বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চলে
সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত আবার জয় বাংলার পতাকা দেখলাম। গত সপ্তাহে দুদিন ধরে বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চলে কয়েকশ মাইল এলাকা ঘুরেছি। ভারতের হামজিপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের মুক্ত এলাকায় প্রবেশ করেছি। সঙ্গে কয়েকজন মুক্তিবাহিনীর বীরযােদ্ধা। গ্রামের পর গ্রাম ঘুরিয়ে একটি থানার নিয়ে গিয়ে দেখালেন। এখানে এই থানাটি বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে পেরেছেন। এখানে সপ্তাহে একদিন হাট বসছে। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম খুব বেশি। বেচাকেনা বেশ হচ্ছে। রােজা শুরু হয়েছে। তাই দোকানপাট সন্ধ্যার মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। হাটবার দখলদার বাহিনী যাতে অতর্কিতে হামলা না করতে পারে সেজন্য মুক্তিবাহিনী সজাগ। | যে থানার বসেছিলাম, তার অফিসারকে জিজ্ঞেস করলাম দেশ স্বাধীন করতে পারবেন? একটু হেসে তিনি বললেন আপনি জানেন না আমাদের দেশ গত ২৫ মার্চ থেকে স্বাধীন? থানার উপর বাংলাদেশের পতাকা দেখিয়ে বললেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমরা ওই পতাকা উড়িয়েছি।
রাত কাটিয়েছি–মুক্তিবাহিনীর একটি গেরিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রে প্রায় ১০০ জন গেরিলা শিক্ষা সমাপ্ত করে এখন পালা করে ‘অপারেশনে যাচ্ছেন।
আমি দিনাজপুর ও বগুড়া জেলার বহু জায়গায় দেখেছি মুক্তিবাহিনী রেল লাইনগুলি তুলে ফেলেছেন। রেল স্টেশনগুলি খা–খা করছে। কোন কোন রেল স্টেশনের মাথায় জয়বাংলার পতাকা দেখা যাচ্ছে দখলদার বাহিনী রাজাকার নামক যে দালাল সংগঠন খুলেছিল তাও ভেঙ্গে যাচ্ছে। টেলিফোন, টেলিগ্রামের তার কেটে দিয়ে খান সেনাদের যােগাযােগ ব্যবস্থাও সম্পূর্ণ ভেঙ্গে দেওয়া–হয়েছে। এমনকি সামরিক বাহিনী যেসব অস্থায়ী সেতু তৈরী করেছে গত সপ্তাহে একমাত্র দিনাজপুর জেলায় তা প্রায় ১০টি সেতু ধ্বংস করে দেওযা হয়েছে।
২৯ অক্টোবর ‘৭১
সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা