You dont have javascript enabled! Please enable it! আমার সােনার বাংলা-আমি তােমায় ভালবাসি পাঁচকড়ির গল্প- অরুণ বাগচী - সংগ্রামের নোটবুক

আমার সােনার বাংলা-আমি তােমায় ভালবাসি পাঁচকড়ির গল্প— অরুণ বাগচী

হঠাৎ ডিম পাড়তে শুরু করে নিরঞ্জন কাকার মুরগিটা। আমাদের বাঁধুনী বিন্দু দিদিকে বিপদে ফেলে দিয়েছিল। কারণ কাকা গুটিকয় ডিম হাতে নিয়ে এসে উপস্থিত। আদর করে আমায় খেতে দিয়ে গেলেন। এখন বিধবা বিন্দুদিদি হেঁসেলে ওই বস্তু ঢােকান কী করে? অথচ আমার মুখে তুলে না দিয়েও তার শান্তি নেই। বাবা গেছেন চরের হাঙ্গামা মেটাতে। অগত্যা বিন্দুদিদি গেলেন বেনু ছইরালের সাহায্য চাইতে। ছইরাল বুড়াে চিৎ হয়ে শুয়ে আমায় গল্প শােনাত। আমি তার চওড়া বুকের উপর বৃদ্ধ সেজে বসতাম তােফা আরামে। খকর খকর কাশি এলেই তার বুকের লােম পাকড়ে ধরে তাল সামলাতাম। তাও একদিন এমন হেঁচে উঠল সে, যে আমি চিৎপটাং। তা বেণু ছইরাল ব্যবস্থা পাকা করে দিল। রােজ সকালে ডিম সেদ্ধ করে পাঁচকড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবে। বিন্দু যেন ভাবনা না করে।

ছইরালের বড় ছেলে পাঁচকড়ি। যাত্রী নৌকা চালাত। আঙ্গাইর্যা থেকে পালং, তারপাশা, গােয়ালন্দ, পদ্মা নদীর মাঝি নয়, জলের পােকা ছিল সে। কতবার নৌকা ডুবেছে। কিন্তু পদ্মা পাঁচকড়িকে গিলতে পারেনি। ডাঙায় এলেই পাঁচকড়ি আমায় কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়াত। হাটে নিয়ে চিনির হলুদ ঘােড়া কিনে দিয়েছিল। জীবনে আস্ত ঘােড়া ওই একবারই খেয়েছি। আর খাব না, পেটে বড় ব্যথা হয়। আর খাব না। পাঁচকড়ি নেই, কে কিনে দেবে? | বেণু ছইরাল বেঁচে থাকতেই পাঁচকড়ি মরে যায়। বিন্দুদিদি যে বর্ষায় সাপের কামড়ে মরে গেল, সেই বছরই। সে বছর আমাদের পুকুর থেকে মাছ আর গাছের ডাব খুব চুরি হচ্ছিল। ওৎ পেতে থেকে পাঁচকড়ি চোরদের ধরে ফেলল। তারা সংখ্যায় আটদশজন। পাঁচকড়ি একলা। তাদের দুইজনকে শুইয়ে দিয়ে সে নিজেও পড়ল। আর উঠল না। বাবা তার কবরে মাটি দিয়েছিলেন। আসামে বসে আমি বেণু ছইরালকে লম্বা চিঠি দিয়েছিলাম। 

চোরদের ধরে ফেলল। তারা সংখ্যায় আটদশজন। পাঁচকড়ি একলা। তাদের দুইজনকে শুইয়ে দিয়ে সে নিজেও পড়ল। আর উঠল না। বাবা তার কবরে মাটি দিয়েছিলেন। আসামে বসে আমি বেণু ছইরালকে লম্বা চিঠি দিয়েছিলাম। | তার পাশার ইষ্টিমার বাড়ির ঘাট ছুঁয়ে ভো বাজিয়ে চলে যাচ্ছে, এই স্বপ্ন আজও দেখি। পাঁচকডির নৌকো বিষন্ন গাবের আঠা ভিজিয়ে একলা ঢেউ তুলতে বেরিয়েছে এই ছবিটাও চোখে ভাসত অনেককাল । কদিন থেকে ভাবছি, বেঁচে থাকলে বেণু ছইরালের ছাওয়াল নিশ্চয় মুজিবের ফৌজে নাম লেখাত। হয়তাে। আমাদের কাগজেই তার ছবি দেখতে পেতাম।

৫ এপ্রিল, ১৯৭১

(আনন্দমেলা!

আনন্দবাজার পত্রিকা

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খন্ড -০৭