দৈনিক ইত্তেফাক
১০ই সেপ্টেম্বর ১৯৫৭
কুমিল্লার বৃহত্তম জনসভায় ‘মওলানা ভাসানীর ভূমিকার নিন্দা
পররাষ্ট্র নীতির প্রতি সমর্থন ও শহীদ নেতৃত্বে আস্থা জ্ঞাপন করিয়া প্রস্তাব গ্রহণ
টেলিফোন যােগে প্রাপ্ত
কুমিল্লা, ৯ই সেপ্টেম্বর-অদ্য বৈকালে এখানে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে, দেশের সর্বাঙ্গীন উন্নতি সাধনের ব্রত লইয়াই বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করিয়াছেন এবং কেবলমাত্র এই উদ্দেশ্যকে বাস্তবে রূপায়িত করার জন্যই তাঁহারা অবিরাম সংগ্রাম চালাইয়া যাইতেছেন ও যাইবেন। কুমিল্লা মিউনিসিপ্যালিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান শ্রী যতীন্দ্র মােহন রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বিপুল জনসমাবেশ হয়। প্রত্যক্ষদর্শীর মতে সাম্প্রতিক কালের মধ্যে এইরূপ বিরাট জনসভা আর হয় নাই। সভায় প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ, প্রাদেশিক পাট দফতরের মন্ত্রী জনাব আবদুর রহমান খান, এম,পি, এ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান জনাব জিল্লুর রহমান ও আরও অনেকে বক্তৃতা করেন। সভায় গৃহীত প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় সরকারের বর্তমান পররাষ্ট্র নীতির প্রতি পূর্ণ সমর্থন। জ্ঞাপন করা হয় এবং জনাব শহীদ সােহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা জ্ঞাপন করা হয়। জনাব শেখ মুজিবুর রহমান তাহার বক্তৃতায় ‘মওলানা ভাসানীর সাম্প্রতিক কার্যকলাপের তীব্র সমালােচনা করেন। তিনি বলেন, মওলানা সাহেবের কথায় ও কাজে কোন সামঞ্জস্য নাই। জনাব রহমান মুসলিম লীগ আমলের কুশাসনের ফিরিস্তি প্রদান করিয়া বলেন, মুসলিম লীগ পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিয়া গিয়াছে, তাহার অভিশাপ হইতে প্রদেশের মুক্তি সাধনের ব্যাপারটি সময় সাপেক্ষ। তিনি আরও বলেন, পূর্ব পাকিস্তান দেশের শতকরা ৬০ ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। অথচ মুসলিম লীগ শাসনের আমলে পূর্ব পাকিস্তানকে বঞ্চিত করিয়া ইহার প্রায় সম্পূর্ণ অংশই পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয় করা হইয়াছে। তিনি বলেন, সাত বৎসরের লীগ শাসনের পর প্রদেশের অর্থনৈতিক কাঠামাে প্রায় ধসিয়া পড়িয়াছিল। এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা লাভের পর প্রদেশের বিপুল উন্নতি করিতে সমর্থ হইয়াছে। এই প্রসঙ্গে তিনি প্রদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনাসমূহ কার্যকরী করার ব্যাপারে বর্তমান সরকারের ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন। পল্টন ময়দানে ন্যাপের প্রথম সভায় গােলযােগ সম্পর্কে মন্তব্য প্রকাশ করিয়া জনাব মুজিবুর রহমান বলেন, স্বার্থান্বেষী মহল হইতে উক্ত গােলযােগকে ‘গুণ্ডামি’ বলিয়া অখ্যায়িত করার অপচেষ্টা করা হইয়াছে। অথচ আসলে ইহা ছিল রাষ্ট্রের সংহতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে জনতার স্বতঃস্ফুর্ত বিক্ষোভেরই অভিব্যক্তি। দেশের উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা সমূহের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার জন্য জনাব রহমান দেশে একদলীয় সরকারের প্রয়ােজনীয়তার উল্লেখ করেন।
আওয়ামী লীগ সম্পাদক তাহার বিরুদ্ধে মন্ত্রী থাকাকালীন দুর্নীতির অভিযােগ রটনাকারীদের বিরুদ্ধে উহা প্রমাণের জন্য চ্যালেঞ্জ প্রদান করেন।
তিনি জনসাধারণকে স্ব স্ব এলাকার দুর্নীতি দমন বাের্ড ও উন্নয়ন কমিটির সহিত পূর্ণ সহযােগিতা প্রদানের আহ্বান জানান।
প্রাদেশিক পাট বিভাগের মন্ত্রী জনাব আবদুর রহমান খান সভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে সরকারের পাটনীতি ও জুট মার্কেটিং কর্পোরেশন স্থাপনের প্রয়ােজনীয়তা উল্লেখ করেন।
এই দিন পূর্বাহ্নে জনাব আবদুল হামিদ মজুমদারের (এম,পি,এ) সভাপতিত্বে স্থানীয় টাউন হলে কর্মী ও কাউন্সিলারদের এক বিরাট সম্মেলন হয়। সম্মেলনে প্রায় এক সহস্রাধিক কর্মী ও কাউন্সিলার উপস্থিত ছিলেন।
এই সম্মেলনে জনাব আউয়াল, জনাব ওয়ালিউল্লাহ এম,পি,এ, হাজী রমিজ উদ্দীন, জনাব জিল্লুর রহমান প্রমুখ বক্তৃতা প্রদান করেন।
আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান জনাব জিল্লুর রহমান বক্তৃতা প্রসঙ্গে বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীতে যােগদানের আহ্বান জানান।