দেখে এলাম— দুলেন্দ্র ভৌমিক
ইছামতী পেরিয়ে বনবাদাড় আর মেঠো পথ ভেঙে ভেঙে আমরা কয়েকজন এগাচ্ছিলাম অদম্য উৎসাহে। বুকের মধ্যে টগবগ করে ফুটছে আবেগ, তাতেই চাপ পড়ে যাচ্ছে চৈত্রের রৌদ্রে পথচলার ক্লান্তি। সীমান্তের এপারে জমায়েত হাজার হাজার মানুষের কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি তখনাে শােনা যাচ্ছিল। সীমান্তে এ যেন এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। কেউ আবেগে কাঁদছেন, কেউ চিৎকার করে শ্লোগান দিচ্ছেন। যুবকরা তাে কিছু একটা করার জন্য মরিয়া। চোরাপথে আমরা যাচ্ছিলাম, লাখাে শহীদের খুনে লাল স্বাধীন বাঙলাকে দেখতে, সর্বাঙ্গে সেই বাঙলার পবিত্র ধূলি মাখতে। অনেক পথ আর পরিখা পেরিয়ে অবশেষে দেখা মিলল কয়েকজনের। গরিব ক্ষেত মজুর আর দিন মজুরের কয়েকটি ঘর। আমাদের দেখে ওরা সবাই মিলে বেরিয়ে এলেন উঠোনে। আমরা এগিয়ে গিয়ে ওঁদের বুকে বুক লাগালাম। আলিঙ্গনের সেই স্বাদ আজীবন আমার রক্তে যেন লেগে তাকে। বললাম, লড়াই হচ্ছে কতদূরে?
ওঁদের মধ্যে সবচেয়ে যিনি প্রবীণ, তিনি বললেন, আরাে পনেরাে মাইল গেলে তবে দ্যাখন যাইবাে। যদি ওরা লড়াই করতে করতে এখানে চলে আসে? বুকের পাঁজর দিয়া রুইখ্যা দিমু ফৌজেরে।। খালি হাতে পারবেন ওদের সঙ্গে? না পারি তাে মরুম। মইরা মইরা রাস্তা আটকাইয়া ফ্যালামু। কলিজার খুন থাকতে হুমুন্দির পুতেগরে গ্রামে ঢুকতে দিমুনা। কিছু যদি না পারি তাে মরণের আগে উয়াগাের মুখে একদলা ছ্যাপ তাে দিতে পারুম।
৬ এপ্রিল, ১৯৭১
(আনন্দমলা)
আনন্দবাজার পত্রিকা
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খন্ড -০৭