You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.14 | সিডনি মর্নিং হেরাল্ড | ১৪ জুন ১৯৭১ | সম্পাদকীয় পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ - সংগ্রামের নোটবুক

সিডনি মর্নিং হেরাল্ড | ১৪ জুন ১৯৭১ | সম্পাদকীয় পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ

পশ্চিম পাকিস্তানে শরণার্থীদের ভয়াবহ দুরবস্থ, পূর্ব পাকিস্তানের সৈন্যবাহিনীর কাজ এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের আলোচনায় আসার সিদ্ধান্ত নষ্ট হওয়ার বিষয়গুলোতে এখন বিশ্ববাসীর মনোযোগ নিবদ্ধ হয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গির কোন বিচ্যুতি হতে পারেনা। তবে আশার বিষয় যে কলেরার প্রাদুর্ভাব কিছুটা কমেছে। উদ্বাস্তুদের সংখ্যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে এবং ভারতে বর্তমানে তাদের প্রায় ছয় মিলিয়ন শরনার্থি আছে এবং বর্ষা মৌসুমের সমস্যার পাশাপাশি অপুষ্টি এবং অন্যান্য রোগবালাই এর চিন্তাও এখন যুক্ত। এটা সাময়িক সমস্যা। এর পরে রয়েছে এদের প্রত্যাবর্তনের সমস্যা। শ্রীযুক্ত রায় শুক্রবার স্পষ্টভাবে বলেন ভারতের জন ইচ্ছা নাই অনন্ত সময়ের জন্য উদ্বাস্তুদের গ্রহণ করার। প্রত্যাবর্তন পাকিস্তানের ভবিষ্যতের অনেক গুরুতর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা উত্থাপন করবে।

ব্যাপক জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ ও বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের জোরদার পদক্ষেপের ফলে সেখানে নানান ক্ষত সৃষ্টি করা হয়েছে, যার ফলে এ অঞ্চল প্রায় মৃত্যুর মুখোমুখি হতে পারে। আর্মি কার্যত প্রশাসনকে ধ্বংস করেছে। তারা আন্দারগ্রাউন্ড সরকারি কর্মকর্তাদের ও নেতাদের হত্যা করছে, বন্দি করছে। গ্রাম বা শহর নির্বিশেষে। তারা এখানকার কৃষি ধ্বংস করেছে যা এখানকার অর্থনিতির প্রধান চালিকাশক্তি। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাট শিল্প। তা ইতোমধ্যে ভারতের সাথে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন ছিল। পাটের বিকল্প সিনথেটিক উপাদান এসে পড়ায় পাট উৎপাদনকারীরা ধান উৎপাদনের দিকে ঝুঁকে পরছেন। কিন্তু রাস্তা ঘাঁট ওঁ ব্রিজ ধ্বংস হবার ফলে মার্কেটিং সুবিধা মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। চা পূর্ব পাকিস্তানের দ্বিতীয় রপ্তানি পণ্য। এটিও অবস্থা বিপন্ন। সর্বোপরি, তিন মাসের মধ্যে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা রয়েছে। কোন সন্দেহ নেই যে এখন মুসলমানরা সীমান্তে ভারতীয়দের শরণার্থী ক্যাম্পের দিকে অনুসরণ করছে।

পশ্চিম পাকিস্তানের ভবিষ্যৎও হতাশাজনক। এখানে জখমটা আত্মঘাতী। পূর্ব পাকিস্তানের থেকে পাওয়া রপ্তানি আয়ের (যা সমগ্র দেশের বাণিজ্যিক রাজস্বের প্রায় অর্ধেক) ক্ষতি এবং পশ্চিম পাকিস্তানি উত্পাদনে বিঘ্ন ঘটেছে। ইসলামাবাদ এখন বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের সম্মুখীন, সম্ভবত জুলাই এর আগেই। তাছাড়া তাকে পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্যবাহিনীর জন্য ধারাবাহিক খরচ করতে হচ্ছে। তারা মূলত শহর গুলির নিয়ন্ত্রণ করছে কিন্তু গ্রামাঞ্চল তাদের আয়ত্তের বাইরে আছে যেখানে জনসংখ্যার অধিকাংশ লোক বাস করে এবং যেখানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ এর শিকড় আছে।

অন্য কথায় বলা যায়, রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া তার রাজনৈতিক সমস্যাগুলি সামরিক শক্তির মাধ্যমে সমাধান করতে চেয়েছেন যা একটি বাহিনীর অপব্যবহার ছাড়া কিছুই নয়। বাইরের দেশের কাছে আর্থিক সহায়তার জন্য তাকে চাইতে হচ্ছে যা তার সাথে তাদের সম্পর্ক নষ্ট করছে – বিশেষ করে আমেরিকা – যারা সাহায্য দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছে যা ছিল তাদের সামরিক খাতে খরচের মূল যোগানদাতা। তারা পূর্ব পাকিস্তানের চিত্র স্বাভাবিক করতে চাচ্ছেন – কিন্তু কার নেতৃত্বে? আওয়ামীলীগের সাথে ন্যাশনাল এলেম্বলিতে বসার ব্যাপারটিও এখন ঘোলাটে। এই অবস্থায় ছয় মিলিয়ন উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসন খুব কঠিন কাজ হতে পারে। তাদের ভবিষ্যত এখন একটি হাহাকার করা সমস্যা। এটি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে।