বাঙলাদেশে পাক গুপ্তচরদের কয়েকখানি চিঠি
নিজস্ব প্রতিনিধি। বাংলাদেশের ডাক ঘর থেকে পাচার করা এক মুঠো খামের চিঠি আমাদের হাতে এসেছে। তাতে ওখানে যে বেশ কিছু ইয়াহিয়ার পাকিস্তান সমর্থক আছে ও সক্রিয় ভূমিকায় বিচরণ করছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় । আভ্যন্তরীণ অবস্থারও পরিচয়ও পাওয়া যায়।
এখানে তিনটি চিঠি উল্লেখ করছি; একটি বাংলা অন্যটি ইংরাজি। বাংলা চিঠি, হুবহু ভুল বানান সহ, উদ্ধৃত করছি (বােঝা যাবে, কোন স্তরের লােক এই দেশদ্রোহিতায় অকুণ্ঠ; শুধু চরের দেওয়া নাম ঠিকানাটা অনুষ্কৃত রাখব) ‘ঢাকা গভর্ণর হাউজের মার্সালার এন্ড–মিনিষ্টর সাহেব সমীপেসু।
অধিনের বীনিত নিবেদন এই যে, হুজুর আপনাকে জানানাে যাইতেছে যে মুক্তি বহিনীর তিনজন লােক আছে। তাহারা চাকুরী হইতে পালাইয়া গিয়া এখন মুক্তি বাহিনীকে সাহায্য করে। তাহারা গােপনে মুক্ত বাহিনীকে প্রত্যহ খবরা খবর দিতেছে (১ম) প্রথম জনের ঠিকানা হইল। নারায়ণগঞ্জ কাচারী গল্পীর জুরেন বিস্কুট ফেক্টরীতে থাকিত। নাম (… পিতার নাম …… গ্রাম ……. পাে: …….. থানা …… জেলা ……) (২য়) দ্বিতীয় জনের ঠিকানা হইল ঢাকা সেক্রেটারী …… ফুট মিনিষ্টারের …. সেও এখন সব কিছু ছাড়িয়া কেবল মুক্তবাহিনীকে গােপনে খবরাখবর দেয়। তাহার ঠিকানা হইল (নাম) …… গ্রাম ……. পাে: ……. থানা …….. জেলা। (৩য়) তৃতীয় জন হইল করাচী হইতে পালানাে অবস্থায় গিরা মুক্তবাহিনীকে খবরাখবর দেয় এবং মুক্তবাহিনীর পরিচালনা হিসাবে কাজ করছে। তাহার ঠিকানা হইল :-গ্রাম …… পাে: …… থানা …… জেলা…… নাম ……. পিতার নাম…..। অতএব হুজুরের নিকট আমার প্রার্থনা করি এই যে, এই তিনজন লােককে যেন অতি তারাতারি উচিত মত শাস্তি দিতে হুজুর যেন আজ্ঞা হয়।
ইতি
আপনারই সাহায্যকারী
অর্থাৎ, নিজের নাম পরিচয় ঠিকানা দেয় নাই। বলা বাহুল্য তার চিঠিও উদ্দিষ্ট স্থানে পৌঁছােয় নি, পৌঁচেছে আমাদের হাতে। এই অতি উচ্চশিক্ষিত পাকচরটি ২০ পয়সার পাকিস্তানী খামে ঠিকানা লিখেছে :
East Pakistan govern house Dacca Marshalar and ministed. Dated 5-6-71
দ্বিতীয় চিঠিখানির তারিখ ১৪ই এপ্রিলের এবং পত্র লেখক স্পষ্টতই নিজেকে মুসলিম লীগের জব্বর খান বলে পরিচয় দিয়েছে। ইংরাজীতে লেখা চিঠিটির বয়ান এই রকম :
“To The Govornor East pakistan DACCA
Sir, I beg most respectfully to state that necessary action. Amlege Leader… He gave Private Rs 10,000 helf the Amlege Pradan Leader S. K. Mazibur Rahaman’s before two month and he gun and Riverball. He is very Duskariman. Plese nesesary acction. I pray to you.
He is very rich man Your faithfully Jabbar Khan Muslim Lege 14.4.71.
সেই ধনী ব্যক্তির দুটি ঠিকানা দিয়েছে, একটি অস্থায়ী, আর একটি স্থায়ী। পত্রটির মর্মার্থ হচ্ছে, এই ধনী ব্যক্তি দু‘মাস আগে আওয়ামী লীগের প্রধান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গােপনে ১০ হাজার টাকা দিয়েছে। প্রার্থনা, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বন করতে আজ্ঞা হয়।
খামে ঠিকানা :
To
Mr. Tika Khan Govrnor East Pakistan Gs Camp Dacca 2. তৃতীয় চিঠিখানিও ইংরেজিতে এবং অক্ষরগুলাে সব ক্যাপিটাল । DACCA DATE: 10th MAY 71 RIGHT INFORMATION
To,
THE GENERAL TIKKA KHAN DEAR SIR, ইত্যাদি–টেলিগ্রামের কায়দায় লেখা। মর্মার্থ হচ্ছে :-গত ৬ই মে (সুরিটোলা) লুত্যর রহমান লাইনে
গণমাধ্যম (ষষ্ঠ খণ্ড) ০ ১০
বংশাল রােডের কাছে আওয়ামী লীগ সদস্যদের (বাঙালি লােকদের) একটি ছােট গােপন সভা হয়। তারা বলে, মিলিটারী কদ্দিন ঢাকায় থাকবে? আমরা একদিন পশ্চিম পাকিস্তান ও ভারত থেকে আগত সব মুসলমানকে হত্যা করব। তখন আমরা বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে পারব।
নীচে ঐ সভার চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নাম দেওয়া হল : “গুন্ডা‘ ‘চোরাবাজারী‘ প্রভৃতি বিশেষণ–ভূষিত চারটি নাম উল্লেখ করলাম না।
পত্রলেখক লিখছে :-‘এই সব লােক পাঞ্জাবী ও বিহারীদের বেশী হেনস্তা করেছে, নবাবপুর ও বংশাল রােডে অনেক লােকের সম্পত্তি লুট করেছে। তারা এখনও বেঁচে আছে এবং ইষ্ট পাকিস্তান থেকে মিলিটারী চলে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে।
“THEREFORE IT IS MY HUMBLE REQUEST TO YOUR MAJESTY TO TAKE STERN ACTION AGAINST THESE GOONDAS.
‘আমি এই সংবাদ দিলাম কারণ তারা আমাকে এত কষ্ট দিয়েছে যে, বলবার নয়। আমি এই জমীনেরই অধিবাসী বলে ওরা আমাকে ছাড়ে নি। এর ইংরাজীটা হচ্ছে।‘
‘AS I BEING THE INHABITANTS OF THIS LAND WAS not LEFT BY THESE PEOPLE ‘এবং মুজিবের তথাকিথত ‘বাংলাদেশ‘ আন্দোলনকালে আমার ওপর অত্যাচার করেছে। আমার এই সংবাদ দেওয়ার কারণ যাতে মিলিটারী এক্ষুণি ব্যবস্থা অবলম্বন করে আর আমরা পাকিস্তানের এই অংশে মহানন্দে থাকতে পারি।
‘I HAVE GIVEN THIS INFORMATION FOR THE REASON THAT OUR MILITARY PERSONS SHOULD TAKE VERY IMIDIATE AND PROMPT ACTION AND TAKE MOST STRICT ACTION AGAINST THESE ABOVE MENTIONED LOOTERS AND GOONDAS SO THAT WE CAN LIVE HAPPILY IN THIS PART OF PAKISTAN.
|১৬ অক্টোবর ‘৭১
সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা