You dont have javascript enabled! Please enable it!

1972.01.24 | মুক্তিবাহিনীর কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে

নৃশংস ও বর্বর শ্ত্রুর বিরুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে তাজা প্রাণ মুক্তিবাহিনী যে বিরচিত ভূমিকা গ্রহণ করেছিল, জাতির ইতিহাসে তা চিরকাল গৌরবোজ্জ্বল ও অম্লান হয়ে থাকবে। মাতৃভূমির উদ্দেশে নিবেদিত তাঁদের ত্যাগ ও সংগ্রামের মহান অবদানকে বস্তুত বা পার্থিব কোনো মূল্যেই চিহ্নিত বা বিভূষিত করা যায় না। তথাপি মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের উপযুক্ত কর্মসংস্থান ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দানের বিষয়টিকে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করেছে এবং এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। একদিকে সরকার কর্তৃক মুক্তিবাহিনীর ইচ্ছুক সদস্যদের জাতীয় মিলিশিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থাদি নেয়া হয়েছে, অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা মুক্তিবাহিনীর ইচ্ছুক ও উপযুক্ত সদস্যরা যাতে কর্মসংস্থানের স্মর্থ হন, তজ্জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশাবলী জারি করা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর প্রধান সেনাপতি মুক্তিবাহিনীর প্রকৃত সদস্যদের সার্টিফিকেট প্রধান করবেন বলে জানা যায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের উক্তিতে বারংবার বীর মুক্তিবাহিনী সদস্যদের সমাজে মর্যদার সাথে প্রতিষ্ঠা করার দ্রঢ় সংকল্প প্রকাশ পেয়েছে। ১৪ জানুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে বর্তমানে চিকিৎসারত আহত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিদর্শনকালে বঙ্গবন্ধু বলেন, “দেশকে মুক্ত ও স্বাধীন করার জন্য যে সমস্ত তরুণ জীবনের মায়া ত্যাগ করে বর্বরবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন তাঁরা অবশ্যই সমাজের উপযুক্ত আসন লাভ করবেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে বর্বরবাহিনীকে পরাজিত-বিতাড়িত করে মাতৃভূমিকে স্বাধীন ও মুক্ত করার পরবর্তী পর্যায়ে বীর মুক্তিবাহিনী জাতি গঠনের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদা সম্পূর্ণ কাজে নিয়োজিত হলে তা হবে সব দিক দিয়ে সুসামঞ্জস্যপূর্ণ ও বাঞ্চনীয়। এই প্রসঙ্গে জাতীয় মিলিশিয়া ও গণপুলিশবাহিনীতে মুক্তিবাহিনিণীর অন্তর্ভুক্তি করণে জাতীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বলিষ্ঠ বিষয়টির উল্লেখ করা যেতে পারে।

         গণপুলিশবাহিনীতে তাদের বহুল সংখ্যায় অন্ত্ররভুক্তিকরণের গুরুত্ব ও মর্যাদা পর্যালোচনা করা যেতে পারে। নৃশংস পাকিস্তানবাহিনী বিগত ২৫ মার্চের পর অন্যান্য ক্ষেত্রের ন্যায় বাংলাদেশের আইন শ্রঙ্খলা এজেন্সিকে বলতে গেলে সম্পূর্ণই ধ্বংস করে দিয়েছে। স্বাধীন ও সার্বভৌম যেকোনো রাষ্ট্রে সামাজিক নিরাপত্তা ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টিকে সঙ্গতভাবেই রাষ্ট্রের উন্নতি ও সমৃদ্ধি সাধনে প্রাথমিক শর্ত বলে অবিহিত করা যায়। যেকোনো মূল্যে তাই একটি গণমুখি ও অটুট আইনশৃঙ্খলা এজেন্সি পূর্ণাঙ্গরূপে গড়ে তোলা একান্ত অপরিহার্য। মুক্তিবাহিনীর সদস্যবৃন্দ স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামে জীবনের মায়া ত্যাগ করে শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার এবং শত্রুকে পর্যুদস্ত করার যোগ্যতা ও সম্মান অর্জন করেছেন। এক্ষণে তাঁদের ইচ্ছুক সদস্যবৃন্দ গণপুলিশবাহিনীতে যোগদান করে এবং জাতীয় মিলিশিয়া সদস্য হিসাবে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের দেশপ্রেম, ত্যাগের মনোভাব ও অন্যায়-অবিচার বিরোধী দৃষ্টীভঙ্গি গণপুলিশ ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সংস্থার মাধ্যমে দেশ ও সমাজের সর্বস্তরে প্রতিফলিত হলে তা দেশ ও সমাজের জন্য নিশ্চিতই মঙ্গলের কারণ হবে।

Reference:
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২ অধ্যাপক আবু সাইয়িদ
ইত্তেফাক, ২৪ জানুয়ারি ১৯৭২
Unicoded by সাকিফ শাহারীয়ার প্রতুল

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!