You dont have javascript enabled! Please enable it!

1972.01.24 | ২৪ জানুয়ারি ১৯৭২ | সোভিয়েত স্বীকৃতি

বিশ্বের দুইটি মহাশক্তির অন্যতম মহান সোভিয়েত ইউনিয়ন স্বাধীন, সার্বভৌম গণপ্রাজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে বলে সোমবার মধ্যরাতে (মস্কো সময় রাত ৮টা) ঘোষণা করা হয়। ইতোপূর্বে যেসব দেশ বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নেয় তাঁরা হচ্ছে – ভারত, ভুটান, পূর্ব জার্মানি, পোল্যান্ড, অষ্ট্রিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া, বার্বাডোস, ডেনমার্ক, সুইডেন, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, নরওয়ে, যুগোশ্লেভিয়া, বুলগেরিয়া ও বার্মা। সুপ্রিম সোভিয়েতের চেয়ারম্যান এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন মন্ত্রীপরিষদের চেয়ারম্যান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রেরিত এক বাণীতে বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন অবিলম্বে বাংলাদেশের সহিত কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে এবং কূটনৈতিক প্রতিনিধি বিনিময় করতে প্রস্তুত। সোভিয়েত নেতৃদ্বয় বাংলাদেশের জনগণের শান্তি, উন্নতি ও অগ্রগতি কামনা করে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান এবং আশা প্রকাশ করেন, স্বীয় সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে এবং শান্তিপূর্ণ গণপ্রজাতন্ত্রী দেশ হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলতে বাংলাদেশ সফল হবে। আর বাংলাদেশ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্রমবর্ধমান সৌহার্দ্য সহায়ক হবে, বিশ্বশান্তিকে শক্তিশালী করে তুলতে।

         আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনাঃ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আবদুস সামাদ আজাদ সোভিয়েত ইউনিয়নের স্বীকৃতিকে একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা বলে অবহিত করেছেন। তিনি বলেন, অত্যন্ত স্বাভাবিক পথেই মহান সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের প্রাপ্য স্বীকৃতি প্রদানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তার জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং জনসাধারণ অত্যন্ত আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করছিল। বাংলাদেশের সরকার এবং জনসাধারণের পক্ষ হতে আমি সোভিয়েত সিদ্ধান্তের প্রতি অভিনন্দন জানাই এবং সোভিয়েত জনগণ ও তাদের সরকারের প্রতি জানাই আমাদের কৃতজ্ঞতা। ১০৭

তোরা এবার দেশকে গড়ে তোল

“তোদের কথা আমি জীবনে ভুলতে পারব না। আমি তোদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে পারি নাই। তোরা অস্ত্র ফেরত দিছিস। এই অস্ত্র তোদের হাতেই থাক। তোরা মিলিশিয়া পুলিশ ও রিজার্ভ বাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশকে গড়ে তোল।“ সোমবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কাদেরিয়াবাহিনীর অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠানে একথা বলেন। বিন্দুবাসিনী বিদ্যালয় ময়দানে কাদেরিয়াবাহিনীর সর্বাধিনায়ক আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুর নিকট অস্ত্র সমর্পণ করেন। বঙ্গবন্ধু আরো বলেন, “বাংলার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এখনও ষড়যন্ত্র শেষ হয় নাই।“ তিনি মুক্তিবাহিনীসহ জনগণের প্রতি এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু বলেন, “তোরা আমাকে ‘জাতির পিতা’ বা ‘বঙ্গবন্ধু’ যাই বলে ডাকিস না কেন, আমি তোদের ‘মুজিব ভাই’। আমি এই পরিচয়েই মরতে চাই।“ “দেশের মানুষের কাছ হতে আমি যা পেয়েছি, আর কেউ পাই নাই।“ বঙ্গবন্ধু বলেন, “আমার বয়স বাড়ছে। তোরা জানিস আমি আর আগের সে মানুষটি নাই। তোরা দেশকে গড়। তোরা সাহায্য না করলে আমি পারব না।“ তিনি বলেন যে, যারা মানুষকে হত্যা করেছে, মা বোনদের নির্যাতন করেছে তাদের সহযোগীদের “আমি ছাড়ব না।“ অস্ত্রসমর্পণের ব্যাপারে তিনি কাদেরিয়া বাহিনীর নিকট হতে দৃষ্ঠান্ত গ্রহণের আহ্বান জানান এবং আশা প্রকাশ করেন, আমি যখন বলছি, তখন নিশ্চয়ই বাংলার ছেলেরা কেউই আর অস্ত্র লুকিয়ে রাখবে না। তিনি বলেন যে, অস্ত্র সমর্পণের বর্ধিত তারিখ ৩১ জানুয়ারির পর কাউকেও অস্ত্র রাখতে দেখা গেলে তাকে অপরাধি গণ্য করা হবে। ১০৮

Reference:
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২ অধ্যাপক আবু সাইয়িদ
ইত্তেফাক, ২৪ জানুয়ারি ১৯৭২
Unicoded by সাকিফ শাহারীয়ার প্রতুল

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!