You dont have javascript enabled! Please enable it!

আজাদ
১৬ই নভেম্বর ১৯৫৭
জাতীয়তাবাদ গঠনে যুক্ত নির্বাচন
পল্টন ময়দানের সভায় উজীরে আলা কর্তৃক গুরুত্ব ব্যাখ্যা

স্টাফ রিপাের্টার
গতকল্য (শুক্রবার) অপরাহ্নে পুরানা পল্টন ময়দানে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে যুক্ত নির্বাচন দিবস উপলক্ষে এক জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের উজিরে আলা জনাব আতাউর রহমান খান বলেন যে, হিন্দু-মুছলমানকে লইয়া এক জাতীয়তাবাদ গড়িয়া তােলার জন্য সমগ্র পাকিস্তানে যুক্ত নিৰ্বাচন প্রথা প্রবর্তন করিতে হইবে। সভায় প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা তর্কবাগীশ সভাপতিত্ব করেন। উজিরে আলা জনাব আতাউর রহমান খান আরাে বলেন যে, নির্বাচন পদ্ধতির সহিত ধৰ্ম্মের প্রশ্ন জড়িত করা অত্যন্ত অনুচিত। এই প্রসঙ্গে তিনি মওলানা আতহার আলীর তীব্র সমালােচনা করিয়া বলেন যে, মওলানা ছাহেব কোনদিন পাকিস্তান চাহেন নাই এবং এখনাে পাকিস্তানের উন্নতি চাহেন কিনা বলিতে পারেন না। তবে তিনি (উজিরে আলা) মওলানার মত দাড়ি না রাখিলেও তিনি মুছলমান হিসাবে কাহারাে চেয়ে কম নন। মওলানা আতাহার আলীর মত মানুষ ধর্মের নামে ব্যবসা করিয়া জীবিকা নিৰ্বাহ করিতে পারেন, কিন্তু তিনি তাহা পারেন না। উজিরে আলা বলেন যে, যুক্ত ও পৃথক নিৰ্বাচনের ঝগড়া চলিতে থাকিলে দেশ ধ্বংস হইয়া যাইবে। একবার যুক্ত নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হইয়াছে। কাজেই এখন ইহা পরিবর্তন করা নিতান্ত অশুভ কাজ হইবে। তিনি সকলকে যুক্ত নির্বাচন প্রথা সমর্থনের আহ্বান জানান। প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব শেখ মুজিবর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পূর্ব পাকিস্তানে শিল্প স্থাপনের জন্য যে সমস্ত মঞ্জুরী প্রদান করিয়াছেন, সেই ব্যাপারে দুর্নীতি প্রমাণের জন্য আমি বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারকে চ্যালেঞ্জ প্রদান করি।
জনাব মুজিবর রহমান বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানকে চিরদিন শিল্পে অনগ্রসর করিয়া রাখার উদ্দেশ্যেই বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দকৃত ৫ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার মঞ্জুরী বাতেল করিয়া দিয়াছেন। নিজেদের আসল উদ্দেশ্য ঢাকিবার জন্য তাহারা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযােগ আনয়ন করে। জনাব রহমান এই অভিযােগ প্রমাণের জন্য চ্যালেঞ্জ প্রদান করেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে সাবধান করিয়া বলেন যে, মিথ্যার ধূম্রজাল সৃষ্টি করিয়া পূৰ্ব্ব পাকিস্তানের শিল্প উন্নয়ন বন্ধ করিয়া রাখিলে তাহার পরিণাম ফল অত্যন্ত ভয়াবহ হইতে বাধ্য। জনাব মুজিবর রহমান বলেন, পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হইলে সংখ্যানুপাতে প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করিতে হইবে। তিনি আরাে বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের গত উপনির্বাচনের সময় জনগণ প্রমাণ করিয়া দিয়াছেন যে, তাহারা যুক্ত নির্বাচন সমর্থন করে। এই সময় আওয়ামী লীগ ৭টা আসনের মধ্যে ৬টি আসন লাভ করে। হিন্দু-মুছলমান এক সঙ্গে মিলিয়া যদি মন্ত্রিত্ব করা যায়, তবে হিন্দু-মুছলমান উভয়ে মিলিয়া কেন ভােট দিতে পারিবে না তাহা তিনি জিজ্ঞাসা করেন। তিনি বলেন, পূৰ্ব্ব পাকিস্তানের উপর পৃথক নিৰ্বাচন চাপাইয়া দেওয়া হইলে তাহা কিছুতেই বরদাশত করা যাইবে না। জনাব মুজিব জনসাধারণকে পূৰ্ব্ব পাকিস্তানের দাবী-দাওয়া আদায়ের জন্য সংগ্রাম করার আহ্বান জানান।
তিনি উল্লেখ করেন যে, জনাব সােহরওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে এক বৎসরের মধ্যেই ৪০ কোটি টাকা উন্নয়ন কার্যের জন্য এবং ৫ কোটি টাকা শিল্প উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ করেন। সভায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব আবদুল হামিদ চৌধুরী এবং রফিকুল হােসেন এম, পি, এ বক্তৃতা করেন।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!