ওদের সংগ্রামের দিকে তাকিয়ে আমরা (৩)— শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়
পূর্ব থেকে উত্তর, উত্তর থেকে পশ্চিম- সমগ্র বাংলাদেশ আমি আজন্ম বারংবার দেখেছি। পূর্বে ছিল আমার দেশ, উত্তরে আমার এখনকার বসতি, পশ্চিমে আমার জীবিকা। এইভাবে বাংলাদেশ গাঢ় হয়ে মিশেছে আমার ছড়ানাে অস্তিত্বগুলির সঙ্গে। বয়স, অভিজ্ঞতা এবং স্বার্থবুদ্ধি বাড়লে মানুষের ভাবাবেগ কমে যায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, আজও জন্মভূমির প্রতি আমার বালকোপম, তীব্র আবেগপুর্ণ এক ভালােবাসা টের পাই । অথচ সােনার বাংলা আমি কখনও দেখিনি, আমার কল্পনাতেও আসেনা শান্ত স্নিগ্ধ বাংলাদেশের কোনাে ছবি। চেতনালাভের পর থেকেই দেখেছি ক্ষুধা, বিক্ষোভ, হত্যা এবং আত্মহনন। এইসবের আড়ালে আমার নির্জীব। যৌবন প্রায় শেষ হয়ে এল। এই দেশের জন্য আমি কিছুই করিনি। হয়তাে বা জন্মভূমির প্রতি আমার যে ভালােবাসা, তা দুর্বলের ভালবাসা। মূল্যহীন। নিজের নানা অক্ষমতার কোটরে বসে আছি আজও- অদূরে কুরুক্ষেত্র- ন্যায় ও ধর্মের যুদ্ধ। আমি কিছুই করতে পারিনি, কিন্তু আমার মন অবিরল প্রার্থনা করেবাংলাদেশ এবার মুক্ত হােক। বাঙালীর ভালবাসা পাক দুর্ভাগ্য বাংলাদেশ।
৪ এপ্রিল, ১৯৭১
আনন্দবাজার পত্রিকা
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খন্ড -০৭