You dont have javascript enabled! Please enable it!

আজাদ
৯ই ডিসেম্বর ১৯৫৭
দেশে গণতন্ত্র বিকাশের পথে আওয়ামী লীগ কর্তৃক বাধা সৃষ্টি
শেখ মুজিবর রহমানের অভিযােগের জওয়াবে শাহ আজিজের বিবৃতি

ঢাকা, ৮ই ডিসেম্বর -পূৰ্ব্ব পাকিস্তান মােছলেম লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ। আজিজুর রহমান অদ্য এক বিবৃতি প্রসঙ্গে বলেন, নিজের দলের গা বাঁচাইবার জন্য জনাব শেখ মুজিবর রহমান সত্য ঘটনা বিকৃত করিয়া যে বিবৃতি দান করিয়াছেন, তাহা পাঠ করিয়া আমি বিস্মিত হইয়াছি।’
শাহ আজিজুর রহমান বলেন, ইহা অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় যে, গত ৭ই ডিসেম্বর পৃথক নিৰ্বাচনের দাবীতে মিছিলের উপর আক্রমণ সম্পর্কে এমন কি তিনি তাঁহার নিজের সরকারের এশতেহারের সহিতও একমত নহেন। গুলিস্তান সিনেমা হলের পার্শ্বে শােভাযাত্রীরা জনগণের উপর অস্ত্রশস্ত্রসহ হামলা চালায় বলিয়া শেখ মুজিবর রহমান যে বিবৃতি দিয়াছেন , তাহা মিথ্যা ও দুরভিসন্ধিমূলক। গুলিস্তান সিনেমা হলের সম্মুখে রাস্তার উভয় পার্শ্বে হাজার হাজার লােক স্লোগান তােলে বলিয়া তিনি যে মন্তব্য করিয়াছেন, তাহাও অনুরূপভাবে মিথ্যা ও স্বেচ্ছাপ্রণােদিত। জোরপূর্বক জনমত দমন এবং হাঙ্গামা সৃষ্টি করার ব্যাপারে জনগণের নিকট আওয়ামী লীগের স্বরূপ উদঘাটিত হইয়া পড়িয়াছে। জনাব মুজিবর রহমান নিজের গা বাঁচাইবার জন্য পাল্টা অভিযােগ করিয়াছেন। এই প্রসঙ্গে আমি স্মরণ করাইয়া দিতে চাই যে, সমগ্র পূৰ্ব্ব পাকিস্তানে এবং বিশেষভাবে ঢাকায় জনাব শেখ মুজিবর রহমান বিপুল ব্যয়ে পালিত তাহার ঝটিকা বাহিনীর সহযােগিতায় মােছলেম লীগপন্থীদের জোরপূর্বক দমাইয়া রাখিবার এবং জনসভা ভাঙ্গিবার জন্য ত্রাসের রাজত্বের সৃষ্টি করিয়াছেন। আওয়ামী লীগ কর্তৃক আমাদের বহু জনসভা ভাঙ্গিয়া দেওয়ার এবং সরদার নিশতার, মওলবী তমিজুদ্দীন খান, মওলানা আবদুল্লাহেল কাফী, জনাব ফজলুর রহমান, মওলানা আকরাম খাসহ বহু বিশিষ্ট মােছলেম লীগ নেতা ও কর্মীকে শেখ মুজিবর রহমানের কালাসৈন্যদের প্রহারের নজীর রহিয়াছে। পক্ষান্তরে পূর্ব পাকিস্তানে মােছলেম লীগ পন্থীদের দ্বারা কোথাও তাহাদের সভা ভাঙ্গার চেষ্টা করার নজীর নাই। এমনকি শেখ মুজিবর রহমান তাহার সগােত্রীয়দেরও ছাড়েন নাই। ঢাকায় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সম্মেলন ও ইহার নেতৃবৃন্দ মওলানা ভাসানী এবং মিয়া এফতেখার উদ্দীন জোরজবরদস্তি ও প্রহারের কবলিত হন। ইহা এখন দিবালােকের মত সুস্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে যে, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবীদার আওয়ামী লীগ ইহার সৃষ্টির পর হইতে, বিশেষতঃ আওয়ামী লীগ রাজত্বের আমলে জনমতের কণ্ঠরােধের চেষ্টা করিতেছে এবং দেশে যথাযথভাবে গণতন্ত্রের বিকাশের পথে বাধা সৃষ্টি করিতেছে। আমাদের একমাত্র অপরাধ এই যে, আমরা আত্মরক্ষার এবং ধৰ্ম্ম-নিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে এছলামকে রক্ষার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ইহা সত্য নহে যে, আমাদের মিছিল। শহরের মধ্য দিয়ে প্রদক্ষিণকালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুইটি দোকান আক্রান্ত হয়। আমি যে সংবাদ পাইয়াছি, তদনুযায়ী শাহবাগ হােটেলে আমাদের মিছিল ছত্রভঙ্গ হইয়া যাওয়ার পর কলতাবাজার হইতে আওয়ামী লীগের ক্ষুদ্র শােভাযাত্রা বাহির হয়। তাহারাই সংশ্লিষ্ট দোকানসমূহ আক্রমণ করে। জনাব রহমান আমাদের উপর দোষারােপের বৃথাই চেষ্টা করিয়াছেন।
জনাব আজিজুল হকের প্রতিবাদ: পাকিস্তান কৃষক-শ্রমিক পার্টির কার্যকরী সভাপতি জনাব সৈয়দ আজিজুল হক অদ্য এক বিবৃতি প্রসঙ্গে স্থানীয় কতিপয় সংবাদপত্রে তিনি “সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা সৃষ্টির পরিকল্পনা করিয়াছিলেন বলিয়া যে সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছে, তাহার প্রতিবাদ করেন। তিনি ইহাকে মিথ্যা, বিদ্বেষপ্রসূত এবং জনগণের সম্মুখে তাহাকে হেয় করার প্রচেষ্টা বলিয়া উল্লেখ করেন। জনাব আজিজুল হক বিবৃতিতে বলেন, “বহু লােক আমাকে জানেন, আমি ইহা দাবী করি না। কিন্তু আমি ইহা বিশেষ বিনয়ের সহিত দাবী করিতে পারি যে, আমাকে যাহারা জানেন, তাহারা ইহা ভালভাবেই জানেন যে, গতকল্যকার জনসভার সংবাদ সম্পর্কে আমার বিরুদ্ধে জনাব হামিদুল হক চৌধুরীর জয়টাকে যে সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছে, তাহা করা আমার পক্ষে অসম্ভব। বর্তমান ক্ষেত্রে আমি জনাব হামিদুল হকের সহিত বিতর্কে প্রবৃত্ত হইতে চাহি না। আমি আমার উকিলকে এ সম্পর্কে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থাবলম্বনের নির্দেশ দিয়াছি। যে লােক বিভ্রান্তিবশে নিজের অতীত বিস্মৃত হইয়া যায়, তাঁহার সম্পর্কে আমি কেবলমাত্র করুণা প্রদর্শনই করিতে পারি।
জনাব মােহাম্মদ সােলায়মান
পূর্ব পাকিস্তান কৃষক-শ্রমিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক জনাব মােহাম্মদ সােলায়মান অদ্য এক বিবৃতি প্রসঙ্গে বলেনঃকতিপয় সংবাদপত্রে বিশেষতঃ জনাব হামিদুল হক চৌধুরীর মুখপত্রে যে সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছে, তাহাতে আমি আশ্চর্যান্বিত হইয়াছি। গতকল্যকার পল্টন ময়দানের জনসভায় যুক্ত নিৰ্বাচনপন্থীদের ভিত্তিমূল কাপাইয়া দিয়াছে এবং বিভ্রান্ত হইয়া এখন পূর্ব পাকিস্তানে পৃথক নির্বাচনের দাবীতে যে জনপ্রিয় আন্দোলন গড়িয়া উঠিয়াছে, তাহার বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা শুরু করিয়াছে। শােভাযাত্রীরা যুক্ত নিৰ্বাচনপন্থীদের আক্রমণ করে বলিয়া যে সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছে, তাহা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা। স্টেটসম্যান ও অন্যান্য নিরপেক্ষ সংবাদপত্রে যে সমস্ত সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছে, তাহাতে দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগই মিছিলের উপর হামলা চালায়। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ সরকারের এশতেহারেও বলা হইয়াছে যে, জিন্না এভিনিউয়ে শােভাযাত্রীদের উপর হামলা করা হয় এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। সমস্ত কিছু উস্কানীর মুখেও শােভাযাত্রীরা শান্ত ছিল এবং তাহারা তাহাদের গন্তব্যস্থল হােটেল শাহবাগে হাজির হয়। এই প্রসঙ্গে আমি আরও বলিতে চাই যে, গতকল্যকার সভা সম্পর্কে প্রচারণা চালাইবার কালে নেজামে এছলাম, কৃষক-শ্রমিক পার্টি, মােছলেম লীগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা আওয়ামী লীগপন্থীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। নারায়ণগঞ্জ হইতে বাসে করিয়া সভায় আসারকালে নারায়ণগঞ্জের বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতার বাসভবনের নিকট আক্রান্ত হয়।
মওলানা আবদুর রহীম
পূর্ব পাকিস্তান জামাতে এছলামীর আমীর মওলানা আবদুর রহীম এক বিবৃতিতে বলেনঃ- পৃথক নির্বাচনের দাবীতে গতকল্য সন্ধ্যায় জনসভা ও মিছিলের সাফল্য যুক্ত নিৰ্বাচনপন্থীদের মধ্যে ত্বরিত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করিয়াছে। স্থানীয় ৪খানি সংবাদপত্র কাল্পনিক সাম্প্রদায়িক উস্কানীর প্রচারণা চালাইয়াছে। জনাব সােহরাওয়ার্দীর কথা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের অসুস্থ সাধারণ সম্পাদক এক বিবৃতি প্রদান করিয়াছেন এবং কলিকাতার অমৃতবাজার পত্রিকায় তাহা গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হইয়াছে। তিনখানি বাংলা দৈনিক ও একখানি স্থানীয় ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা গতকল্য সরকারী এশতেহারের সম্পূর্ণ বিপরীত কাল্পনিক লুঠ, অগ্নিসংযোেগ, সংঘর্ষ এবং শান্তিভঙ্গের সংবাদ প্রকাশ করিয়াছে। শেখ ছাহেব জলদী জলদী বিবৃতি দেওয়ার পূৰ্ব্বে তাহার নিজের সরকার প্রাদেশিক সরকারের সহিত সরকারী এশতেহার সম্পর্কে আলােচনা করিতে পারিতেন। আমি পর্দার অন্তরালে থাকিয়া যাহারা গুণ্ডা ও রাস্তার বালকদিগকে “পবিত্র আমানত রক্ষার অজুহাতে উসকানী দিতেছে, তাহাদিগকে এই বিপদজনক খেলা হইতে নিরস্ত থাকার জন্য হুঁশিয়ার করিয়া দিতেছি। এ ব্যাপারে আমি সরকারেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করিতেছি। -এ পি পি

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!