শরণার্থীর স্রোতে পূর্ব ভারত বিপন্ন, কিন্তু সমাধানের পথই বা কী?
বাংলাদেশের শরণার্থীর চাপে পশ্চিম বাংলা ও ত্রিপুরা রাজ্যের কতগুলাে সীমান্ত জেলার প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। ইতিমধ্যে পশ্চিম বাংলায় ৪০ লাখ এবং ত্রিপুরায় ১০ লাখ শরণার্থী এসে আশ্রয় নিয়েছেন। এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর আশ্রয়, খাদ্য ও স্বাস্থ্যরক্ষা ও সেবা করার মতাে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা স্বল্প সময়ে গড়ে তােলা বাস্তবে সম্ভব নয়। তাই যুদ্ধকালীন জরুরী ব্যবস্থা অবিলম্বে ভারত সরকার গ্রহণ না করলে পশ্চিমবাংলা, ত্রিপুরা, আসাম ও মেঘালয়ের অর্থনীতি, সমাজ ব্যবস্থা এবং আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি আরও জটিল ও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে বাধ্য।
দেশ বিভাগের দিন থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পূর্ববাংলা থেকে যেখানে সরকারি হিসাবে মতাে ৪২ লাখ উদ্বাস্তু এসেছিলাে, সেখানে মাত্র দু-মাসে ৫৫ লাখ শরণার্থী পূর্ব বাংলা থেকে ভারতে প্রবেশ করেছে। এখনও আসছে। বন্যার স্রোতের মতাে পূর্ব বাংলার সর্বহারা শরণার্থীরা দলে দলে ভারতে আসছে আশ্রয়ের সন্ধানে।
একমাত্র পশ্চিম বাংলার পশ্চিম দিনাজপুর জেলায় ১৩ লাখ শরণার্থী এসেছে। ঐ জেলার মােট জনসংখ্যা সাড়ে ১৮ লাখ। ২৪ পরগণার বসিরহাট শহরে যেখানে মােট জনসংখ্যা ৬৩ হাজার, সেখানে ২ লাখ ৭৫ হাজার শরণার্থী এসেছেন, বনগাঁ শহরে যেখানে জনসংখ্যা ৫১ হাজার সেখানে ২ লাখ ৭৪ হাজার শরণার্থী এসেছে। এর অর্থ এই দুটি সীমান্ত শহরে গত দু-মাসে মােট জনসংখ্যা (শরণার্থীসহ) কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। নদীয়া জেলায় প্রায় তিন লাখ শরণার্থী এসেছে। ঐ জেলায় মােট জনসংখ্যা ২৫ লাখ। কোচবিহার জেলায় প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার শরণার্থী এসেছে। ঐ জেলায় মােট জনসংখ্যা ১৪ লাখ ১২ হাজার। ফলে, কোচবিহার, পশ্চিম দিনাজপুর, নদীয়া এবং ২৪-পরগণার বসিরহাট ও বনগাঁ এলাকাই শরণার্থীর চাপে ভারাক্রান্ত।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ৪ জুন ১৯৭১