You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.01.19 | এবার ঋণ পরিশোধের পালা - সংগ্রামের নোটবুক

1972.01.19 | এবার ঋণ পরিশোধের পালা

দেশের সশস্ত্র বিপ্লব ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংরাদেশ গঠিত হয়েছে। এ বিপ্রব সরবে ঘটেছে। নবজাতকের জন্মলগ্নে বিশ্বজননী সর্বাঙ্গে কম্পন জাগিয়াছে। মহাকালের পাতায় লিখিত হয়েছে অবিস্মরণীয় ইতিহাস। যে ইতিহাস একদিকে যেমন হিংস্র বর্বরতার নৃশংস অত্যাচারে, নির্মম পাশবিকতা বিভৎস। অন্যদিকে তেমনি অবিশ্বাস্য ত্যাগ স্বীকারে, দুর্জয় সাহসিকতার এবং অন্যায়ে ধ্বংসস্তুপে ন্যায়ের বিজয়কেতন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এই সরব বিপ্লবের পামাপাশি একটি নীরব বিপ্রব ঘটে গেছে। সে বিপ্লব এদেশের সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক চিন্তাবাবনার ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের পূর্বের বাংলাদেশ আর আজিকার বাংরাদেশ এক নয়। এই সত্যটি আজ আমাদের গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে।

বাংলাদেশ শত্রুর মোকাবেলা করেচে সশস্ত্রভাবেই। রক্তের বদলে রক্ত, চোখের বদলে চোখ এই ছিল আমাদের মুক্তিপাগল যৌবনে ক্রুদ্ধ ঐকতান। কিন্তু এই ঐকতান বিদ্বেষজাত ছিল না। ছিল না এতে হিংসার পাপ প্ররোভনের কালিমা। বাঙারিকে শেষ পর্যন্ত অস্ত্র ধরতে হয়েছিল। নিজেদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য। বাংলার মানুষ শান্তিতে বাস করতে চেয়েছে। প্রাপ্য নাগরিক ও মানবিক অধিকার ভোগ করে বিশ্বসমাজের সাথে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতিতে মনুষ্যচিত্তে জীবনযাপন করতে চেয়েছে। অস্ত্রের ভাষঅখৈ সর্বান্তঃকরণে ঘৃণা করেছে। সেই জন্যেই এই দেশ চিরদিন গণতন্ত্রেরও সাধনা করেছে, গণঅধিকার অটুট রাখার সংগ্রামে এগিয়ে গেছে  দ্বিধাহীন চিত্তে। তাই বলতে হয় বাংলার মানুষের সংগ্রাম ছিল একান্তভাবেই গণতন্ত্র ও স্বাধীকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। পাকিস্তানের কাটামোতে তা সম্ভব হয় নাই। সশস্ত্র বিপ্রবের মাধ্যমে বাংরাদেশের অভ্যুদ্বয় ঘটেছে সেই কারণেই। বিগত নির্বাচনে বাংলার মানুষ নির্ভেজাল গণতন্ত্রের পক্ষে রায় দিয়েছে দুর্নীতি ও শোষণের বিরুদ্ধে। সে রায় পশ্চিমা দস্যুচক্্রের মনোপূত হয় নাই, হতেও পারে না। তাই নির্সত্র বাঙালীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে সশস্ত্র দস্যু বাহিনী।সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়ে শ্মশান বাংলা করে নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী থাবাও অটুট রাখতে চেয়েছে।কিন্তু ইতিহাসের থাবাকে বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা যায় না। জনগণের যে রায়কে তারা নস্যাৎ করে দিতে চেয়েছিল, আজ সেই রায় মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এ বাংরা সে বাঙলা নয়। এ বাঙালি সে বাঙালি নয়। এ এক নতুন দেশ এক নতুন জাতি। নতুন দেশ এবং নতুন জাতির যারা কর্ণধার তারা কি এউ সুমহান ও সুকঠিন দায়িত্ব সম্যক উলিব্ধি করেছেন? নিশ্চয় করবেন। বঙ্গবন্ধুর মহান নেতৃত্বে যেসব দেশকর্মী স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছেন স্বাধীনতার গুরুদায়িত্ব সম্পর্কেও তারা সচেতন থাকবেন, সে বিশ্বস আমাদের আছে। তবু বলতে হয়, এদেশ স্বাধীনতার মূল্য দিয়েছে। এ দেশবাসী র্কত দিয়ে মুক্তি কিনেছে। ত্রিশল্কষ প্রাণ অনেক অশ্রু, অনেক আর্তনাদের বিনিময়ে তারা প্রতিষ্ঠা করেছে তাদের বহু প্রত্যাশার গণসরকার। যে সরকার তাদেরকে গণতান্ত্রিক অীধকার, মানবিক অধিকার, সামাজিক মর্যাদা এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অঙ্গীকার করেছেন। জনগণ যা দেবার দিয়েছে। এবার ঋণ পরিশোধের পালা, রক্রে ঋণ। আমাদের রাজনৈতিক কর্মীবৃন্দ এবং বিভিন্ন কেষত্রে নেতৃত্বের আসনে যারা অসীন হয়েছেন আজ এই ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব তাদেরই। গণতন্ত্রে এবং সমাজতন্ত্রে যৌথ বিকাশের চ্যালেন্জ তারা গ্রহণ করেছেন। তাদের নিষ্ঠা, সততা এবং কর্তব্যপরায়ণতার ওপর নির্ভর করছে এ দেশের ভবিষ্যৎ। কাজের মাধ্যমে আজ প্রমাণিত হবে তাদের বাঙালি প্রেম, তাদের দেশপ্রেম।৭২

Reference:
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২ অধ্যাপক আবু সাইয়িদ
ইত্তেফাক, ১৯ জানুয়ারি ১৯৭২
Unicoded by Anik Debnath