You dont have javascript enabled! Please enable it! 1958.07.06 | জনাব শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতা | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক ইত্তেফাক
৬ই জুলাই ১৯৫৮
জনাব শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতা

প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব শেখ মুজিবুর রহমান তুমুল করতালির মধ্যে বলেন, প্রকৃত পক্ষে কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রীর পদ হইতে জনাব হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর পদত্যাগের পর হইতেই পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য প্রচেষ্টা চালানাে হয়। কারণ চক্রান্তকারীরা আওয়ামী কোয়ালিশন সরকারের পতন ঘটাইয়া যুক্ত নির্বাচনের ভিত্তিতে আগামী সাধারণ নির্বাচন বানচাল করিতে চাহিতেছিল। জনাব রহমান বলেন, নির্বাচন-ভীতু এই প্রতিক্রিয়াশীল চক্র মুসলিম লীগের আমলে ১৯৪৭ সাল হইতে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে ৩৬টি উপ-নির্বাচন বন্ধ রাখিয়াছিল। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পরই প্রদেশে ১৭টি উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠান করে এবং খােদার মর্জি দুইটি সংখ্যালঘু আসন ও একটি মুসলিম আসন ছাড়া বাকী সবগুলি আসনে আওয়ামী লীগ জয়ী হইয়াছে। প্রদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সেক্রেটারী বলেন যে, আওয়ামী লীগ নীতিতে বিশ্বাসী-তাই নীতি বিসর্জন দিয়া আওয়ামী লীগ ক্ষমতা আঁকড়াইয়া রাখিতে চাহে না। অথচ কে, এস, পি ক্ষমতার লােভে একবার পৃথক নির্বাচন ও আর একবার যুক্ত নির্বাচন সমর্থন করিয়াছে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি উল্লেখ করেন যে, এই কে, এস, পি-র প্রাদেশিক সভাপতি সৈয়দ আজিজুল হক কিছুদিন পূর্বে করাচীতে বলিয়া ছিলেন যে, পৃথক নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তিনি ঢাকায় আসিবেন না। আমি তাহার চক্রান্তকারী বন্ধুদের অনুরােধ করিয়াছিলাম জনাব আজিজুল হকের জন্য যেন করাচীতেই একটি বাড়ী নির্মাণ করিয়া দেন। কারণ পৃথক। নির্বাচন আর কায়েম হইবে না। আবার এই সৈয়দ আজিজুল হকই ক্ষমতার লােভে কোনরূপ দ্বিধা না করিয়াই ন্যাপের পাঁচ দফায় সহি প্রদান করেন। অপরদিকে নেজামে ইসলাম ও মুসলিম লীগকে পৃথক নির্বাচনের আশ্বাস দিয়াছেন।
জনাব শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযােগ করা হইয়াছে। যে, আওয়ামী লীগ হিন্দু-ঘেঁষা। অথচ পরিষদের ৭২ জন অমুসলিম সদস্যের মধ্যে ২২ জন ছাড়া বাকী সকলেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রহিয়াছে। কারণ, ইহারা পৃথক নির্বাচন চায়। আওয়ামী লীগ সেক্রেটারী বলেন, আগামী নির্বাচনে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত পিছাইবার ষড়যন্ত্রেই পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও আওয়ামী কোয়ালিশনকে মন্ত্রিসভা গঠন করিতে না দিয়া প্রদেশে ১৯৩ ধারা জারি করা হইয়াছে। এই কারণেই চক্রান্তকারীরা কেন্দ্রে নয়া সরকার গঠন করিয়া পৃথক নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অজুহাত করিয়া পুনরায় ভােটার তালিকা প্রণয়ন ইত্যাদি দ্বারা ১৯৬২ সাল পর্যন্ত নির্বাচন পিছাইবার প্রচেষ্টা করিতেছে। এই প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে, কে, এস, পি নেতৃবৃন্দ দল ভারী করার জন্য পরিষদ সদস্যদের নির্বাচন পিছাইবার প্রলােভন পর্যন্ত দেখাইয়াছে। অতঃপর তুমূল হর্ষধ্বনির মধ্যে জনাব শেখ মুজিবুর রহমান চক্রান্তকারীদের হুঁশিয়ারি করিয়া বলেন, যদি দেশে যুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী সাধারণ নির্বাচন না হয় এবং প্রদেশ হইতে অগণতান্ত্রিক ১৯৩ ধারার শাসন প্রত্যাহার না হয় তবে দেশব্যাপী গণ-আন্দোলন হইবে এবং ইহার জন্য আওয়ামী লীগ জেল-জুলুমকিছুতেই দমিবে না। কারণ আওয়ামী লীগ আদর্শের জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকারে সকল সময়ই প্রস্তুত রহিয়াছে। আমাদের নেতা জনাব হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী এই আদর্শের জন্য প্রধানমন্ত্রিত্ব পর্যন্ত ত্যাগ করিতে দ্বিধাবােধ করেন নাই।