দৈনিক ইত্তেফাক
৯ই আগস্ট ১৯৫৮
আওয়ামী লীগের সংগ্রামী ভূমিকা
সাতক্ষীরার জনসভায় শেখ মুজিব কর্তৃক ব্যাখ্যা
সংবাদদাতার তার
যশাের, ৮ই আগষ্ট-পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব শেখ মুজিবুর রহমান, প্রাক্তন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জনাব দিলদার আহমদ ও জনাব এম, এ, খালেক গতকল্য সকাল ১১টায় ঝিকরগাছায় আসিয়া পৌঁছেন। এক বিরাট জনতা বিভিন্ন ধ্বনি সহকারে তাঁহাদের সম্বর্ধনা জানায়। দুইশত কর্মীর উপস্থিতিতে ঝিকরগাছা আওয়ামী লীগ সম্মেলন আরম্ভ হয়। সম্মেলনে বক্তৃতা প্রসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান কর্মীদের আরও তৎপর হওয়ার জন্য অনুরােধ করেন এবং প্রতি গ্রামে যাইয়া জনসাধারণের দুঃখ-দুর্দশার খবর লওয়ার জন্য তাহাদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন যে, এখন আর চুপ করিয়া বসিয়া থাকিবার সময় নাই, কারণ সাধারণ নির্বাচন খুবই নিকটবর্তী।
জনাব দিলদার আহমদ ও জনাব এম, এ, খালেকও উক্ত সম্মেলনে বক্তৃতা করেন। অপরাহ্ন তিনটায় নেতৃবৃন্দ সাতক্ষীরায় যাইয়া পৌঁছেন এবং সেখানে জনসাধারণ কর্তৃক বিপুলভাবে সম্বর্ধিত হন। সাতক্ষীরায় অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে,আওয়ামী লীগ কর্মীবৃন্দ যে ত্যাগ স্বীকার করিয়াছেন, তাহা অতুলনীয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কর্মীবৃন্দ মুসলিম শাসকবর্গের কুশাসণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রথম সাহসিকতার সহিত সংগ্রাম করিয়াছে; গণতন্ত্র ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার জন্য তাহারা অবিরাম আন্দোলন চালাইয়া আসিয়াছে। নির্যাতন ও কারাবাস ছিল আওয়ামী লীগ কর্মীদের নিত্য সঙ্গী। তথাপি তাহারা পাকিস্তানের এবং বিশেষভাবে পূর্ব পাকিস্তানের এবং বিশেষভাবে অধিকার আদায়ের জন্য নির্ভীকভাবে সংগ্রাম করিয়া আসিয়াছে।
আওয়ামী লীগকে ভােট না দিবার জন্য জনাব কাইয়ুম খান জনসাধারণের প্রতি যে আবেদন জানাইয়াছেন, তাহার উল্লেখ করিয়া শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে, জনাব কাইয়ুম খান বােধ হয়, জানেন না যে, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে জনসাধারণ মুসলিম লীগকে উৎখাত করিয়াছে এবং এ-সময়ে মুসলিম লীগ এমন কিছুই করে নাই – যে জন্য তাহারা ভােট দাবী করিতে পারে। শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগকে শূন্যহাতে ফিরতে হইয়াছে; এবারও তাহাদের শূন্য হাতেই ফিরিতে হইবে। তিনি আরও বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ অক্ষরজ্ঞানহীন হইতে পারে, কিন্তু তাহারা রাজনীতি-সচেতন। আগামী সাধারণ নির্বাচনেও তাহারা মুসলিম লীগকে পুনরায় উচিত শিক্ষা দিবে। জনাব এম, এ,খালেক তাঁহার বক্তৃতায় মুসলিম লীগ আমলের কুশাসনের বর্ণনা দেন এবং সােহরাওয়ার্দী-মন্ত্রীসভার আমলে যেসব। জনকল্যাণমূলক কাজ করা হইয়াছে, তাহা জনসাধারণের নিকট তুলিয়া ধরেন। পরিশেষে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে সমবেত হইবার জন্য তিনি জনসাধারণের নিকট আবেদন জানান। জনাব দিলদার আহমদ সভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলেন যে, মুসলিম লীগ সরকার মাত্র খুলনা জেলাতেই দুর্ভিক্ষ প্রতিরােধ করিতে পারে নাই। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার সমগ্র প্রদেশকে দুর্ভিক্ষের হাত হইতে বাঁচাইয়াছেন। অদ্য আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ নড়াইল যাত্রা করিয়াছেন।