You dont have javascript enabled! Please enable it! 1958.08.25 | অদ্য হইতে পুনরায় আওয়ামী কোয়ালিশন সরকার কর্তৃক প্রদেশের শাসনভার গ্রহণ | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক ইত্তেফাক
২৫শে আগস্ট ১৯৫৮
অদ্য হইতে পুনরায় আওয়ামী কোয়ালিশন সরকার কর্তৃক প্রদেশের শাসনভার গ্রহণ
বেলা সাড়ে নয়টায় আতাউর রহমানের নেতৃত্বে নয়া মন্ত্রীসভার শপথ অনুষ্ঠান
প্রথম পর্যায়ে মন্ত্রিসভায় মুখ্যমন্ত্রী সহ মােট ছয়জনের অন্তর্ভুক্তি সম্ভাবনা
দীর্ঘ দুইমাস পর পূর্ব পাকিস্তানে প্রেসিডেন্ট শাসনের অবসান

গতকল্য (রবিবার) গভর্ণর জনাব সুলতান উদ্দীন আহমদ আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন পার্টির নেতা জনাব আতাউর রহমান খানকে প্রদেশে নয়া মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানান। জনাব আতাউর রহমান এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করিয়াছেন।
অদ্য (সােমবার) সকাল সাড়ে ৯টায় গভর্ণমেন্ট হাউসের দরবার কক্ষে জনাব আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন তৃতীয় আওয়ামী কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা ও প্রদেশের বিভাগােত্তর আমলের নবম মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করিবেন। ভাবী মুখ্যমন্ত্রী জনাব আতাউর রহমান সহ সম্ভবতঃ মােট ৬ জন মন্ত্রী অদ্য শপথ গ্রহণ করিবেন।
যে ছয়জন মন্ত্রী অদ্য (সােমবার) শপথ গ্রহণ করিবেন তাহারা হইতেছেনঃ জনাব আতাউর রহমান খান, (মুখ্যমন্ত্রী),জনাব আবদুল খালেক, জনাব কফিলুদ্দিন চৌধুরী, মিঃ মনােরঞ্জন ধর, মিঃ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত ও জনাব মনসুর আলী। পরে আরও কয়েকজন সদস্য মন্ত্রিসভার অন্তর্ভূক্ত হইবেন বলিয়া জানা গিয়াছে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, গত ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা লাভের পর জনাব আতাউর রহমান খান ইতিপূর্বে আরও দুইবার মুখ্যমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হন। এইবার লইয়া তিনি তৃতীয় বারের জন্য প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হইবেন। এখানে আরও উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, গত ১৮ই জুন তারিখে পরিষদে বাজেটের ব্যয়-বরাদ্দ সম্পর্কিত একটি ছাঁটাই প্রস্তাবে জনাব আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে গঠিত আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা পরাজিত হয় এবং জনাব খান পদত্যাগ করেন।
জনাব আতাউর রহমান মন্ত্রিসভার পদত্যাগের পর দিবসেই কে, এস, পি কোয়ালিশনের নেতা জনাব আবু হােসেন সরকার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আসন গ্রহণ করেন। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী জনাব শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক উত্থাপিত এক অনাস্থা প্রস্তাবের ফলে আবু হােসেন মন্ত্রিসভা গত ২৩ শে জুন তারিখে ১৫৬-১৪২ ভােটে পরাজিত হয়। ইহার পর কেন্দ্রীয় সরকার। প্রদেশে দুই মাসের জন্য ১৯৩ ধারার শাসন প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং তদনুযায়ী গত ২৫শে জুন তারিখ হইতে প্রদেশে ১৯৩ ধারার শাসন প্রবর্তিত হয়। এখানে উল্লেখযােগ্য যে,অদ্য (সােমবার) জনাব আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে পার্লামেন্টারী সরকার পুনঃপ্রবর্তিত হইবার সঙ্গে সঙ্গে অদ্য হইতেই প্রদেশে প্রেসিডেন্টের শাসনের অবসান ঘটিবে। স্মরণ থাকিতে পারে যে, প্রদেশের চলতি আর্থিক সালের পূর্ণ বাজেট এখনও পরিষদে গৃহীত হয় নাই। চলতি সালের গত ১লা এপ্রিল হইতে মাত্র তিন মাসের জন্য আর্থিক ব্যয় বরাদ্দ গৃহীত হয়। ইহার পর গত ১৩ই জুন তারিখে বাজেটের অবশিষ্ট ব্যয়বরাদ্দ দাবীসমূহ পাসের জন্য পরিষদের অধিবেশন শুরু হয়। কিন্তু ব্যয়-বরাদ্দ সম্পর্কিত একটি ছাঁটাই প্রস্তাবে গত ১৮ই জুন তারিখে আতাউর মন্ত্রিসভার পতনের পর ১৯৩ ধারার শাসন প্রবর্তিত হয়। এই অবস্থায় তিন মাসের জন্য প্রেসিডেন্ট একটি আংশিক ব্যয় বরাদ্দ অনুমােদন সভায় বক্তৃতা করেন। প্রদেশে ১৯৩ ধারা। জারির পর হইতে যাহারা দিনের পর দিন করাচীতে গিয়া প্রেসিডেন্ট জনাব মীর্জা ও প্রধানমন্ত্রী জনাব নূনের নিকট ধন্না দিয়াছেন এবং আওয়ামী লীগের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও উহাদের আশীর্বাদ কুড়াইয়া সাময়িকভাবে হইলেও পাকিস্তানের বুকে প্যারেড রাজনীতির প্রবর্তন করিতে সক্ষম হইয়াছিলেন, গতকল্যকার সভায় তাহাদিগকেই। আবার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিষােদগার করিতে শুনিয়া অনেক শ্রোতাকেই মন্তব্য করিতে শুনা যায় যে, ক্ষমতা দখলের জন্য এমন কিছু নাই-যাহা। ইহারা করিতে পারেন না। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে স্বভাবসুলভ গালিগালাজ ছাড়াও প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও গভর্ণরের বিরুদ্ধেই প্রধানতঃতাহারা বক্তৃতা করেন। পরিষদ সদস্য জনাব আবদুর রব তাহার বক্তৃতায় দম্ভোক্তি করিয়া বলেন যে, আতাউর মন্ত্রিসভা পরিষদের অধিবেশন ডাকিলে প্রথম দিনেই তাহাদের পতন। অবশ্যম্ভাবী। তিনি প্রশ্ন করেন, সেমত অবস্থায় গবর্ণর জনাব সুলতান উদ্দীন ঐ দিনই পদত্যাগ করিবেন কিনা? তিনি গবর্ণমেন্ট হাউসে অনুষ্ঠিত কে-এস-পি সমর্থক। সদস্যদের সাম্প্রতিক শারীরিক প্রদর্শনীর ফলাফলের ব্যাপারে গবর্ণর জনাব সুলতান উদ্দীনের বিরুদ্ধে আওয়ামী কোয়ালিশনের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযােগ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী মালিক ফিরােজ খান নূনের এবং প্রেসিডেন্ট মীর্জারও পদত্যাগ দাবী করেন। বরিশালের জনাব বি, ডি, হবিবুল্লা বক্তৃতার বেশীর ভাগ সময়েই গ্রাম্য শ্লোক। এবং জারীগানের কলী ভাজিতে থাকেন। তিনি বলেন,কৃষক ও শ্রমিক যাহারা-তাহাদের লইয়াই কৃষক শ্রমিক পার্টি গঠিত হইয়াছে।
জনাব সােলেমান তাহার বিদেশ সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করিয়া বলেন, পাকিস্তানের মর্যাদা জনাব সােহরাওয়ার্দী বিশ্বের সম্মুখে উজ্জ্বল করিয়াছেন একথা তিনি মানেন, তবে জনাব সােহরাওয়ার্দীকে বহুবার বিদেশে যাইতে হইয়াছে। জনাব আবু হােসেন সরকার বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আলােচনা করেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলি দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট মােচনে শােচনীয় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়াছে।