You dont have javascript enabled! Please enable it!

১৬ জানুয়ারি

শহীদের রক্তস্রোত, মায়ের অশ্রুধারা বৃথা যেতে দেব না- বঙ্গবন্ধু

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতিকে নিশ্চয়তা প্রদান করে বলেন যে, শহীদানের রক্তস্রোত ও মায়ের অশ্রুধারা বৃথা যেতে পারে না, যেতে দেব না। সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বাণীতে তিনি বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে অবিলম্বে পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেন, ‘আজ জাতীয় শোক প্রকাশের দিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন তাঁদের স্মরণে আজ আমরা শোক প্রকাশ করছি। মানব ইতিহাসে জঘন্যতম বর্বর সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে তাঁরা শহীদ হয়েছেন। গত নয় মাস হানাদার শত্রু যে নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতন চালিয়েছে তার নজির ইতিহাসের কোথাও নাই। তাদের হাতে ত্রিশ লক্ষ বাঙালি প্রাণ দিয়েছে। বাংলাদেশে এমন একটি পরিবার নাই যা কোনো না কোনো ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় নাই।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আজ জাতীয় শোক দিবসে আমি আমার জনগণকে এই নিশ্চয়তা দিতে চাই যে, শহীদানের রক্তস্রোত আর মায়ের অশ্রুধারা বৃথা যেতে পারে না, যেতে দেওয়া হবে না। আসুন, বাংলাকে প্রকৃত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আশু-পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের কাজে আমরা আত্মোৎসর্গ করি।’৩০

চিরঞ্জীব বীর শহীদান, তোমাদের জন্য মুজিবের বাংলা কেঁদেছে

দেশব্যাপী জাতীয় শোক দিবস উদযাপিত হয়েছে। লাখো লাখো শহীদের স্মরণে সোনার বাংলার কোটি কোটি মানুষ নয়নসিক্ত করেছে। তাদের ব্যথাত্যুর হৃদয়ে কান্না চিরদিনের জন্য হারানো স্বদেশবাসীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত হয়েছে। দেশ মাতৃকাকে পরাধীনতার জিঞ্জির হতে মুক্ত করার সংগ্রামে শহীদ, পাকিস্তানবাহিনীর নির্বিচার হত্যাকান্ডে নিহত লক্ষ লক্ষ সোনার ভাইবোনের স্মরণে গতকাল বাংলার মানুষ কেঁদেছে। আর সেই সঙ্গে লাখো শহীদানের মহান আত্মোৎসর্গের পটভূমিকার ওপর দাঁড়িয়ে বাংলার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে বিধ্বস্ত স্বদেশকে দ্রুত সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথ গ্রহণ করেছেন।  বাংলাদেশ সরকারের আহ্বানে রবিবার ঢাকায় সর্বোস্তরের মানুষ জাতীয় শোক দিবস পালন করেন। এ উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। শহরের সকল নাগরিক কালোব্যাজ ধারণ করেন। শহরের সকল দোকানপাট, হাটবাজার, হোটেল, রেস্তোরা ও সিনেমা হল বন্ধ থাকে। শহীদানের রুহের মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে বহুস্থানে কাঙালি ভোজ, মসজিদ, মন্দির, গীর্জা-বিহারে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী, ছাত্র, শ্রমিক, অফিস কর্মচারী বুদ্ধিজীবি সমাজের সকল স্তরের হাজার হাজার মানুষ শহীদমিনারে পুষ্পাঞ্জলী অর্পণ করেন। রাষ্ট্রপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান প্রত্যুষ্যে শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য নিবেদন করেন।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কালো পতাকাবাহী শত শত মিছিল শহরের সড়কসমূহ প্রদক্ষিণ করে এবং শহীদ মিনারে এসে সমাপ্ত হয়। সারাদিন ধরে শহিদমিনার জনতায় পরিপূর্ণ থাকে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শোক সভার আয়োজন করেন। বর্বর ইয়াহিয়াবাহিনীর হত্যাকান্ড ও ধ্বংসের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রবৃন্দ শহীদমিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।

কমিউনিস্ট পার্টিঃ জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় এক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। কমরেড মনি সিং-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন। কমরেড আব্দুস সালাম, কমরেড খোকা রায়, কমরেড অনিল মুখার্জী, কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ প্রমুখ নেতা সভার প্রারম্ভে দুই মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনের মাধ্যমে শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন।৩১

Reference:
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২ অধ্যাপক আবু সাইয়িদ
ইত্তেফাক, ১৭ জানুয়ারি ১৯৭২
Unicoded by Tushar Mondal

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!