You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাঙলাদেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয় : মুক্তিযুদ্ধ চলছে
সফরান্তে তিন কানাডীয় এমপি-র ঘােষণা

নয়াদিল্লী, ১৬ জুলাই (ইউএনআই)- কানাডার তিন পার্লামেন্ট সদস্যই মনে করেন, বাঙলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। এক সাংবাদিক সম্মেলনে পরিস্থিতিকে “আধা-স্বাভাবিক বলে তারা আখ্যা দেন। তাঁরা জানান, বাঙলাদেশে গেরিলা মুক্তিযােদ্ধারা সক্রিয় একথা ইয়াহিয়া সরকারও স্বীকার করে।
পূর্ববাঙলার ও পশ্চিম পাকিস্তান সফরান্তে আজই এই তিন কানাডীয় এমপি রাজধানী এসেছেন। সফরকালে তারা পূর্ববাঙলায় পূর্বেকার পরিস্থিতি এখনও রয়েছে দেখেছেন— পূর্বেকার পরিস্থিতি অর্থাৎ যে জন্য লক্ষ লক্ষ শরণার্থী ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।
এই পশ্চিমী রাজনীতিজ্ঞ জর্জি ল্যাকহ্যান্স, হীথ হেলসন ম্যাকারে এবং এ ব্রুইন ইয়াহিয়া নাদের হত্যাকাণ্ডকে “গণহত্যা” আখ্যা দিতে রাজী নন। কিন্তু তারা স্বীকার করেন যে, অনেক বেশি সংগঠিত কায়দায় এবং বর্বরভাবে হত্যা চালানাের প্রমাণ বাঙলাদেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের চোখে পড়ে।
ভারতীয় এমপিদের এক বৈঠকে তারা সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রায় প্রতিদিনই কিছু ঘটছে, আমরা তার প্রমাণ পেয়েছি।’ হানাদার পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাদের কিছু কুকীতির নজির ও তাদের নজরে পড়ে। আগুন লাগানাে এবং গােলাবর্ষণের চিহ্নও তাদের চোখে পড়েছে।
কানাডীয়রা বলেন, বাঙালী জনগণের সঙ্গে তাদের সাক্ষাতের কোন সুযােগ ইয়াহিয়া জঙ্গীচক্র দেয় নি। যাদের সঙ্গে আলােচনা করতে হয় সেই সব সরকারী অফিসাররাই পশ্চিম পাকিস্তানী ।
মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে পাক স্বীকৃতি
পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ মুক্তিযুদ্ধ চলার কথা এই বিদেশীদের কাছে স্বীকার করেছে। শ্রীব্রুইন বলেন, পাক সামরিক কর্তৃপক্ষ অবশ্যই অভিযােগ করার চেষ্টা করে যে, গেরিলা মুক্তিযােদ্ধাদের ভারত উৎসাহ দিচ্ছে।
ঢাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করলে শ্রীল্যাকহ্যান্স বলেন, নির্ভরযােগ্য সূত্রে জানতে পারা গেছে যে, ঢাকা ও চট্টগ্রামে অহরহ গ্রেনেডের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
সমস্যা সমাধান সম্পর্কে তাদের মত জিজ্ঞাস করলে শ্রীল্যাকহ্যান্স বলেন, “কোন সহজ সমাধান দেখছি না।” তবে সর্বপ্রথম শরণার্থীদের নিজ মাতৃভূমে ফিরে যাওয়ার সুযােগ দিতে হবে বলে শ্রীব্রুইন বলেন।
পাকিস্তানের অর্থনীতিক ‘দুর্বলতার কথা স্বীকার করে নিয়ে তিন বিদেশী বলেন, নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। তবে শীঘ্রই এমন সমাধান হবে বলে শ্রীলাকহাল মনে করেন না।
তারা জানান, ঐ সফরের একটি রিপাের্ট রচনা করে কানাডা সরকারের কাছে পেশ করা হবে । ঐ রিপাের্টে বাঙলাদেশ শরণার্থীদের ত্রাণ কাজে কানাডার করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ থাকবে বিশেষ করে, কানাডা ও ঐ দেশের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠানকে সাহায্যের পরিমাণ বাড়াতে বলা হবে।
শরণার্থীভারে জর্জরিত ভারতের সাহায্যে আন্তর্জাতিক দেশগুলির এগিয়ে আসার পক্ষেও ঐ বিদেশী এমপি-রা দাবি জানান। কারণ, তারা মনে করেন, সমস্যাটি একা ভারতের নয়।
রিপাের্টে ঐ তিন এমপি আরও সুপারিশ করবেন যে, বাঙলাদেশে শরণার্থীদের নির্ভয়ে ফিরে যাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টিতে জাতিসংঘ যেন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

সূত্র: কালান্তর, ১৮.৭.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!