You dont have javascript enabled! Please enable it!

দৈনিক ইত্তেফাক
১১ই আগস্ট ১৯৫৮
শহীদ নেতৃত্বই পাকিস্তানকে বিপর্যয়ের হাত হইতে রক্ষা করিতে পারে
মাগুরার জনসভায় শেখ মুজিবুরের বক্তৃতা : জনাব খালেক কর্তৃক আওয়ামী
লীগকে শক্তিশালী করার আহ্বান

তারযােগে প্রাপ্ত
যশাের, ১০ই আগষ্ট-পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান গতকল্য মাগুরার এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতা দানকালে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকাকালে মুসলিম লীগ ও যুক্তফ্রন্ট সরকারের অপকীর্তির আলােচনাপূর্বক আওয়ামী লীগ সরকারের জনকল্যাণমূলক কার্যাবলীর বিস্তারিত বর্ণনা দান করেন। জনাব মুজিবুর রহমান তাঁহার বক্তৃতায় জনাব সােহরাওয়ার্দীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের আলােচনা করেন এবং বলেন যে, একমাত্র সােহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বই পাকিস্তানকে যে কোন বিপর্যয়ের হাত হইতে রক্ষা করিতে পারে। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান, প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী ও পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব এম, এ, খালেক ও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রধান জনাব জিল্লুর রহমান সমভিব্যাহারে গতকল্য মাগুরা গমন করেন। মাগুরা উপস্থিতির পর তাহাদিগকে বিপুল সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হয় ও মাল্যভূষিত করা হয়।
মাগুরার এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতাদানকলে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে, বিগত সাধারণ নির্বাচনে জনসাধারণ ২১ দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্টকে ভােটদান করিয়াছিল। কিন্তু জনাব আবু হােসেন সরকারের নেতৃত্বে গঠিত যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ২১ দফার একটিমাত্র দফাও কার্যকরী করিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়। তদুপরি মুসলিম লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকাকালে যে নীতি অনসুরণ করিয়াছিল যুক্তফ্রন্টও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হইয়া ঠিক অনুরূপ নীতি অনুসরণ করে ও জনসাধারণের প্রতি মুসলিম লীগের মতই চরম অবিচার করিতে থাকে। দেশ যখন এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন ঠিক সেই সময় জনাব আবু হােসেন সরকার তাঁহার সরকার পরিত্যাগ করেন এবং এই মর্মে ঘােষণা প্রকাশ করেন যে, আসন্ন দুর্ভিক্ষে কমপক্ষে হইলেও দেশের ১০ লক্ষ লােক জীবন হারাইবে।
জনাব মুজিবুর রহমান বলেন, দেশের অনুরূপ সঙ্কটময় মুহূর্তে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তিদান করেন। দুর্ভিক্ষের হাত হইতে জনগণকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সরকার বার্মা, থাইল্যান্ড, ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, সােভিয়েট ইউনিয়ন প্রভৃতি রাষ্ট্র হইতে চাউল আমদানী করেন। বিদেশ হইতে ৮০ কোটি টাকার চাউল আমদানী করা হয়। লঙ্গরখানা প্রতিষ্ঠা করিয়া ও অন্যান্য পদ্ধতিতে ঐ চাউল প্রদেশের সর্বত্র বিতরণ করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের অনুরূপ কার্যতৎপরতার ফলে দেশের জনসাধারণ অবধারিত মৃত্যুর হাত হইতে রক্ষা পায় বলিয়া তিনি উল্লেখ করেন। শেখ মুজিবুর রহমান আরও বলেন যে, মাত্র ২০ মাসকাল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকাকালে আওয়ামী লীগ সরকার কুখ্যাত নিরাপত্তা আইন বাতিল করেন। জনসাধারণকে নির্বিবাদে সভা-সমিতি অনুষ্ঠান ও সকল প্রকার নাগরিক অধিকার প্রদান করা হয়। সরকারের পক্ষ হইতে পাটের লাইসেন্স ফি উঠাইয়া দেওয়া হয়। ২১শে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি ঘােষণা করা হয় ও বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা। হিসাবে ঘােষণা করা হয়। জনাব হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালে দেশের জন্য কল্যাণকর যাহা কিছু করিয়াছেন, জনাব মুজিবুর রহমান তাহার বক্তৃতায় তাহার বিস্তারিত আলােচনা করেন। তিনি বলেন যে, জনাব সােহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে দেশের উন্নয়ন খাতে ৪৫ কোটি টাকা ও টেষ্ট রিলিফের জন্য ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন। পরিশেষে তিনি বলেন যে, একমাত্র জনাব সােহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বই পাকিস্তানকে যে কোন প্রকার বিপর্যয়ের হাত হইতে রক্ষা করিতে পারে। প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী জনাব আবদুল খালেক তাহার বক্তৃতায় মুসলিম লীগ সরকার ও আওয়ামী লীগ সরকারের কার্যাবলীর তুলনামূলক আলােচনা করেন। তিনি আওয়ামী লীগের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জ্ঞাপন করেন। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান জনাব জিল্লুর রহমান মুসলিম লীগ সরকারের অপকীর্তির বিস্তারিত আলােচনা করেন। তিনি আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীতে যােগদানের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জ্ঞাপন করেন। সভায় সভাপতি জনাব আতােয়ার আলীও সারগর্ভ বক্তৃতা করেন।
নড়াইলের জনসভায় বক্তৃতা
যশাের হইতে এ, পি, পি, পরিবেশিত পূর্ববর্তী এক সংবাদে বলা হয় যে, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান প্রদেশের আর্থিক অবনতির জন্য মুসলিম লীগের দুঃশাসনকে দায়ী করেন। যশাের হইতে কয়েক মাইল দূরে অবস্থিত নড়াইলের এক জনসভায় বক্তৃতা দানকালে শেখ মুজিবুর বলেন যে, মুসলিম লীগ শাসন আমলে পূর্ব পাকিস্তানকে বঞ্চিত করা হয় বিশেষ করিয়া শিল্পোন্নয়ন খাতে পূর্ব পাকিস্তান নিদারুণভাবে বঞ্চিত হয়।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!