি করতে হবে নয়তো ট্রাস্টের পুজি থেকে এই দিয়ে দিতে হবে। সরকারী হিসাব অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট বর্তমান বছরে ১২ লাখ টাকার উপর মুনাফা অর্জন করে।

৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা নিহত শহীদদের পরিবারের প্রতি কল্যাণ ভাতা এবং আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা এবং দরিদ্রদের লেখাপড়ার খরচের জন্য ট্রাষ্ট কল্যাণ ভাতা দিয়ে থাকে। যুদ্ধ শেষে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য কল্যাণ ট্রাষ্ট গঠন করা হয়। গঠনকালে এর উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের কারও দয়ার উপর নির্ভরশীল না করার জন্য কতগুলো পরিত্যক্ত বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠান সমন্বয় এ ট্রাষ্ট গঠন করা হয়। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্টের আদেশ নম্বর ১৪ অনুসারে গঠিত এই ট্রাষ্ট ব্যবসায় মুনাফা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেবে এই উদ্দেশ্য নিয়ে ট্রাষ্ট গঠন করা হয়। বাংলাদেশ সরকার এর পুজি হিসাবে এক কোটি প্রদান করে। এবং নয়াদিল্লীস্থ বাংলাদেশ এ্যাসিসট্যান্স কমিটি দান করে ৫০ লাখ টাকা।

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাষ্ট এরপর ১৯৭৩-৭৪ সাল ২৬ লাখ ৫ হাজার টাকা ১৯৭৪-৭৫ সালে ৪০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা মুনাফা অর্জন করে। ট্রাষ্ট ১৯৭৪-৭৫ সালে ২২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা এবং ১৯৭৫-৭৬ সালে ২০ লাখ ৮৪ হাজার টাকা কল্যাণ ভাতা প্রদান করে। ’৭৬-এর জন পর্যন্ত প্রদত্ত ভাতার পরিমাণ ৫৬ লাখ ৭৯ হাজার টাকা।

বর্তমান বছরে ট্রাষ্টের কল্যাণ ভাতার প্রথম কিস্তি মার্চ মাসে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রাষ্টের আর্থিক দুরবস্থার জন্য সে টাকা প্রদান করা হয়েছে মে মাসে। এ টাকা ও কল্যাণ ভাতার নিয়মিত ভাতার থেকে দেয়া হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগের পর চাপে পড়ে ট্রাষ্ট কর্তৃপক্ষ মে মাসে এ টাকা প্রদান করেন। এই প্রথম কিস্তির পরিমাণ ২৮ লাখ ১৭ হাজার টাকা। এবছর কল্যাণ ভাতা হিসাবে দেয়া হবে ১ কোটি টাকার উপরে। কল্যাণ ট্রাষ্ট যদি বর্তমান বছরে মাত্র ১২ লাখ ৩১ হাজার টাকা মুনাফা করে থাকে তবে অবশিষ্ট ১ কোটি টাকা দিতে হবে ট্রাষ্টের তহবিল থেকে। ট্রাষ্টের তহবিল থেকে এটাকা মুক্তিযোদ্ধাদের বা শহীদদের পরিবারকে দেয়া হবে তাদের কোন কল্যাণের জন্য নয়। প্রকৃতপক্ষে তা হলো কতিপয় উচ্চপদ্স্থ কর্মকর্তার স্বার্থ বজায় রাখার জন্য ট্রাষ্টকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে। কারণ ট্রাষ্ট ইতিমধ্যেই কতিপয় ব্যক্তির কামধেনুতে পরিণত হয়েছে। জন্মকালে ট্রাষ্টের শিল্প ও বাণিজ্যিক বিভাগে ইউনিট ছিল ২২টি। দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে মুক্তিযোদ্ধারা যে আত্মত্যাগের মহিমায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাচার সুযোগ প্রদানের জন্য সরকার সাহায্য এবং সহযোগিতার ক্ষেত্র উন্মুক্ত রেখেছেন ঠিকেই। কিন্তু কতিপয় ব্যক্তির স্বার্থসিদ্ধির জন্য এর প্রকৃত কল্যাণ সাধিত হচ্ছেনা। এ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগের ভিত্তিতে সরকার ট্রাষ্টের অভ্যন্তরের ঘটনাবলী তদন্ত করে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। কিন্ত জানা গেছে ট্রাষ্টের কয়েকজন কর্তা এই তদন্ত কমিটিকে কোনরপ সাহা্য্য করেনি বরং যাতে তদন্ত চলতে না পারে সে ব্যবস্থা করে। অসম্পূর্ণ তদন্তের সেই প্রতিবেদনটি প্রভাবশালী মহলের চাপে ফাইল চাপা পড়ে আছে।

ট্রাষ্টের উর্ধ্বতম ব্যক্তি বা ব্যক্তি বর্গের খামখেয়ালীর জন্য প্রতিষ্ঠানটি এখন দেউলিয়া হতে বসেছে। ট্রাষ্টের লাভজনক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিতে এখন উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পথে। কারণ কোন শিল্প ইউনিটেরই ক্ষমতা নেই প্রয়োজন অনুযায়ী কাচামাল কেনার। শিল্পের জন্য কাচামাল ক্রয়ে কারচুপি করার জন্য ট্রাষ্টের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা অতিব্যস্ত। তাই ট্রাষ্টের আওতাধীন সিরকো সোপ এন্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পথে। জানা গেছে সাবান প্রস্তত করার অন্যতম কাচামাল ক্রয়ের জন্য ট্রাষ্ট টেন্ডার আহ্বান করলে প্রতি টন ৬২৯ ডলার দামের সর্বনিম্ন কোটেশন পায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পুনঃ টেন্ডার আহ্বান করেন যখন সর্বনিম্ন দর পাওয়া যায় ৬৩৯ ডলার। অর্থাৎ তল্লির মল্য ততদিনে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিটনে ১০ ডলার করে মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ার জন্য সিরকোকে ৭৫০ টন তল্লির জন্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা গচ্চা দিতে হবে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার জন্য অতিরিক্ত শুল্ক। তাছাড়া কাচামালের অভাবে উপাদন বন্ধ হওয়ার ফলে বাজার নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়াতো রয়েছেই।

১৯৭৮ সালের প্রথম দিকে সিরকো ইন্ডাষ্ট্রিজের জন্য ৪৩৮ টন তল্লি আমদানী করা হয়। এর আনুমানিক মূল্য ৭০ লক্ষ টাকা। সরবরাহকারী নিম্নমানের তল্লি সরবরাহ করে যার দাম কম করে হলেও ২ লাখ টাকা কম। এই তল্লির রাসায়নিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় যে তা উন্নতমানের ছিল না। ফলে সিরকো ইন্ডাষ্ট্রিজের ম্যানেজার সরবরাহকারীর জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করতে চাইলে ট্রাষ্টের সর্বোচ্চ কর্তা অত্যন্ত রুষ্ট হন। পরে সরবরাহকারীকে জামানতের টাকা প্রদানের ব্যবস্থা করেন।

ট্রাষ্টের একজন প্রধান কর্তার কৃপাধন্য একটি তামাক পাতা সরবরাহ প্রতিষ্ঠানকে ট্রাষ্টের সিগারেট প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড টোব্যাকো কোম্পানীর জন্য তামাক সরবরাহের নির্দেশ দানে কোম্পানীর ম্যানেজারকে বাধ্য করেন। সররবাহকারী প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের পাতা সরবরাহ করায় ফ্যাক্টরীর শ্রমিকরা তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। এবং ম্যানেজারকে তা গ্রহণ না করার জন্য অনরোধ জানান। কিন্তু ম্যানেজার উক্ত কর্তার চাপে তা গ্রহণ করতে বাধ্য হন। এই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোন নিরাপত্ত জামানত গ্রহণ করা হয়নি এবং তাকে নিয়মিতভাবে আগাম টাকা দেয়া হচ্ছে।

বর্তমানে ট্রাষ্ট যখন আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে তখন প্রতিমাসে দশ হাজার টাকা ভাড়ায় বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই এলিফেন্ড রোডে ট্রাষ্টের প্রধান কার্যালয়ের জন্য একটি নতুন কার্যালয় ভাড়া করা হয়েছে।

সম্প্রতি বাজারে কোকাকোলার অভাব দেখা দেয়। কোকাকোলা বাজারে প্রায় দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাওয়ার সময়টি হচ্ছে এ ধরনের পানীয় বিক্রির সর্বোচ্চ মওসুম। জানা গেছে কোকাকোলার বাজার নষ্ট করে কিং কোলা নামের অন্য একটি পানীয়ের বাজার সৃষ্টি করার জন্য। এজন্য কোকাকোলা বাজারজাত করণের ক্ষেত্রে বাধাও সৃষ্টি করা হচ্ছে।

ট্রাষ্টের একজন প্রধান কর্মকর্তা সরকারের অনুমোদন ছাড়াই তার নিজের বেতন নির্ধারণ করে বর্ধিত হারে বেতন নেয়া শুরু করেছেন।

অভিযোগে জানা গেছে সম্প্রতি ট্রাষ্টের কাছে ১১টি শিল্প প্রতিষ্ঠান হস্তান্তর করা হয়। এই ১১টি প্রতিষ্ঠানের মোট দায়ের পরিমাণ ৫ কোটি ৬৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা এবং ঋণ এবং ওভারড্রাফটের পরিমাণ ৪ কোটি ৫৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান মুনাফা অর্জনকারী। এ পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্জিত মুনাফার পরিমাণ ১৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে বাকি ৮টি প্রতিষ্ঠানের লোকসানের খতিয়ান নিম্নরপ ঃ

নাশিনা ট্যানারী ৭০.৬৪ লাখ টাকা
বাক্স রাবার কোম্পানী ১১.৭৩ লাখ টাকা
পারমা ইস্টার্ন লিমিটেড ২৫.৩৭ লাখ টাকা
ইউনাইটেড টোব্যাকো কোম্পানী ১.১৫ লাখ টাকা
বেঙ্গল ন্যাশনাল ট্যানারী ৬৪.৬১ লাখ টাকা
হবদেও গ্লাস এন্ড এলুমিনিয়াম সিলিকেট ওয়ার্কস ১০.৯৭ লাখ টাকা
ইস্টার্ন কেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ ৭.০৯ লাখ টাকা
মদিনা ফ্যাক্টরী ২৭.৬৯ লাখ টাকা
ফাইসন্স গ্রপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড ১৩.৪৮ লাখ টাকা
সর্বমোট ২ কোটি ৩২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা

জানা গেছে একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য উপর মহলে যাতায়াত শুরু করলে এই প্রতিষ্ঠানগুলো কল্যাণ ট্রাষ্টের কাছে হস্তান্তর করার প্রস্তাব করা হয়। ফলে সেই কর্মকর্তাকে অনুরোধে ঢেকি গিলতে হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাষ্টের বিরুদ্ধে এ সমস্ত অভিযোগ এবং সংকটের চেয়েও বড় সংকট হচ্ছে ব্যবস্থাপনায় অব্যবস্থা। এ অব্যবস্থার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা বাকি পড়ে থাকে। যা কিনা ট্রাষ্ট প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য। মুন সিনেমা হল একটি লাভজনক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান হলেও তা ব্যক্তি মালিকানায় ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। মিমি চকলেট কারখানার কর্তৃপক্ষ প্রধান কার্যালয়ের কর্তাদের কাছ থেকে উপযুক্ত সহযোগিতা পাচ্ছে না।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসচীতে যশোর এবং নাটোরে দুটো কোকাকোলা বোতলজাতকরণ কারখানা এবং সমন্বিত মাছ ধরা প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। কোকাকোলা কারখাণা দুটোর উৎপাদন ক্ষমতা থাকবে প্রতিমিনিটে ৫০ বোতল। এই দুটো কারখানার দূরত্ব উৎপন্ন সামগ্রীর জন্য পর্যাপ্ত বাজার পাবেন। তদুপরি ট্রাষ্ট অধীন ঢাকাস্থ তাবানী বেভারেজ এর উৎপাদন ক্ষমতা হচ্ছে প্রতিমিনিটে ৬০ বোতলের বোতলজাত করণ কারখানা চালু রাখা লাভজনক নয়। কারণ ব্যবস্থাপনা ব্যয় এতে বেশি পড়ে। লাভজনক হতো যশোর বা খুলনায় ১০০ বোতলের কারখানা স্থাপন। কিন্তু তা করা হয়নি। অভিযোগে জানা যায় এ কারখানা দুটো কেনার ক্ষেত্রে কিছ ঘাপলা রয়েছে।

তৃতীয় প্রকল্পটি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাষ্টের মাধ্যমে হাতে নেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ এ জন্য সরকারের মৎস্য বিভাগই উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান। দুর্বল ব্যবস্থাপনার জন্য ট্রাষ্ট এখন অর্থনৈতিক সংকটের সম্মখীন। এজন্য নাকি উপরোক্ত প্রকল্প তিনটির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ অনুৎপাদক খাতে ব্যয় করা হবে।

সম্প্রতি ট্রাষ্টের সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদন করা হয়েছে। কাঠামোতে এমন কতগুলো (ইচ্ছাকৃত কি?) রয়েছে যাতে ট্রাষ্টে ব্যাপক দুর্নীতি চলতে পারে।

কাঠামো অনুযায়ী চেয়ারম্যানের প্রত্যক্ষ আওতাধীনে ক্রয় আনা হয়েছে। এতে ইউনিটগুলোর কাচামাল এবং অন্যান্য পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের বদলে ঢিলেমি এবং দুর্নীতি ঢুকতে পার। উপরন্ত নিম্নমানে জিনিষ কিনে ফেলার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এ দুর্নীতি যাতে কোনক্রমেই ধরা না পড়ে সম্ভবতঃ এজন্যই আভ্যন্তরীণ হিসাব নিরীক্ষা বিভাগও চেয়ারম্যানের আওতাধীনে আনা হয়েছে।

চেয়ারম্যানের নিজস্ব অফিসের অফিসার ও কর্মচারী সংখ্যা স্থির করা হয়েছে অনেকটা মন্ত্রীদের অফিসের কায়দায়। তার মধ্যে রয়েছে ১ জন প্রাইভেট সেক্রেটারী, ১ জন ডেভেলপমেন্ট এন্ড কো অর্ডিনেশন অফিসার , ১ জন পাবলিক রিলেশন অফিসার, ১ জন পি এ/স্টেনোগ্রাফার, ১ জন টাইপিস্ট ২ জন পিয়ন এবং দুই জন ড্রাইভার। নিজ্স্ব অফিসের এই আয়তন থেকেই বোঝা যায় চেয়ারম্যান সাহেবকে কর্মবিমুখ এবং আয়েশি করে তোলার জন্য এই কাঠামো সৃষ্টি করা হয়েছে।

অনুরুপভাবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের খবরদারী করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের অফিস এত বেশি জনাকীর্ণ হলে যে প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না। অবশ্য এ কাঠামো সৃষ্টির অন্য কোন উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। সে উদ্দেশ্য আত্মীয়-স্বজনদের বেকার সমস্যার সমাধান। তা করাও হয়েছে। অতি সম্প্রতি কিছু লোক নিয়োগ করা হয়েছে। এ সমস্ত নিয়োগ উপর মহলকে খুশি করার জন্য বে-আইনী পথে করা।

ট্রাষ্টের বর্তমান কার্যধারা বিশ্লেষণ করলে সহজেই বোঝা যায় যে ট্রাষ্টের আসল উদ্দেশ্যেই ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন করে স্বনির্ভর হওয়ার চাইতে তা সরকারী সাহায্য বা ভর্তুকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের বদলে বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের অন্তরের জ্বালা। যেমন একজন পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাকে টঙ্গিতে একটি চাকরি দেয়া হয়। কিন্তু সেখানে যাতায়াতই ছিল তার পক্ষে দারুণ ঝুকিপূর্ণ। এবং তিনি দুর্ঘটনায়ও পতিত হন। এতে হাত ভেঙ্গে যায় তার। একদিকে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি করা হচ্ছে বৈরী ব্যবহার অন্যদিকে প্রশাসন করা হচ্ছে মাথাভারী এবং ব্যয়বহুল।

ট্রাষ্টের অতীত এমন ছিল না। সম্প্রতি এমন কয়েক জন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে যারা প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধার দিকেই নজর দিচ্ছেন বেশি। এমন অবস্থা চলতে থাকলে প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতে কোথায় দাড়াবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। অথচ এই প্রতিষ্ঠানটি বাচিয়ে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন।

এজন্য অবিলম্বে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য নজর দেয়া দরকার। দরকার এর ইউনিটগুলো প্রস্তুত দ্রব্য সামগ্রীর বাজারজাতকরণ এবং উৎপাদনের বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা। যে পণ্য ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয় যেমন সাবান, চকলেট, সিগারেট ইত্যাদি বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে উপযুক্তভাবে বিজ্ঞাপন দেয়। ব্যবস্থাপনার ক্রুটি দূর করার জন্য অবিলম্বে সরকারের সঠিক ও সুদৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া দরকার।        

[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2021/02/1979.06.15-bichitra.pdf” title=”1979.06.15 bichitra”]

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!