You dont have javascript enabled! Please enable it!

দৈনিক ইত্তেফাক
২৬শে অক্টোবর ১৯৫৭
বিমান বন্দরে সম্বর্ধনা

করাচীতে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির বেড়াজাল হইতে অব্যাহতি লাভের পর জনাব সােহরাওয়ার্দী গতকল্য (শুক্রবার) পি,আই,এ, বিমানযােগে ঢাকা বিমানবন্দরে পৌছিলে বিমানবন্দরে নেতৃ সম্বর্ধনার এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়। প্রিয় নেতাকে অভ্যর্থনা জ্ঞাপনের জন্য সকাল দশটা হইতেই হাজার হাজার নগরবাসী বিমানবন্দর অভিমুখে যাত্রা করে। বেলা এগারটার দিকে অসংখ্য গাড়ী বােঝাই করিয়া জনসাধারণ বিমানবন্দরে গমন করে। গণতন্ত্রের দিশারী জনাব সােহরাওয়ার্দীকে সাদর অভ্যর্থনা জানাইবার জন্য এই দিন সুদূর পল্লী অঞ্চল হইতেও হাজার হাজার দেশবাসী ঢাকা আগমন করে। ইহার মধ্যে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ভৈরব প্রভৃতি স্থানের নাম উল্লেখযােগ্য। নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, এমনকি সুদূর ভৈরব হইতেও ঢাকায় আগমন করিয়া জনসাধারণ যেভাবে জনাব সােহরাওয়ার্দীকে সম্বর্ধনা জানান, তাহা চিরস্মরণীয় হইয়া থাকিবে।
গতকল্য নারায়ণগঞ্জ হইতে পঞ্চাশটিরও বেশী বাস বােঝাই হইয়া শােভাযাত্রা সহকারে নারায়ণগঞ্জ তেজগাঁও বিমানবন্দরে গমন করে। বেলা প্রায় সাড়ে এগারটার দিকে তেজগাঁও বিমানবন্দরের চতুর্দিকে এবং অফিস গৃহের ছাদে তিল ধারণের স্থানও ছিল না এবং বিমান অবতরণের পূর্ব হইতেই বিরাট জনতা জনাব সােহরাওয়ার্দী জিন্দাবাদ, আওয়ামী লীগ জিন্দাবাদ, পাকিস্তান জিন্দাবাদ, মীর জাফরী চলবে না,” ইত্যাদি ধ্বনি দ্বারা বিমানবন্দর মুখরিত করিয়া তােলে। বেলা ১০ টা ২০ মিনিটে বিমানটি বন্দরে অবতরণ করে এবং উহা টারমাকে আসিয়া পৌছার পূর্বেই পুলিশের কর্ডন ভেদ করিয়া জনতা বাঁধ ভাঙ্গা বন্যার ন্যায় সম্মুখে দৌড়াইয়া যায়। জনাব সােহরাওয়ার্দী বিমানের সিড়িতে আবির্ভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গগণবিদারী কণ্ঠে জনাব সােহরাওয়ার্দী জিন্দাবাদ ও আওয়ামী লীগ জিন্দাবাদ ধ্বনি দ্বারা জনতা তাহাকে অভিনন্দন জানায়। জনাব সােহরাওয়ার্দী জনতার উচ্ছাসে এতই অভিভূত হইয়া পড়েন যে, তিনি কিছুক্ষণ সিঁড়িতে দাঁড়াইয়া থাকেন এবং নিজস্ব মুভি ক্যামেরায় তাহাদের ছবি তােলেন। শেখ মুজিবুর রহমান সিড়িতে উঠিয়া জনাব সােহরাওয়ার্দীকে মাল্যভূষিত করেন। জনাব সােহরাওয়ার্দী সিড়ির কিয়দুর নামিয়া আসিতেই মুখ্যমন্ত্রী জনতার স্রোত ঠেলিয়া গিয়া জনাব সােহরাওয়ার্দীকে মাল্যভূষিত করেন। অতঃপর বহু কষ্টে তাহাকে জনতার ভিড়ের মধ্যে দিয়া ভি, আই, পি কক্ষে নিয়া আসা হয়। কিন্তু জনতা তাহাকে নিকট হইতে দেখিবার জন্য এতই আগ্রহান্বিত হইয়া উঠে যে, ভি, আই, পি, কক্ষের সম্মুখে রীতিমত লড়াই বাধিয়া যায়। বিমানবন্দরে প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ পরিষদের বহু সদস্য ও ছাত্রনেতা জনাব সােহরাওয়ার্দীকে সাদর অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন।
জনাব সােহরাওয়ার্দী ভি, আই, পি কক্ষে ঘণ্টাধিককাল সাংবাদিকদের সহিত আলােচনা করেন। তাহাকে একখানি খােলা জীপে দেড় মাইল দীর্ঘ এক শােভাযাত্রা শুরু হয়। এই শােভাযাত্রার গাড়ীতে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে দীর্ঘ একঘণ্টা ২০ মিনিট ঢাকার তেজগাঁও অভিমুখে একটি গাড়ি যাইতে পারে নাই। বিমানে করাচী যাত্রীগণ পথে গাড়ী থামাইয়া পদব্রজে বন্দরে গমন করেন। এইদিন তেজগাঁওয়ের পথে যানবাহন ও চলাচলের যে ভিড় পরিলক্ষিত হয় তা ঢাকার ইতিহাসে অবিস্মরণীয়। শােভাযাত্রার হাজার হাজার নগরবাসী সারা পথে “জনাব সােহরাওয়ার্দী জিন্দাবাদ”, “আওয়ামী লীগ জিন্দাবাদ” ধ্বনি দিতে থাকে। শহরে শােভাযাত্রীরা ছত্রভঙ্গ হইয়া যায়।
নারায়ণগঞ্জ এবং অন্যান্য স্থান হইতে আগত দেশবাসী সভায় যােগদান করেন। সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের পঞ্চাশটি বাস শােভাযাত্রা সহকারে ঢাকা ত্যাগ করে।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!