You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.02 | অগ্নিগর্ভ ‘বাংলাদেশ’- তরুণ চট্টোপাধ্যায় | দর্পণ - সংগ্রামের নোটবুক

অগ্নিগর্ভ ‘বাংলাদেশ’
তরুণ চট্টোপাধ্যায়

ঠিক মনে নেই, ১৯৬০ কি ১৯৬১। পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দু ও মুসলমান ছাত্রদের এক প্রতিনিধিদল জনাব আয়ুবের সঙ্গে মােলাকাত করেন ঢাকায় কিছু অভাব অভিযােগের সুরাহার জন্য। আয়ুব বেশ গরম মেজাজে বলেন : তােমাদের অভাব অভিযােগ নিয়ে আমি মাথা ঘামাব, এটা প্রত্যাশা কর কোন লজ্জায়? আমি নিশ্চিত জানি যে, অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তান থেকে খসে পড়ার মতলব আছে তােমাদের।’
জনাব আয়ুবের ধারণা যে একেবারে ভিত্তিহীন ছিল না তার প্রমাণ পূর্ব বাংলার বর্তমান অগ্নিগর্ভ ঘটনাবলী। আগেকার আর একটি প্রমাণও আছে। আশি জন শহীদ ছাত্রের আত্মার অজেয় ব্যারিকেড আয়ুবের পশ্চিম পাকিস্তানের মাতৃভাষা উর্দুকে রাজভাষা হয়ে পূর্ব পাকিস্তানে হানা দিতে দেয়নি (আমরা ভারতীয়রা কিন্তু হিন্দী চাপাতে দিয়েছি)। পাকিস্তানের বাঙালিদের (হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে) এই জাতীয়তা জাত্যাভিমান (শভিনিজম) নয় সেই সুস্থ জাতীয়তা যা হচ্ছে আন্তর্জাতিকতার ও বহুজাতিক সংহতির আবশ্যিক উপাদান। এ জাতীয়তা বাঙালির জাতীয় সত্তা, মাতৃভাষা ও সংস্কৃতিকে অবলুপ্তির থেকে বাচাবার জন্য জাতীয়তা।

পশ্চিম ও পূর্ব
এটা আজ অনস্বীকার্য যে পূর্ব বাংলার মুসলমান মেহনতী জনগণ ও সাধারণ ব্যাপারিরা নিজেদের দুই দশকাধিক ব্যাপী অভিজ্ঞতা থেকে উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন যে, ইসলাম রাষ্ট্র তাদের কোনাে সমস্যার সমাধান করতে পারেনি ও পারবে না এবং ধর্মের সঙ্গে সামাজিক জীবনযাত্রার কোনাে সম্পর্ক নেই। সুতরাং বলা যায় যে, সেখানে বাস্তব অবস্থা বিপ্লবের পক্ষে আজ প্রায় পরিপক্ক। বলতে পারেন তাহলে বুর্জোয়া নির্বাচনের প্রহসনের কী দরকার ছিল? হ্যা ছিল, কারণ ভারতে যে ক্ষেত্রে বুর্জোয়া পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের সুদীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে এবং লােকে ক্রমশ বুঝছেন যে, ভােটের দ্বারা কিছু হবে না সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানে রয়েছে নগ্ন বুর্জোয়া স্বৈরতন্ত্রের (সশস্ত্র বাহিনী এই তন্ত্রেরই আজ্ঞাবহ) ঐতিহ্য। তাই সেখানে বুর্জোয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মানে বিপ্লবের দিকে এক কদম প্রগতি- স্বৈরতন্ত্র থেকে বুর্জোয়া গণতন্ত্র।
আর একটি বিচার্য প্রশ্ন, পাকিস্তান কি একটি জাতি, একটি সংহত রাষ্ট্র? এই প্রশ্নটির বিশদ আলােচনার প্রয়ােজন বলে এটি নিয়ে অন্য একটি প্রবন্ধ লেখা যাবে। আপাতত এটা বলা দরকার যে, দুনিয়ায় এমন কোনাে রাষ্ট্র বা জাতি নেই পাকিস্তান ছাড়া, যার ভৌগােলিক অবস্থান অন্য রাষ্ট্রের অঞ্চলের দ্বারা দ্বিখণ্ডিত। দুটি খণ্ডের মধ্যে হাজার মাইল ব্যবধান। কোথাও কোনাে সংযােগ বিন্দু নেই যা শাসক পশ্চিম খণ্ড থেকে শাসিত পূর্বখণ্ডে সৈন্যসামন্ত পাঠাবার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শাসক জাতির বাসভূমি থেকে শাসিত জাতির বাসভূমির এই ধরনের দূরত্ব থাকে শুধু সাম্রাজ্যভােগী দেশ ও তার সাম্রাজ্য বা উপনিবেশের মধ্যে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে পাঞ্জাব খণ্ড ও বাংলা খণ্ডের সম্পর্ক কি ঐ ধরনের? কাগজে কলমে ও নামে না হলেও কার্যত ঐ ধরনেরই বটে। পাকিস্তানের কৃষিজাত পণ্য যেমন খাদ্যশস্য, পাট, প্রভৃতি মাছ, দুধ ও অন্যান্য খাদ্যের বেশির ভাগ উৎপন্ন হয় পূর্ব বাংলায়। পাকিস্তানের রপ্তানি বাণিজ্যের (অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রা লাভের) মেরুমজ্জা হচ্ছে পূর্ববাংলার পাট। পাকিস্তানের রাজস্বেরও বেশিরভাগ আসে পূর্ববাংলা থেকে। যে পাঁচটি প্রদেশ নিয়ে পাকিস্তান রর অধিকৃত অঞ্চল বাদে) সেগুলাের মধ্যে চারটি পশ্চিম পাঞ্জাব, উ: প: সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধু ও বেলুচিস্তান রয়েছে পশ্চিম খণ্ডে। পশ্চিম পাঞ্জাব বাদে বাকি তিনটি জনবহুল নয় ও উষর। পশ্চিম পাকিস্তানের মােট আয়তন তিন লক্ষ দশ হাজার চারশ তিন বর্গমাইল, মােট লােকসংখ্যা সাড়ে চার কোটির মতাে। পূর্ববাংলার আয়তন মােটে পঞ্চান্ন হাজার একশ ছাব্বিশ বর্গমাইল, কিন্তু লােকবল সাত কোটি। সর্বসাকুল্যে পাকিস্তানের বাসিন্দা সাড়ে এগারাে কোটি। পূর্ব বাংলার অরণ্যসম্পদ সামান্য নয়, বছরে সত্তর হাজার টন মাছ ধরা হয়। পশ্চিম পাকিস্তানে কাশ্মীর ও সীমান্ত প্রদেশের সংলগ্ন পশ্চিম পাঞ্জাবের সামান্য এলাকায় কিছু বনজঙ্গল আছে, মাছ ধরা হয় বছরে বাষট্টি হাজার টন। পশ্চিম পাকিস্তানে গম হয় প্রচুর, চা, পাট ও ধান হয় না, হয় জোয়ার, তুলাে, আখ ও সামান্য তামাক। পূর্ব বাংলায় উৎপন্ন হয় প্রধানত ধান ও পাট, সামান্য চা, তুলা ও তামাক। খনিজ সম্পদ বলতে পশ্চিম পাকিস্তানে আছে সামান্য পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, লিগনাইট ও বকসাইট। পূর্ব পাকিস্তানে খনিজ সম্পদ বিশেষ কিছু এখনাে পাওয়া যায়নি। কারখানা শিল্প পশ্চিম পাকিস্তানে আছে কাপড়ের, পশমের, চিনির, সিমেন্টের, চীনামাটির এবং জাহাজ নির্মাণের। পূর্ব বাংলায় আছে পাট ও বস্ত্র শিল্প।
হাজার মাইল দূরে অবস্থিত অন্য রাষ্ট্র-পরিবেষ্টিত পকেট পূর্ব পাকিস্তানের যাবতীয় জাতীয় ও প্রাকৃতিক সম্পদ অধিকাংশ রাজস্ব এবং বড় বড় ব্যবসা ও চাকরি ইসলামাবাদের কুক্ষিগত থাকার সঙ্গে পরাধীন আমলের ভারতের যাবতীয় সম্পদ গ্রেট ব্রিটেনের কুক্ষিগত থাকার মধ্যে কার্যত বিশেষ কোনাে তফাত আছে কি, আছে কি তফাত পশ্চিম বাংলা ও কেরলের চা, পাটশিল্প, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প,কফি ও কাজুবাদাম রপ্তানির দ্বারা নয়াদিল্লীর অধিকাংশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বিশেষ কোনাে পার্থক্য? অথচ পাকিস্তানের ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দৌলতখানা থেকে পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার ভাগে যা পড়ে তা কেন্দ্রীয় সরকার দুটির এই রাজ্য বা প্রদেশগুলাে থেকে শােষণ করা সম্পদের অনুপাতে অনেক কম। পূর্ববঙ্গের লােকসংখ্যা বেশি হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য অনেক বেশি অর্থ বরাদ্দ করা হয়। এই হচ্ছে অবস্থা।

পশ্চিম ও পূর্ব বাংলা
আজ পূর্ব বাংলার বাঙালিরা যে বিদ্রোহী দেশপ্রেমিক সংগ্রামে নেমেছেন সারা বাংলার বিপ্লবী ঐতিহ্য তাতে পুনঃসজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। পশ্চিম বাংলা সেই ঐতিহ্য বর্জন করেছে বহুকাল। ভােটযােদ্ধা আমাদের লজ্জা রাখবার জায়গা নেই। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে আসুরিক সশস্ত্র পুলিশ-মিলিটারি রাজ কায়েম করা হয়েছে মুৎসুদ্দী একচেটিয়া বৃহৎ পুজি-ভূস্বামী শাসক শ্রেণীগুলাের কায়েমী স্বার্থ ও চরম মুনাফা অক্ষত রাখার মতলবে, যে স্বার্থ ও মুনাফার ফাড়ির প্রহরার দণ্ডায়মান ইন্ডিকেট শাসক কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় সরকার স্বয়ং তাঁদের সমস্ত সশস্ত্র শক্তি নিয়ে, সিন্ডিকেট কংগ্রেস, স্বতন্ত্র পার্টি বা জনসংঘ নয়। আজকের এই ঐতিহাসিক ক্ষণে ইতিহাসেরই অমােঘ সমাজের গতির নিয়মাবলী শাসক কংগ্রেসের মালিক শ্ৰেণীগুলাে ও পরােক্ষ সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থরক্ষার ক্ষমতায় কুরে কুরে ঘুণ ধরিয়ে দিয়েছে বলে অকালে এই নির্বাচনীবােধন।
তিন তিনটি কমিউনিস্ট পার্টি আমাদের দেশে কিন্তু একটিরও একজনও নেতা বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক ও নাগরিকাধিকারের উপর রাষ্ট্রপতির শাসনের মার্কামারা নগ্ন বুর্জোয়া স্বৈরতন্ত্রের আজ্ঞাবহ পুলিশ-মিলিটারির বন্দুক ও বুট জুতার হামলার বিরুদ্ধে, বিনাবিচারে, বিনা পরােয়ানায় যাকে মর্জি আটক রাখার, আটকদের অমানুষিক দৈহিক নির্যাতনের এবং পিটিয়ে ও গুলি করে খুন করার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানাের জন্য জনতার ব্যুহরচনার কথা উচ্চারণ পর্যন্ত করেননি! এরা ন্যাকা মােটেই নন এবং খুব ভালাে করেই জানেন যে, আজকের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হচ্ছে বাংলার মানুষের গণতান্ত্রিক নাগরিকাধিকার পুনরুদ্ধার করা এবং সেটাই এখন জনবিপ্লবের একমাত্র উপক্রমণিকা।
মুজিবুরের পার্টি লেনিনবাদের দ্বারা পরিচালিত নয়, জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ। মুজিবুর নেতৃত্ব বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক তথা জাতীয় গণতান্ত্রিক অধ্যায়ের শেষ পর্যন্ত যাবেন কিন্তু তারপর জনগণতন্ত্রের অধ্যায়ে পা দেবেন কিনা সেটা লেনিনবাদী আদর্শের ভূমিকার মানের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু ভারতের কমিউনিস্ট নেতৃত্ব (এম এল বাদে) আজও ইন্ডিকেটের বুর্জোয়াদের মধ্যে প্রগতির চিহ্ন দেখতে পান। কিন্তু ওটা প্রগতির চিহ্ন নয়, মৃত প্রগতির ভূতের চিহ্ন।
শেখ মুজিবুর রহমানের চার দফা দাবি জাতীয় স্বশাসনের দাবি যার অনুপ্রেরণা শ্রেণী চেতনা ততটা নয়, যতটা সমস্ত মানুষের জাতীয়তাবােধ (সুস্থ)। এইটি শেখের সঙ্গে জনগণের একমাত্র মিলনক্ষেত্র। শেখ মুজিবুর হচ্ছেন শােষিত বাঙালি জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণীর প্রতিনিধি। প্রগতি ও আত্মবিকাশের সুযােগ পায়নি বলেই ঐ শ্ৰেণী আজকের বৈপ্লবিক আন্দোলনের সমর্থক। কিন্তু জনতা যখন পুঁজিবাদের চৌহদ্দি ডিঙিয়ে যাবার জন্য তৈরি হবে তখন শ্রেণীটির ধনিষ্ঠ অংশ আন্দোলনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, এটাই অভিজ্ঞতার শিক্ষা। তাদেরই প্রতিনিধি শেখ মুজিবুর তখন ব্যারিকেডের কোন পাশে থাকবেন সেটা ভাববার বিষয়। বক্তৃতায় মুজিবুর অনেক বৈপ্লবিক সত্য বলেছেন, বাঙালি জাতীয়তার ভিত্তির পর দাঁড়িয়ে। কিন্তু আসল পাপীদের তিনি সামরিক চক্র’ ও ‘সংখ্যালঘু বলেছেন, বণিক ও মুৎসুদ্দী বুর্জোয়া শ্রেণী ও তালুকদার গােষ্ঠীর নামই করেন নি অথচ ‘চক্রটি তাদেরই সিপাই সান্ত্রী।

বাংলাদেশের সশস্ত্র বিপ্লবে জাতীয়তাবাদ ও শ্ৰেণী-সংগ্রাম একাকার
পূর্ব পাকিস্তানের নতুন নামকরণ অনুযায়ী বাংলাদেশের সশস্ত্র বিপ্লবে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন আর শ্রেণী সংগ্রাম একাকার হয়ে গেছে। সেখানকার মানুষের আজকের সশস্ত্র বিক্ষোভ দীর্ঘ শ্রেণী সংঘর্ষ ও সংঘাতের এক অনিবার্য পরিণতি। এই সংগ্রামে শােষিত মানুষের জয় অবশ্যম্ভাবী-কারণ শ্রেণী সংগ্রাম তখনই জয়যুক্ত হয় যখন এই সংগ্রাম জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিকাশ লাভ করে। পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেণী সংগ্রাম যেখানেই জয়যুক্ত হয়েছে, সেখানেই এই সংগ্রাম উগ্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের আকারে ব্যাপকতা লাভ করেছে। শ্রেণী সংগ্রাম যদি জাতীয় আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তবে সে সংগ্রাম পরাজিত হতে বাধ্য। চীন, কিউবা, আলজেরিয়া এবং ভিয়েতনামের সংগ্রামের ইতিহাস এই তত্ত্বের সাক্ষ্যবহ।
মনে রাখা দরকার যে, বাঙালি মুসলমান, বিশেষ করে পূর্ববঙ্গের অধিবাসীরাই মুসলিম লীগের পাকিস্তান আন্দোলনকে সাফল্যের পথে নিয়ে গেছে। স্বাধীনতার আগে এখানকার মুসলমান নিজের সত্তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে হিন্দু প্রভুত্বের বিরুদ্ধে। এই আন্দোলনে ব্যাপকভাবে সাড়া দিয়েছে মুসলমান চাষী। এই সাড়া শুধুমাত্র ধর্মীয় আবেগের প্রতিফলন বলে রায় দেয়া নিছক সরলীকরণ। তখনকার অখণ্ডিত বাংলায় জমিদার, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, উকিল, ডাক্তার, আর সমাজের প্রতিপত্তিশালী সবাই প্রায় হিন্দু। জাতি বিভক্ত হিন্দু সমাজে, পূর্ববঙ্গের মুসলমান ভূমিহীন কৃষকের ভাগ্যে জুটেছে শােষণ, অবমাননা আর সম্পূর্ণ ব্যক্তিসত্তা লােপ। তাই যখন পাকিস্তান, অথবা পৃথক মুসলিম রাজ্যের, শ্লোগান ১৯৪০ সালে ফজলুল হক মুসলিম লীগ কনফারেন্সে তুললেন পূর্ববঙ্গে এই আবেদন এক অভূতপূর্ব সাড়া জাগালাে। অখণ্ডিত ভারতবর্ষের অন্য কোথাও মুসলিম জনসাধারণের সমর্থনের ব্যাপকতা পূর্ববঙ্গের সঙ্গে কোনাে ক্রমেই তুলনীয় নয়। ১৯৪৬ সালের মুসলিম লীগের প্রত্যক্ষ আহ্বান বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে যে সাড়া জাগিয়েছিল তা অন্যান্য প্রদেশের মুসলমানদের মধ্যে লক্ষ করা যায়নি। স্বাধীনতা ও দেশ বিভাগের পর বারে বারে বাঙালি মুসলমান তাদের প্রতিনিধি মারফত এ কথা জানাতে চেয়েছে যে, পাকিস্তান সৃষ্টির পেছনে তাদের অবদানই সবচেয়ে বেশি। আর আজ যারা এর সুফল ভােগ করছে। তারা হয় উত্তর প্রদেশের ধনী উদ্বাস্তু অথবা সিন্ধু পাঞ্জাবি জমিদার শ্রেণী যারা স্বাধীনতাপূর্ব যুগের আন্দোলনে বাক্যব্যয় ছাড়া আর কোনাে আত্মবিসর্জনের নজির রাখেননি।
দেশ বিভাগের পরেই বাঙালি মুসলমান নিজের অভিজ্ঞতায় বুঝতে শুরু করল যে, হিন্দু জমিদার বা শােষকদের হাত থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য পৃথক মুসলিম রাজ্য শােষণ বন্ধ করে না- শােষণ নিহিত আছে সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে আর রাষ্ট্র কাঠামাে এই শােষণের রক্ষক, তল্পিবাহক। পাকিস্তান সৃষ্টির সঙ্গেসঙ্গেই বাঙালি মুসলমান দেখল পশ্চিমের শশাষণ জেঁকে বসছে আর তাদের শােষণের তীব্রতা হিন্দু শশাষণের থেকে গুণগতভাবে পৃথক নয়।
এদিকে দেশ বিভাগের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ববঙ্গে প্রায় অলক্ষে সমাজের এক গুণগত পরিবর্তন ঘটে গেল, যেটা পশ্চিম পাকিস্তানে, বিশেষ করে পাঞ্জাবে অথবা সিন্ধু প্রদেশে ঘটেনি। হিন্দু জমিদার আর জোতদাররা দেশ ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে এল। সমস্ত শ্রেণী প্রায় ধ্বংস হয়ে গেল, কৃষকরা জমির মালিক হয়ে বসল। অর্থাৎ শিল্পায়নের তাগিদে যে গণতান্ত্রিক বিপ্লব তা প্রায় আপনা থেকেই হয়ে গেল। এই গণতান্ত্রিক বিপ্লবের অপর অংশ হলাে দ্রুত শিল্প সমাজের সৃষ্টি এবং তাহলেই এই বিপ্লব সার্থক হয়। আর তা না হলে সমাজে নানা সংঘর্ষ দেখা দেয়, বিরােধ বাড়ে।
পূর্ব পাকিস্তানের চাষী জমির মালিক হওয়ার ফলে গ্রামে গ্রামে নতুন মধ্যবিত্ত সমাজ গড়ে উঠল। ভূমিহীন চাষীর মধ্যে এল এক নতুন সত্ত্বার বােধ। চাষীর ছেলে মেয়ে স্কুল কলেজে ছাত্রছাত্রী হয়ে বিরাট এক নয়া মধ্যবিত্ত সমাজের অংশ হয়ে দাঁড়াল। শুরু থেকেই তাই টানাপােড়েনের লক্ষণ; নতুন জোয়ার ধর্মের আবেগ আর মুসলিম লীগকে টিকিয়ে রাখতে পারল না। ঊনপঞ্চাশ সালেই আওয়ামী লীগের জন্ম হল আর নয়া মধ্যবিত্ত যুবসমাজের নেতৃত্বে এলেন তখন উনত্রিশ বছরের যুবক শেখ মুজিবর রহমান। মুসলমান মেয়েরা ঘরের আব্রু ছেড়ে বেরিয়ে এল শিক্ষিতা হতে, নয়া জমানার উপযুক্ত অংশীদার হতে।
ওদিকে পশ্চিম পাকিস্তানে কিন্তু ঠিক এ জিনিস ঘটল না। সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা আরও জোরদার হলাে। বিখ্যাত অর্থনীতি ও সমাজতত্ত্ববিদ গুণার মিরডাল তার এশিয়ান ড্রামা’ নামক বই-এ লিখেছেন : ‘দেশ বিভাগের ফলে উত্তর-পশ্চিম ভারতের বহু সম্রান্ত মুসলমান পশ্চিম পাকিস্তানে আশ্রয় নিলেন। তাঁরা কিন্তু তাঁদের বিপুল ঐশ্বর্যের বেশিরভাগ অংশই সঙ্গে নিয়ে এলেন— আর নয়া মুসলমান রাষ্ট্রে এই ধন লগ্নী করে মুনাফা করার বিরাট সুযােগ পেয়ে গেলেন। সিন্ধু, পশ্চিম পাঞ্জাব আর পাশাপাশি এলাকায় বড় বড় জমিদারদের ঘাঁটি ছিল (এবং তারাই কিন্তু ঐ সব অঞ্চলে মুসলিম লীগের রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রতিপত্তি বিস্তার করেছিলেন এবং সেই প্রতিপত্তি আজও অটুট)। পাঞ্জাবে জমিদারেরা শতকরা ষাটভাগ জমির মালিক। আর সিন্ধুতে নগ্ন শােষণের প্রতিমূর্তি কয়েক শত জমিদার ঐ প্রদেশের প্রায় সমস্ত আবাদী জমির মালিক। বিপরীতক্রমে, পূর্ব পাকিস্তানে বেশির ভাগ জমিদার ছিল হিন্দু। দেশ বিভাগের সঙ্গে সঙ্গে এরা ভারতে পালালাে আর চাষি জমি দখল করে বসল। দেখা যাবে যে, জমির মালিকানায় পাকিস্তানের দুই অংশে এই প্রভেদ শেষ পর্যন্ত দুই অংশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরাট সঙ্কট সৃষ্টি করল। পশ্চিম পাকিস্তান জমিদার বাড়ির ছেলেরাই উচ্চ শিক্ষার সুযােগ পেল, তারাই প্রশাসনে আর সৈন্যবাহিনীতে বড় বড় অফিসার হয়ে বসল, তাদের লক্ষ্য হলাে নেতৃত্বের আর কাঠামাের স্থিতাবস্থা বজায় রাখা। তাদের সামনে বিরাট তত্ত্বের সমস্যা-শ্রেণীগত রক্ষণশীলতা আর পাশ্চাত্য ধর্মনিরপেক্ষ আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়।’
এই সমন্বয় পশ্চিম পাকিস্তান করতে পারেনি বা করার জন্য মানসিক প্রস্তুতিও তার ছিল না। যার ফলে পূর্বপশ্চিম ফারাক ক্রমশ বেড়ে গেছে। একে আর সংকীর্ণ করা যাবে না কেবলমাত্র শ্রেণীগত কারণে। পূর্ব পাকিস্তানে শ্রমজীবী মানুষ বাংলা ভাষাভাষী সমাজের নিয়ন্ত্রক। ঊনপঞ্চাশ সাল থেকেই তারা দেখল অবাঙালি মুসলমানের ক্রমবর্ধমান দৌরাত্ম অর্থনীতির ক্ষেত্রে সর্বময় কর্তৃত্ব। এদের লগ্নী আর শােষণের রক্ষায় রাজনৈতিক কাঠামাের ভূমিকা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি লক্ষ করল, আর তখন থেকেই তার রাজনৈতিক চেতনা উন্মেষের শুরু।
পূর্ব বাংলায় অর্থনৈতিক আন্দোলন জাতীয়তাবাদী আন্দোলন হিসেবে শুরু থেকেই বিকাশ লাভ করে, কারণ সারা পূর্ব বাংলা পাকিস্তান সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই পশ্চিমী লগ্নীকারীদের নয়া শােষণ ভূমিতে পরিণত হয়। রাষ্ট্রকাঠামাে পাঞ্জাবি আর সিন্ধু মুসলমানের কবজায় চলে যায়। আদি আমলের সেই সাম্রাজ্যবাদী কায়দায় পশ্চিমী শােষণ ও শাসন জেঁকে বসতে চায়। শিল্পের মালিকানা ছাড়াও বড় বড় চাকরি, কী প্রশাসনে কী সৈন্যবাহিনীতে, সব পাঞ্জাবিরা দখল করেছে। কায়েদে আজম জিন্নাও এই শােষণের দাসে পরিণত হলেন। তাঁর চিন্তা ধর্মের জিগির তুলে নতুন মুসলিম রাষ্ট্র তৈরি করার। রাষ্ট্র গঠনের পর কী কর্মসূচী হবে তার কোনাে হদিস তিনি দেন নি বা মুসলিম লীগেরও তা ছিল না। তাই নয়া শােষকদের হাতে তিনি কবজা হয়ে গেলেন। প্রথমেই রাষ্ট্রের ভাষা কী হবে তাই নিয়ে সংঘর্ষ উপস্থিত হলাে। পশ্চিমী শােষকরা সাম্রাজ্যবাদী কায়দায় বাঙালিরা ‘ইনফিরিয়ার রেস’ তত্ত্ব হাজির করে উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করল, বাংলা ভাষার সামনে দেখা গেল সমূহ বিপদ। প্রথমে প্রতিবাদের গুঞ্জন থেকে, বিরাট প্রতিরােধের ব্যারিকেড হিসেবে গড়ে উঠল বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, পঞ্চাশ দশকের শুরুতেই। ইতিমধ্যে কায়েদে আজম জিন্নার মৃত্যু হয়েছে, আর পাঞ্জাবি সিন্ধু শশাষকরা চক্রান্ত করে লিয়াকত আলীকে হত্যা করেছে। পাকিস্তানের দুই অংশকে ধরে রাখতে পারার মতাে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কোনাে নেতাই আর রইল না। ভাষা আন্দোলনে শােষকদের প্রথম পরাজয় ঘটল- বাংলা ভাষা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেল।
তখন থেকেই পশ্চিমীরা বুঝেছিল বাঙালিকে বাদ দিয়ে শাসন শােষণ চালানাে যাবে না। ভাষা আন্দোলনের সামনে পশ্চাদপসরণের পর, পশ্চিমীরা নতুন কৌশলে বাঙালি নেতাদের একের পর এক পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বা দু-একটা অন্যান্য মন্ত্রিত্ব অধিষ্ঠিত করল। এইসব মন্ত্রীরা বুঝলেন মন্ত্রিত্বে গেলেও ক্ষমতার চাবিকাঠি আসলে পশ্চিমী শােষকদের হাতে। এরাই নতুন সংবিধান হতে দিচ্ছে না— গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ লাভে এরা বাধাস্বরূপ। পূর্ব বাংলার অধিবাসী সমস্ত মুসলমান বুঝতে শুরু করল যে, শােষণ বিরােধী আন্দোলনকে বিপথগামী করার চক্রান্ত হিসেবেই সাম্প্রদায়িকতার বিষ শােষকরাই কৌশলে ছড়িয়ে দেয়। ইসলামের জিগীর তােলার পশ্চিমী চেষ্টা কোনাে সময়ই পূর্বে দানা বাঁধে নি। কাশ্মীর নিয়ে পাক-ভারত বিরােধ পূর্ব পাকিস্তানকে পাঞ্জাবি শাসক-শােষক গােষ্ঠীর সমস্যা আকারে দেখা দিয়েছে।
ছাপান্ন সালের উনিশে ফেব্রুয়ারি তদানীন্তন গণপরিষদে জনাব সােহরাওয়ার্দী শাসনতন্ত্র বিলের ওপর বক্তৃতা প্রসঙ্গে পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তানে সংবিধান, রাষ্ট্র চরিত্র, জাতির সংজ্ঞা, সাম্প্রদায়িকতা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গির তফাত্ত্ব প্রসঙ্গে এক দীর্ঘ তত্ত্ব ও তথ্য উপস্থাপন করেন। সেই বক্তৃতায় পূর্ব বাংলার বাঙালির মানসিকতা, আশা, আকাক্ষার কিছু পরিচয় মেলে।
সাম্প্রদায়িকতা প্রসঙ্গে সােহরাওয়ার্দি বলেন, ভারত বিভাগের উদ্দেশে যে দ্বি-জাতিবাদের অবতারণা করা হয়েছিল, এ প্রসঙ্গে তার তাৎপর্য বা নির্গলিতার্থকে নজির হিসেবে নেওয়া যেতে পারে। মুসলমানরা তখন বলেছিল, আমরা এক জাতি। কেননা বহু বিষয়ে হিন্দুদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য রয়েছে। ধর্মের দিক থেকে আমরা হিন্দুদের সঙ্গে আলাদা। আমাদের সাহিত্য আলাদা, আমাদের সংস্কৃতিও আলাদা। আদতে ভারত বিভাগের প্রয়ােজনে আমাদের মুক্তিকে জোরদার করার জন্যেই আমরা দাবি করেছিলাম : আমরা এক জাতি, আর বাদবাকি সবাই আর এক জাতি। এটা ছিল পুরােপুরি অযৌক্তিক, কেননা ভারতে বিভিন্ন সম্প্রদায়, বিভিন্ন ধর্ম, বিভিন্ন কৃষ্টি ও সংস্কৃতি রয়েছে। কিন্তু এর নির্গলিতাৰ্থ হলাে এই যে, আমরা এমন একটি দেশ চাই যাতে মুসলিম প্রাধান্য থাকবে।
‘আমরা যদি সেই থিওরিটি আজ এ দেশের বেলায় প্রয়ােগ করি, তাহলে অবস্থা কী দাঁড়াবে? তাহলে সংখ্যাগুরু মুসলমানরা হবে এক জাতি, হিন্দুরা হবে আর এক জাতি, পারসিকরা হবে আরেক জাতি, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ প্রভৃতি বিভিন্ন ধর্মীয় গােষ্ঠীরা প্রত্যেকেই পৃথক পৃথক জাতি।’ সােহরাওয়ার্দী সাহেব দ্বিজাতি তত্ত্বের তীব্র বিরােধিতা করেও বলেন যে, পাকিস্তান একটি সুস্থ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে তখনই যখন এখানে সম্প্রদায় নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার পায় আর তাদের অর্থনৈতিক অধিকার সুরক্ষিত হয় একটি শােষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দ্বারা। (এখানে বলা প্রয়ােজন যে, চল্লিশ দশকের মাঝামাঝি মুসলিম লীগ যখন দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে তাদের দেশবিভাগের আন্দোলন চালিয়েছে তখন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি এই তত্ত্বের উগ্র সমর্থক। স্টালিনের জাতির সংজ্ঞা অপব্যাখ্যা করে কমিউনিস্টরা তাদের সম খোজার অপপ্রয়াস চালায়। বলা বাহুল্য, সেই জনযুদ্ধের যুগে কমিউনিস্টরা বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের দালাল, আর সােভিয়েত-বৃটিশ মিতালির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে বৃটিশ নীতি রূপায়ণে সাহায্যকারী। দেশের বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন এই সব পেটি-বুর্জোয়া সাম্রাজ্যবাদী দালালরা তখন মার্কসবাদের অপব্যাখ্যা করেছে। মার্কসবাদকে ভারতীয় বাস্তবতার উপযােগী সৃজনশীল দর্শন হিসেবে কোনও দিনই প্রয়ােগ করতে পারে নি এই কমিউনিস্টরা। তাই বরাবরই এদের ভ্রান্তি, আর বরাবরই এরা জাতীয় মুক্তি আন্দোলনকে বুর্জোয়া নেতৃত্বের কবলে যেতে সাহায্য করেছে। অপরপক্ষে ভারতে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের বুর্জোয়া সামন্ত নেতৃত্ব, কংগ্রেস পার্টি, নীতিগতভাবে দ্বিজাতি তত্ত্বের বিরােধী হয়েও শেষ পর্যন্ত দেশ বিভাগের ষড়যন্ত্রে সামিল হয়েছে, বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের তদানীন্তন নীতির সহায়ক হয়ে। শেষ চেষ্টা হয়েছিল শ্রদ্ধেয় শরৎ বসুর নেতৃত্বে বাংলা বিভাগ বন্ধ করে সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ সৃষ্টি করার এই ব্যাপারে এখানকার মুসলিম লীগ নেতারা, বিশেষ করে জনাব সােহরাওয়ার্দী ও কৃষক প্রজা পার্টির জনাব ফজলুল হক এক মত হন শরবাবুর সঙ্গে। মহাত্মা গান্ধীও এই প্রস্তাবের সমর্থন করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পশ্চিমী হিন্দু ও মুসলমান নেতারা (এদিকে জওহরলাল নেহেরু, ডা. রাজেন্দ্র প্রসাদ ও বল্লভভাই প্যাটেল আর ওদিকে জনাব জিন্না এবং জনাব লিয়াকত আলী খান) সাম্রাজ্যবাদের যােগসাজশে দেশ বিভাগে রাজি হয়ে গেলেন। আজকের যেসব সংবাদপত্র বাংলাদেশ আন্দোলনে প্রায় কাছা খােলা হয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন তাদের অনেকেই সেদিন বিভাগের দাবিতে সােচ্চার।) (আগামী সংখ্যায় সমাপ্ত)

সূত্র: দর্পণ
০২.০৪.১৯৭১