You dont have javascript enabled! Please enable it!

প্রসঙ্গক্রমে
হীথের স্বরূপ

পত্রান্তরে প্রকাশ, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী হীথ মনস্থির করে ফেলেছেন, অতঃপর তিনি ভারতকে বােঝাতে চেষ্টা করবেন যে, ভারতের উচিত জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের ভারত সীমান্তে থাকতে দিতে রাজী হওয়া। কারণ? হীথ সাহেবেরা নাকি এই ভেবেই আকুল যে, বর্ষার শেষে এমন পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে যার ফলে বাঙলাদেশ প্রশ্ন নিয়ে পাক ভারত যুদ্ধও বেধে যেতে পারে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি নিক্সন এবং পাক সামরিক জুন্টা গােড়া থেকেই বাঙলাদেশ প্রশ্নকে ভারত পাক সংঘর্ষের ফলশ্রুতিরূপে দেখাবার জন্য প্রথমে, “শরণার্থীদের তত্ত্বাবধানের নাম করে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক বসাবার অপচেষ্টা করেছিল। তাতে তারা বিফল হয়। কিন্তু তাই বলে তারা তাদের সে চক্রান্ত ছেড়ে দেয়নি। তা যে দেয়নি, বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের রক্ষণশীল নেতা হীথের এই নতুন সিদ্ধান্তই তার প্রমাণ। আগে যদিবা বৃটিশ সরকার এ ব্যাপারে উচ্চবাচ্য না করাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেছিল, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চলতি অধিবেশনে একের পর অন্য দেশের প্রতিনিধি দাঁড়িয়ে বাঙলাদেশ প্রশ্নকে ইয়াহিয়া চক্রের পাইকারী বাঙ্গালী হত্যা নীতির জের বলে প্রকাশ করছেন বলে দেখে ইয়াহিয়া চক্রের মুরুব্বি মহলগুলি এখন ক্রমেই আরও বেশি বেসামাল হয়ে পড়েছে। এভাবে যদি বাঙলাদেশ প্রশ্ন নিয়ে বিশ্ব জনমত দানা বাঁধতে আরম্ভ করে তাহলে তাে তাদের সব গুড়ে বালি পড়বে। আর সেজন্যই এ যাবৎ নিরপেক্ষতার ভান করে এবং কিছু পরিমানে “ইয়াহিয়া বিরােধী কথাবার্তার মুখােশ পরে হীথ সরকার যে ভড়ং দেখাচ্ছিল তা এখন পরিত্যাগ করতেই হচ্ছে। না হলে যে একুল ওকুল দুকুলই যাবে। কারণ সব কিছু বলা কওয়ার পরেও একথা ভুললে তাে চলবে না, ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রগঠনের প্রতিক্রিয়াশীল ধ্বনি তুলে এক জগাখিচুড়ি পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিল প্রধানত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরাই।

সূত্র: কালান্তর, ১.১০.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!