You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.20 | সম্পাদকীয়: আর কতদিন রক্ত ঝরবে | দেশের ডাক - সংগ্রামের নোটবুক

আর কতদিন রক্ত ঝরবে

সীমান্তে পাক দস্যুদের গােলাগুলিতে ভারতীয় নাগরিকদের রক্ত ঝরছে! সাব্রুম, বিলােনিয়া, সােনামুড়া, সদর, কমলপুর ও খােয়াই- এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ জন ভারতীয় নাগরিক প্রাণ দিয়েছেন। শত শত নাগরিক আহত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছেন। হাজার হাজার ভারতীয় কৃষক সীমান্তের জমি, ফসল, ঘর-বাড়ি ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। সদর বামুটিয়াতে দেখা গেছে, বিএসএফ তাদের সামান্যতম নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারে না। সীমান্তের ভারতীয় নাগরিক সেল, গুলি বা মাইন বিস্ফোরণে নিহত, আহত বা নিঃস্ব হলে সরকার তাদের জন্য সামান্যতম আশ্রয় বা রিলিফের ব্যবস্থাও করেন না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি ত্রিপুরাবাসীর সমর্থন স্বতঃস্ফূর্ত এবং গভীর তাতে সন্দেহ নাই। তার জন্যেই তারা এত রক্ত দিয়ে, এত কষ্ট স্বীকার করে, এত স্বার্থ ত্যাগ করে তাদের পাশে হাসিমুখে দাঁড়াতে পারছেন। কিন্তু পাক দস্যুরা তাদের আক্রমণকে আমাদের ভারতীয় এলাকায় এনে দিতে সাহস পায় কী করে? সাহস পায়, ইন্দিরা সরকারের দুর্বল বাংলাদেশ নীতির জন্যে। দস্যু ইয়াহিয়া বুঝতে পেরেছেন, ইন্দিরা সরকার স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিবেন না। তার সােভিয়েত ও মার্কিন সফরের উদ্দেশ্য আপােষের জন্য ইয়াহিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করা। বাংলাদেশের মুক্তিযােদ্ধাদের অস্ত্র না দেয়ার জন্যই ইয়াহিয়ার দস্যুবাহিনী আমাদের সীমান্তে আসতে সাহস করছে। ১৩ লক্ষ ২০ হাজার শরণার্থী এখন ত্রিপুরায় আছেন। প্রতিসপ্তাহে তাদের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ও মুক্তিযােদ্ধাদের অস্ত্র না দিলে শরণার্থী আগমন কমারও কোনাে সম্ভাবনা নেই। তাই ত্রিপুরার সংগ্রামী জনতাকে বাঁচার তাগিদেই দাবি করতে হবে: ইন্দিরা সরকার বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দাও, অস্ত্র দাও, সাহায্য দাও। ইন্দিরা সরকারকে বাধ্য করতে হবে তার বাংলাদেশ নীতির পরিবর্তন ঘটাতে।

সূত্র: দেশের ডাক
২০ আগস্ট, ১৯৭১
০৩ ভাদ্র, ১৩৭৮