You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.30 | শরণার্থীর সংখ্যা দশ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে - সংগ্রামের নোটবুক

শরণার্থীর সংখ্যা দশ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে

স্টাফ রিপাের্টার- বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে আগত শরণার্থীর সংখ্যা দশ লক্ষের কোটা ছাড়িয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার মহাকরণে সরকারী সূত্রে এ খবর পাওয়া যায়। শুধু সরকারের ১৫০টি ত্রাণ শিবিরেই বুধবার পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছে ৩ লক্ষ ৬১ হাজার ৮ শত ৭২ জন। বাকিরা জায়গা করে নিয়েছেন নিজেদের আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবদের বাড়িতে।
রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী শ্রীবিজয় সিংহ নাহার এদিন সাংবাদিকদের কাছে বলেন, রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনুরােধ জানিয়েছেন বাংলাদেশের নতুন শরণার্থীদের পশ্চিমবঙ্গের বাইরে অন্য কোনও রাজ্যে অস্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করুন।
শ্রী নাহার মনে করেন, বাংলাদেশের নতুন শরণার্থীরা ওই দেশের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলেই চলে যাবেন। কিন্তু ততদিন এঁদের পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকায় শিবিরে রাখাটাও নিরাপদ নয়। কারণ প্রথমত পাক ফৌজ সীমান্তের এপারে এসেও ওদের উপর বােমাবর্ষণ করতে পারে। তা ছাড়া দীর্ঘদিন সীমান্ত এলাকার শিবিরে রাখাটাও এই রাজ্যের পক্ষে নিরাপদ নয়।
রাষ্ট্রমন্ত্রীর বেতার-ভাষণ বুধবার আকাশবাণী কলিকাতা কেন্দ্র থেকে এ বেতার-ভাষণে পশ্চিমবঙ্গের উদ্বাস্তু ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগের রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী আনন্দমােহন বিশ্বাস বলেন, লক্ষ লক্ষ মানুষ যারা ওপার বাংলা থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসতে বাধ্য হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁদের প্রতি উদাসীন হয়ে থাকতে পারে না।
শ্রী বিশ্বাস বলেন, ওপার বাংলার সাড়ে সাত কোটি স্বাধীনতাকামী মানুষের উপর পাক জঙ্গী বাহিনী গত ‘এক মাস ধরে যে নৃশংস অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে তার তুলনা নেই। বাংলাদেশের এই গণহত্যার প্রতিবাদে সারা বিশ্বের বিবেক-সম্পন্ন মানুষ সােচ্চার হয়ে উঠেছেন-প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছে সারা ভারতবর্ষ। পূর্ববাংলার মানুষ তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যে ঐতিহাসিক সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তার প্রতি গভীর সহানুভূতি ও একাত্মবােধ প্রকাশ করে ভারতীয় সংসদে সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

তিনি বলেন, যে সমস্ত সেবাপ্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে সহযােগিতা করছেন তাদের মধ্যে আছেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্, রামকৃষ্ণ মিশন, শ্রীগুরু সঙ্, কাশী বিশ্বনাথ সেবা সমিতি, মারােয়াড়ী রিলিফ সােসাইটি, হিউম্যানিটি অ্যাসােসিয়েশন প্রভৃতি। এই সব প্রতিষ্ঠানকে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, আর আর্ত মানবতার সেবায় যথাসাধ্য সাহায়্য ও সহযােগিতা নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য আবেদন জানাচ্ছি রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষের কাছে। আমরা আশা করছি সীমান্তের ওপার থেকে এই শরণার্থী আগমন অবশ্যই একটি সাময়িক ব্যাপার এবং স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে এঁরা যথাসময়েই নিজের দেশে ফিরে যাবেন।
পেট্রাপােলে ৮০ হাজার শরণার্থী নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বাংলাদেশ থেকে পেটরাপােল সীমান্ত এলাকায় প্রায় আশি হাজার শরণার্থী এই সীমান্ত এলাকায় চলে এসেছেন। তার মধ্যে সত্তর হাজারকে আটটি শিবিরে স্থান দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার বনগাঁ মহকুমায় আরও দুটি নতুন শিবির তৈরী করেছেন। চাদপাড়া ও গাড়াপােতায় এই দুটি শিবির হয়েছে।

৩০ এপ্রিল ‘৭১

সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা