প্রসঙ্গেক্রমে
বাঙলাদেশ প্রশ্নে বৃটেনের লেবার পার্টি
কিছুকাল পূর্বেও যে দলটি বৃটেনে ক্ষমতাসীন ছিল, সেই লেবার পার্টির জাতীয় সম্মেলনের মঞ্চ থেকে দলের কার্যকরী সমিতির প্রস্তাবে পূর্ববাঙলার সাম্প্রতিক বেদনাদায়ক ঘটনাবলীর জন্য সম্পূর্ণভাবে ইয়াহিয়া খান ও তার জঙ্গীচক্রকে দায়ী করছে। ইতিপূর্বে বৃটেনের বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন সংস্থাগুলি পাক হানাদারদের বাঙলাদেশ আক্রমণের প্রতি সংঘবদ্ধভাবে ধিক্কার জানিয়েছিল। কিন্তু রাষ্ট্রক্ষমতার প্রতি স্পর্ধা বৃটেনের দুটি মুখ্য দলের অন্যতম একটি দল কর্তৃক পাক আক্রমণকে তীব্র নিন্দাবাদ করে প্রস্তাব গ্রহণ করার তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। রক্ষণশীল দল বৃটেনের গদিতে কায়েম হওয়ার পর থেকে দেশের পররাষ্ট্রনীতি বিপজ্জনকভাবে দক্ষিণ ঘেষা হয়ে উঠেছে। বর্ণ বৈষম্যের সমর্থনে রােডেশিয়া, পর্তুগাল ও দক্ষিণ আফ্রিকার সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ শাসনের পক্ষে রক্ষণশীল সরকারের উৎকট পক্ষপাত বৃটেনের ভিতরে ও বাইরে যথেষ্ট বিক্ষোভের সূচনা করেছে। হিথ সরকারের সাম্প্রতিক সােভিয়েত বিরােধী ষড়যন্ত্র ও কুৎসা প্রচার এই বিক্ষোভকে আরও বাড়িয়ে তুলছে মাত্র। ভারত সােভিয়েত মৈত্রী চুক্তি ও যুক্ত বিবৃতি আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে এক ইতিবাচক ভারসাম্যের সৃষ্টি করেছে। স্বাভাবিকভাবেই এই মৈত্রীর তাৎপর্য ও তার প্রতিফলন ব্যাপক হতে বাধা। বৃটেনের লেবার পার্টির বাঙলাদেশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের পেছনে ভারত| সােভিয়েত চুক্তি ও যুক্তবিবৃতির প্রভাবকে অস্বীকার করা তাই সঙ্গত চিন্তা নয় বলেই আমাদের ধারণা।
সূত্র: কালান্তর, ৬.১০.১৯৭১