You dont have javascript enabled! Please enable it!

আজাদ
২রা সেপ্টেম্বর ১৯৫৮
আওয়ামী লীগের পক্ষে সাফাই
জনাব মফিজুল এছলাম কর্তৃক ন্যাপ নেতাদের বিবৃতির প্রতিবাদ

পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী দলের সংগঠনী কমিটির সদস্য অধ্যাপক মফিজুল এছলাম কুমিল্লা হইতে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন যে, ন্যাশনাল আওয়ামী দলভুক্ত পরিষদ সদস্য হাজি মােহাম্মদ দানেশ ও জনাব আবদুস সামাদের প্রদত্ত ঢাকাই বিবৃতির পর ইহার নিন্দা করিয়া শেখ মুজিবর রহমানের বিবৃতিতে জনগণের মধ্যে নূতন করিয়া কৌতুক সঞ্চার হইয়াছে এবং ইহা ন্যাশনাল আওয়ামী দলের মূল ভিত্তিকেই আঘাত করিয়াছে। এখন বহু কথিত মুজিব-মাহমুদ সমঝােতার অন্যতম অংশীদার প্রদেশে ১৯৩ ধারার অভিশাপ এবং ইহার পরিণতি হিসাবে জননিরাপত্তা অর্ডিন্যান্স প্রবর্তন ও প্রদেশের নিঃস্ব জনসাধারণের উপর কর ভারের বােঝা চাপানাের জন্য প্রকাশ্যেই ন্যাশনাল আওয়ামী দলের খামখেয়ালী ও সতত পরিবর্তনশীল পার্লামেন্টারী নীতির নিন্দা করিতেছেন। এই ধরনের পারস্পরিক কাদা ছোড়াছুড়ির অধিকার গােপন সমঝােতার শর্ত ছিল কিনা তাহা অবশ্য জানা যায় নাই। ইহার ফলে ন্যাশনাল আওয়ামী দলের অবস্থা যে হাস্যকর হইয়া পড়িয়াছে, তাহা অনস্বীকার্য। আমি ইহাতে বিস্মিত হই নাই এবং বহু নিন্দিত সমঝােতার ডংকানিনাদকারীদের তাহাদের দাসসুলভ আনুগত্যের পরিবর্তে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের দুর্ব্যবহারের জন্য কিছু মনে করার কারণ নাই। অন্যদলের নিকট আত্মসমর্পণকারী যে কোন দলের ভাগ্যে ইহা ঘটিয়া থাকে। ন্যাশনাল আওয়ামী দলের নীতি নির্ধারণকারীদের দাবী অনুযায়ী ইহা যদি গণতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য প্রকৃতই আন্তরিক হয়, তবে আমি বলিতে পারি যে, তােষণনীতি কখনই এই উদ্দেশ্যে হাসেলের উপায় হইতে পারে না। দুইটি খারাপ দলের মধ্যে তুলনামূলকভাবে কম খারাপ দলকে সমর্থন করার ব্যাপারে ন্যাশনাল আওয়ামী দলের বহু কথিত যুক্তি সম্পূর্ণ অচল। সঠিকভাবে বলিতে গেলে কৃষক শ্রমিক দলের একটা ক্ষুদ্র অংশ ন্যাশনাল আওয়ামী দলের কর্মসূচীর মধ্যে মাত্র একটা কর্মসূচী অর্থাৎ যুক্ত নির্বাচনের বিরােধী। অপরদিকে সমগ্র আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন দল ইহার দুইটি মূল কর্মসুচী অর্থাৎ বৈদেশিক নীতি ও এক ইউনিটের ঘােরতর বিরােধী। আর এই নীতি কার্যকরী করার জন্য এই দলের (ন্যাশনাল আওয়ামী দল) উদ্ভব হইয়াছে। ইহার সঙ্গে যদি ন্যাশনাল আওয়ামী নেতৃদ্বয়ের দ্ব্যর্থহীন স্বীকৃতি অনুযায়ী কৃষক-শ্রমিক দলীয় সরকারের আমলের তুলনায় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতির প্রসার ও অর্থনৈতিক সংকট বৃদ্ধির অভিযােগ যােগ করা হয়। তবে আওয়ামী লীগের তুলনায় কৃষক শ্রমিক দলকে অধিকতর মন্দ বলিয়া অভিহিত করার যুক্তি বােধগম্য নহে। অবশ্য ন্যাশনাল আওয়ামী দলের নেতারা সস্তা জনপ্রিয়তা লাভ ও নিজেদের কোন অসদুদ্দেশ্য হাসেলের উদ্দেশ্যে শক্তিশালী ও প্রভাবশীল আওয়ামী লীগের পক্ষে তাবেদারীর জন্য বাজে অজুহাত দিতে থাকেন তবে অবশ্য অন্য কথা। আমি নিঃসন্দেহ যে, আশু ও চূড়ান্ত উদ্দেশ্য যাহাই হউক না কেন, কেবলমাত্র অন্যের শক্তির উপর নির্ভরশীলতা পরিহার, স্বীয় যুক্তি ব্যবহার, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মােকাবেলা এবং নিজ লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য বিজ্ঞতার সহিত সগ্রাম চালাইয়া ন্যাশনাল আওয়ামী দল তাহা হাসেল করিতে পারিবে।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!