You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: ৬ই এপ্রিল, শনিবার, ২৩শে চৈত্র, ১৩৮০

সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করুন

মজুতদার, মুনাফাখোর ও কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য গত পরশুদিন গণ ঐক্যজোট এক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গণ ঐক্যজোটে কেন্দ্রীয় কমিটির এক জরুরি সভায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষ আমন্ত্রণে আমাদের খাদ্য মন্ত্রী গণ ঐক্যজোটের আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও খাদ্য পরিস্থিতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে আলোচনা হয়েছে এবং খাদ্যদ্রব্য সংকটের কারণ যারা তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়। জানা গেছে মজুতদার, মুনাফাখোর ও কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে নাকি আপোষহীন সংগ্রাম শুরু হবে। মানুষের দুঃখ কষ্ট লাঘব করাই এর উদ্দেশ্য ঐক্য জোটের বৈঠক গতকাল সন্ধ্যায়ও আবার বসেছিল। মজুতদার, মুনাফাখোর উচ্ছেদ আন্দোলন শুরু করার কথাটি বহুদিন ধরে আমরা বিভিন্ন সময় লক্ষ্য করছি। বিভিন্ন নেতা এ কথাটি বলেছেন। আওয়ামী লীগ, মোন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টি এবং সর্বোপরি গণ ঐক্যজোট এ ব্যাপারে বহুবারই আন্দোলনের কথা বলেছেন। কিন্তু আজ অবধি আন্দোলনের রূপরেখা আমরা দেখিনি। সরকারি তরফ থেকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা গ্রহণ করাও হয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে তেমন চোখে পড়ার মতো কোনো ঘটনা বা পদক্ষেপ গ্রহণ দেশের মানুষ দেখতে পায়নি। আজ দ্রব্যমূল্যের পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে এসে পড়েছে যে আন্দোলন শুরু করার কথা বললে আর অপেক্ষা করার সময় নেই। আর দেশের দুঃখী মানুষের যে প্রাণান্ত অবস্থা তাতে করে কোন প্রকার আশার বাণী ও তাদের কাছে আজ ভরসা বার্তা নিয়ে আসবে না। অতএব যদি সত্যিই মজুতদার, মুনাফাখোর ও কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করার কোনো বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের ইচ্ছা থাকে তাহলে এখনি এবং এই মুহূর্ত থেকে তা শুরু করতে হবে জনজীবনে আজকে হতাশার সাগরে নেমে এসেছে তার থেকে পরিত্রান না হোক আশাবাদী হবার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি করা সম্ভব যদি ঐক্য বদ্ধ ভাবে ঐ সকল সামাজিক শত্রুদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা যায়। আমরা জাতির অত্যন্ত মর্মান্তিক অবস্থা প্রত্যক্ষ করে নিদারুণ উদ্বিগ্ন সত্যিকার অর্থে জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এটাই আমাদের কাম্য।

কাপড় বন্টনে কারচুপি

দেশের সার্বিক বন্টন ব্যবস্থা যে নৈরাজ্য চলছে দেশে উৎপাদিত কাপড় এর ক্ষেত্রেও তা বাদ থাকেনি। তাই দেশের মিলেও যে কাপড়ের উৎপাদন খরচ প্রতি পাঁচ টাকা পড়ে সেই কাপড়ে জনগণকে খোলাবাজার থেকে নিতে হয় প্রতি বারো টাকা দামে। যে লুঙ্গির উৎপাদন মূল্য দাঁড়ায় সাত টাকা, খোলাবাজার থেকে তা কিনতে হয় বিশ টাকায়। কারণ সেই একই। বন্টন ব্যবস্থায় অব্যবস্থা এবং তার জন্যই সে অদৃশ্য কালো হাত। উৎপাদকদের কাছ থেকে সাধারণ মানুষের কাছে তথা ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে যে অনাবশ্যক দশটি হাত ঘোরে, তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিশন এবং অতিরিক্ত মুনাফা আদায়ের লিপ্সা, তার শিকারে পড়েই আজ দেশে উৎপাদিত পণ্যকেও কিনতে হয় শতকরা তিন থেকে চার,শ ভাগ বেশি দামে।
দেশীয় কাপড় উৎপাদন, তার উৎপাদন মূল্য ও বন্টন ব্যবস্থায় অব্যবস্থা জনিত ব্যাপার-স্যাপার সম্পর্কে গতকালকের এক সহযোগিতায় বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে যে, সুষ্ঠু বন্টন ব্যবস্থা না থাকায় দেশে উৎপাদিত কাপড় খোলা বাজারে দুই থেকে চার গুণ অধিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ টেক্সটাইল কর্পোরেশনের অধীনস্থ ৪৬টি মিল থেকে উৎপাদিত কাপড় সরকারি নির্দেশে সরাসরি মিল থেকে ভোগ্যপণ্য সংস্থা ও (অস্পষ্ট) নির্ধারিত ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে থাকে। খোলা বাজারে খুচরা দোকানে এসব কাপড় ভোগ্যপণ্য সংস্থা ও নির্ধারিত ব্যবসায়ীরা বিলি ব্যবস্থা করে থাকে। কিন্তু সুষ্ঠু ও দুর্নীতিমুক্ত না হওয়ায় এসব কাপড় দশ হাত ঘুরে বাজারে আসে এবং প্রকৃত মূল্যের চাইতে প্রতি গজ কাপড়ের দাম বেড়ে যায় দু থেকে চার গুণ বেশি। দেখা গেছে যে প্রতি মাসে বিভিন্ন ধরনের ৭৯ লাখ গজ কাপড় উৎপাদন হয়ে থাকে। আর মাথাপিছু কাপড়ের চাহিদা দশ গজ। মোট চাহিদার শতকরা ৫৫ ভাগ দেশে উৎপাদিত হয়ে থাকে, এবং বাকিটা আমদানি করতে হয়।
বর্তমানে দেশের যেসব কাপড় তৈরি হচ্ছে এবং উৎপাদক পর্যায়ে তার যে খরচ পড়ছে, উক্ত প্রতিবেদনে তারও একটি সঠিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, প্রতিনিয়ত মিলে পাঁচ টাকা এবং বাজারে বারো টাকা থেকে ষোল টাকা, মার্কিন মিলে চার টাকা এবং বাজারে দশ টাকা, ছাপা বাওয়ানি মিলের লুঙ্গি মিলে সাত টাকা এবং বাজারে বিশ টাকা, বলাকা পপলিন মিলে ছ’টাকা আশি পয়সা এবং বাজারে বিশ, আদি মিলে সাত টাকা পঁচিশ পয়সা এবং বাজারে তেইশ টাকা, ডিল মিলে ছ’টাকা ত্রিশ পয়সা এবং বাজারে পনেরো থেকে বিশ টাকা, ধুতি মিলে তিন টাকা চল্লিশ পয়সা এবং বাজারে দশ টাকা। বাওয়ানী মিলের ছাপা শাড়ি মিলে প্রতিবাদ পাঁচ টাকা উনপঞ্চাশ পয়সা দরে হলেও বাজারে প্রতি পাঁচ গজের একখানা শাড়ির দাম কোনমতেই চল্লিশ টাকার কম নয়। তাছাড়া নাইলন ক্যারোলিন শাড়ি প্রতি গজ মিলে যথাক্রমে চল্লিশ টাকা থেকে একশত আটাশ টাকার মতো হলেও খোলাবাজারে তা কোন মতেই তিনশত টাকার কম নয় উপরে ছ’ থেকে সাতশ’ টাকা। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে খোলাবাজারে অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব কাপড় বিদেশ থেকে আমদানিকৃত বলে জনগণকে ধোঁকা দিয়ে বেশি মুনাফা লোটে।
উপরের হিসেবটিতে কাপড়ের মিল মূল্য ও বাজারমূল্যের যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে তার একমাত্র কারণ বন্টন ব্যবস্থায় নৈরাজ্য ও অব্যবস্থা। কাপড় মিল থেকে সরাসরিভাবে বাজারে আসে না, আসতে পারেনা। ভোগ্যপণ্য সংস্থা ন্যায্য মূল্যের দোকান কর্পোরেশনের ব্যাপার-স্যাপার ছাড়াও আরো অনেক অদৃশ্য কালো হাত এর পেছনে কাজ করে। তাদের কমিশনই অনেক ক্ষেত্রে খাজনার চেয়ে বাজনার মাশুল বেশি হয়ে দেখা দেয়। স্বাধীনতার পর থেকে আমরা কাপড় সংকটে জর্জরিত। নিজের দেশের কাপড়ের ক্ষেত্রে যদি এসব চলে তবে অবস্থাটা ‘বল মা তারা দাড়াই কোথা’-হয়ে যায় না নাকি? কতৃপক্ষ এদিকে কিসু নজর দেবেন?

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!