You dont have javascript enabled! Please enable it!

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দলীয় কার্যালয়ে
১৫ জানুয়ারি ১৯৭২
ঢাকা

(৯ মাস কারাভোগের পর প্রথম বারের মত আওয়ামী লীগ অফিসে আসেন।)

আমি দলীয় নেতাকর্মিদের ও পরিষদ সদস্যদের অনুরোধ করি গ্রামে গ্রামে ছড়াইয়া পড়িয়া হানাদার বাহিনীর গনহত্যাযজ্ঞ ও বর্বরতায় ক্ষয়-ক্ষতির ব্যপকতা নির্ধারন ও ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করবেন। … কাহারও আইনকে নিজের হাতে তুলিয়া নেওয়া উচিৎ নয়। দুষ্কৃতিকারীদের বিচার ও শাস্তি প্রদানের ভার সরকারের উপর ছাড়িয়া দিন। কোন জাতিই উদার মানসিকতার অধিকারী না হইয়া সমৃদ্ধি অর্জন করিতে পারেনা। আপনারা মুক্তিযুদ্ধে চরম ত্যাগ স্বীকার করিয়াছেন। এখন দেশ গঠনের কাজে নামিয়া পড়েন। আমার উদ্যেশ্য ছিলো সরকারের বাহিরে থাকিয়া জনগণের কল্যানার্থে গ্রাম হইতে গ্রামে ছুটিয়া যাই। কিন্তু গনদুশমনদের চক্রান্তে সে বাসনা বাস্তবায়িত হইতে পারে নাই। বাংলার জনগণ ও সরকারের বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্রের ব্যপারে হুশিয়ার থাকিতে হইবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশের জনগণ এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ রহিয়াছে এবং কস্টার্জিত স্বাধীনতা রক্ষাকল্পে তাহারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করার জন্যই আমাকে ক্ষমতার আসনে বসিতে হইয়াছে। বাংলাদেশ হইবে ষড়যন্ত্রকারীদের গোরস্থান। আগামী ৬ ই ফেব্রুয়ারি তারিখে আমি কোলকাতা যাইতে চাই। কোলকাতা যাইবার উদ্যেশ্য হইতেছে পশ্চিম বাংলার মহান জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞ্যাপন। কোলকাতা যাইবার আগে আমি আমার সোনার বাংলাকে একবার প্রাণ ভরিয়া দেখিয়া যাইতে চাই। … এক পাকিস্তানের স্মৃতিবাহী দলীয় পতাকা পরিবর্তিত হইবে। শয়তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা যায়না। বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রশ্নই ওঠে না।

(কান্নাভেজা বঙ্গবন্ধু বলেন) সামান্য অবস্থা থেকে আমি এই দলকে গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করি। অনেক সংগ্রাম-সাধনা, ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়া আওয়ামী লীগ আজ এক শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আমার বহু সহকর্মী আজ আমার পাশে নাই। তাঁরা চিরতরে হারাইয়া গেছে। আমি তোমাদের নেতা নই, তোমরা আমার কর্মী নও- তোমরা আমার ভাই।

(তিনি আবারো কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন)।

Reference:

দৈনিক ইত্তেফাক, ১৬ জানুয়ারি ১৯৭২
এই দেশ এই মাটি (প্রবন্ধ, বক্তৃতা, বাণী, নির্দেশ ও সাক্ষাৎকার) – শেখ মুজিবুর রহমান, পৃষ্ঠা ১৭১-১৭২, আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, মো জাহিদ হোসেন, ২০০৮, বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমী
বঙ্গবন্ধুর ভাষণসমগ্র ১৯৪৮-১৯৭৫, সংগ্রামের নোটবুক

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!