1972.01.17 | অর্থনৈতিক মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত স্বাধীনতা সম্পূর্ণ হবেনা – সৈয়দ নজরুল ইসলাম
“বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা সম্পূর্ণ হবে না।” সোমবার শিল্প ও বানিজ্যমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে আয়োজিত এক সম্বর্ধনা সভায় একথা বলেন। সদরঘাটের বাংলাদেশ দোকানদার হকার সমিতি এই সম্বর্ধনা সভার আয়োজন করেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম আরো বলেন যে, সশস্ত্র ও রক্তাক্ত বিপ্লবের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন রাষ্ট্রের বিপ্লবী সরকারের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে দেশের মানুষের দুঃখ- দুর্দশা মোচন করা। শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন যে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিরলস প্রচেষ্টা ও সহযোগীতার ফলে দেশে অতি অল্প সময়ের মধ্যে আইন শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অতীত ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি আরো বলেন, জনগণের সঙ্গে তোমারা যদি শান্তি বজায় রাখার দায়িত্ব নাও, তাহলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঐ জনগণের সহযোগিতায় আমারা বিধ্বস্ত বাঙালিকে গড়ে তুলতে পারি।” তিনি বলেন যে, সোনার বাংলায় এখন সবকিছু ধ্বংসপ্রাপ্ত। দেশের অর্থনীতি, কৃষি, শিল্প- সবকিছুকেই ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। “আর এই পুনর্গঠনের কাজ একমাত্র ঐক্যবদ্ধ জনগণের সহযোগিতার মাধ্যমে মাধ্যমে সম্ভবপর। আমারা ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছি এবং তা অর্জন করেছি। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব।” তিনি জনগণের প্রতি সংগ্রামী ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানান। সৈয়দ নজরুল বলেন যে, বাংলার সর্বস্তরের মানুষের সুখ সমৃদ্ধির ব্যাপারে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা যাতে ব্যর্থ না হয় তার জন্য জনগণের সহযোগিতা দরকার। যে কেউই সরকারের জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপ বানচাল করতে চাবে, তাকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি স্বার্থবাদী মহল ও প্রতিক্রিয়াশীলদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকতে জনগণকে আহ্বান জানান। তিনি জনগণকে কৃত্রিম জীবন যাপনের মান ভুলে যেতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সমাজকে পাকিস্থানি প্রতিক্রিয়াশীলরা ভোগের মোহ চাকিয়ে গেছে। কৃতজ্ঞতার মাধ্যমে এই প্রবণতাকে ভুলে যেতে চাইবে। তিনি এ ব্যাপারে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের জনগণের কৃচ্ছতার কথা উল্লেখ করেন।
কৃষি, স্থানীয় স্বায়ত্ব শাষন ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী শেখ আব্দুল আজিজ বলেন যে, বাংলার মানুষের সংগ্রাম এখনো শেষ হয় নাই। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যা দূর করার জন্য জনগণের সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন যে, স্বাধীনতার শত্রুরা, বিশেষ করে সিআইএ বাংলার মানুষের ক্ষতি সাধনের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তিনি জনগণকে অশুভ চক্রান্তের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকর আহ্বান জানান।
জনাব মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন যে, “দামাল মায়ের কামাল ছেলেরা” বাহান্নর ভাষা আন্দোলন হতে স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত তাদের চিরজাগ্রত মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে। তিনি ভাষা আন্দোলনের পটভূমিকা বিশ্লেষণ করে বাংলার তরুণ সমাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন যে, বর্বর ইয়াহিয়া বাহিনীর অত্যাচারে শুধু এক কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয় নাই, স্বদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ সর্বস্ব হারিয়েছে। এদেরও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
শাহ মোয়াজ্জেম এমসিএ বলেন যে, জনগণের কল্যাণে মুজিবাবাদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন যে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ ও শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, “জনগণই শেখ মুজিবের শক্তি। আর এই জনগণ সঙ্গে থাকলে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।”
প্রখ্যাত ভারতের সাহিত্যিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার বিজয়ী শ্রী মুলকরাজ আনন্দ বলেন, ” আমি বাংলার মহান জাতিকে সালাম জানাতে এসেছি।” “আপনাদের উপর বর্বর ইয়াহিয়া বাহিনী যে অত্যাচার করেছে তার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে নাই।” তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর যুদ্ধবন্দীদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের দাবি জানান।৬৫
Reference:
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২ অধ্যাপক আবু সাইয়িদ
ইত্তেফাক, ১৮ জানুয়ারি ১৯৭২
Unicoded by Mahmood Don