You dont have javascript enabled! Please enable it!

কুখ্যাত বদর বাহিনীর উচ্ছেদ চাই

বাংলার সুসন্তানদের যে নৃশংস আর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে মানব ইতিহাসে এ বীভৎস অত্যাচারের দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। ইতিহাসে আমরা বহু বর্বর হত্যাযজ্ঞের কাহিনী পড়েছি, কিন্তু পাকিস্তানের ঘৃণ্য  সামরিক জান্তা সুপরিকল্পিত ও জঘন্য উপায়ে বাংলার বুকে যে গণহত্যা করেছে, তার কাছে মাইলাই আর নুরেনবার্গ হত্যাকাণ্ড ম্লান হয়ে গেছে। জনগণের শত্রু এই ঘৃণ্য ও জঘন্য পশুর দল শেষ মুহূর্তে বাংলার জনগণের উপর যে বিষাক্ত ছােবল মেরেছে, তাতে শিকার হয়েছেন বাংলার সংস্কৃতির উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কসাংবাদিক, অধ্যাপক আর চিকিৎসক। বাংলার স্বাধীনতালগ্নে বাংলা মায়ের জ্ঞানের প্রদীপ এই সমস্ত সাংবাদিক, অধ্যাপক ও চিকিৎসকদের নির্মমভাবে হত্যা করার পরিকল্পনা নিয়েছে ইতিহাসের কুখ্যাত খুনি হানাদার পাক-বাহিনী। আর এই পরিকল্পনাকে কার্যকরী করেছে চরম প্রতিক্রিয়াশীল ও বিশ্ব-মানবতার ঘৃণ্য শক্র আল-বদর বাহিনী। রক্ষণশীল ও চরম প্রতিক্রিয়াশীল দক্ষিণপন্থি কুখ্যাত জামাত-ই ইসলামী এই বদরবাহিনী সৃষ্টি করে এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডে মেতে উঠে। সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থে বাংলার বুক থেকে জ্ঞানের মশালকে চিরতরে নিবিয়ে সােনার বাংলাকে মধ্যযুগীয় এক উপনিবেশে পরিণত করাই ছিল নারকীয় হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য। যে সমস্ত কুখ্যাত নরঘাতক বাংলা মায়ের জ্ঞানের মধ্যমণিদের আমাদের মাঝ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে সেই কুখ্যাত জামাতের জারজ নেতাদের ক্ষমা নেই। গত ২৪ বৎসর ধরে যে সমস্ত উজ্জ্বল। নক্ষত্র বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনকে বাঁচিয়ে রেখেছিল এবং আজকের এই নূতন বাংলা গঠনে যাদের চিন্তা বাংলার জনগণকে অগ্রগতির পথ দেখাত, সেই সমস্ত পরিজনদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছে আল-বদর বাহিনী। বিশ্ব-ইতিহাসের এই জঘন্য, বর্বর, নরঘাতক ও অমানুষিক বদর বাহিনীকে বাংলার জনগণ ক্ষমা করতে পারে না। বাংলার জনগণ আজ মুক্ত, জাতীয় জীবনের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য বাংলার জনগণ এই প্রতিক্রিয়াশীলদের উৎখাত করতে বদ্ধপরিকর। তাই বিশ্ববিবেকের কাছে বাংলার জনগণের একটিমাত্র ফরিয়াদ, বাংলার মানুষ বিশ্ব-মানবতার শত্রু আলবদরদের বিচার চায়, উচ্ছেদ চায় ।

সাপ্তাহিক বাংলাদেশ ১:৯। ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ১০

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!