1972.01.27 | এক কক্ষ পরিষদ ও এককেন্দ্রীক সরকার ব্যবস্থা সম্বলিত শাসনতন্ত্র
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য খসড়া শাসনতন্ত্র প্রণয়নের কাজ সমাপ্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার বার্তা সংস্থা ‘এনা’ এই খবর পরিবেশন করেন। খসড়ায় প্রস্তাবিত প্রধান প্রধান বিষয় হচ্ছে : ১. সরকার হবে এক-কেন্দ্রিক এবং পার্লামেন্টারি ধরনের। ২. পরিষদ হবে এক-কক্ষবিশিষ্ট। এতে সদস্য থাকবেন ৩৫০ জন। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র এই তিন নীতির ভিত্তিতে নবজাত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্র কায়েম হবে। খসড়া শাসনতন্ত্রে পূর্বে প্রতিশ্রুত যেসমস্ত বিষয়ের গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে, সেগুলি হলো : সমাজতান্ত্রিক বৈশিষ্টপূর্ণ অর্থনীতি চালু করা, প্রশাসন বিভাগ হতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা এবং মানুষের ব্যাক্তিগত মর্যাদা ও জাতীয় ঐক্যের নিশ্চয়তা সম্বলিত ভ্রাতৃত্ববোধ সুপ্রতিষ্ঠিত করা। খসড়ায় বলা হয়েছে, এককক্ষ বিশিষ্ট পরিষদের সদস্যগণ (৩৫০জন) পাঁচ বৎসরের জন্য নির্বাচিত হবেন এবং নির্বাচন হবে সার্বজনীন বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে। এই পরিষদ সদস্যগণ আবার প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন। বাংলাদেশের জাতীয় (সরকারি) ভাষা হবে বাংলা। নাগরিক অধিকার সম্পর্কে খসড়ায় বলা হয়, যে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে অথবা যার পিতা কিংবা মাতার জন্ম এই দেশে অথবা ৫ বৎসর যাবত ডোমিসাইল হিসাবে যে এখানকার বাসিন্দা সে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভের যোগ্য হবে। মৌলিক অধিকার সম্পর্কে খসড়া শাসনতন্ত্রে বলা হয়েছে : আইনের চোখে সকলে সমান বলে পরিগণিত হবে, চিন্তা, বিশ্বাস ও বাক স্বাধীনতার পূর্ণ নিশ্চয়তা থাকবে, নিশ্চয়তা থাকবে আপন ধর্মমত অনুসরণ এবং সে অনুযায়ী প্রার্থনা করার। সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক দিক দিয়ে সকল শ্রেণি সসমমর্যাদা এবং সমান সুযোগ-সুবিধা লাভের অধিকারী হবে এবং ন্যায় বিচার লাভের অধিকারীও হবে সকলে সমপরিমাণে। খসড়ায় এই সকল বিষয়ে পূর্ণ গ্যারান্টি রয়েছে। নির্দেশক নীতিমালা সম্পর্কে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সাম্য, সহনশীলতা, সামাজিক ন্যায় বিচার ও ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতি পুরাপুরি প্রতিপালিত হবে। খসড়া শাসনতন্ত্রটি ২০টি ভাগে বিভক্ত এবং এতে অনুচ্ছেদ রয়েছে ২২৯ টি। জানা গেছে যে, খসড়াটি বাংলাদেশ গণপরিষদের সামনে উপস্থাপনের পূর্বে আইন ও পার্লামেন্টারী বিষয়ক মন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত খসড়া শাসনতন্ত্র কমিটি যা আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির বিবেচনার জন্য তার সামনে পেশ করবেন। খুব সম্ভবত এক মাসের মধ্যেই গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরু হবে। উল্লেখযোগ্য যে, ইতোপূর্বেই বাংলাদেশের অস্থায়ী শাসনতান্ত্রিক আদেশ-১৯৭২ অনুসারে গণপরিষদ গঠন করা হয়েছে। বিগত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত এম.এ এবং এমপিগণ গণপরিষদের সদস্য অথবা এমসিএ বলে পরিগণিত হবেন।
Reference:
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২ অধ্যাপক আবু সাইয়িদ
ইত্তেফাক, ২৭ জানুয়ারি ১৯৭২
Unicoded by Nayem Uddin Akash