সামরিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিশন প্রত্যাখ্যান করেন বঙ্গবন্ধু
১৮ মার্চ ১৯৭১
ঢাকা
আমি দুঃখের সাথে বলছি যে, বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আমি যে দাবি জানিয়েছিলাম, ঘোষিত তদন্ত কমিশন সে দাবি পূরণ করতে পারবে না। সামরিক আইন প্রশাসকের আদেশবলে এ তদন্ত কমিশন গঠন এবং সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের রিপোর্ট পেশ করার যে নির্দেশ দিয়েছেন তা অত্যন্ত আপত্তিজনক। কারণ এর শর্তাবলী পূর্বাহে বিবেচ্য প্রধান প্রধান মৌলিক বিষয়গুলো নস্যাৎ এবং প্রকৃত ঘটনাবলী সম্পর্কে তদন্ত করার পথ রুদ্ধ করে দেবে। এ তদন্ত কমিশনের একমাত্র বিবেচ্য বিষয় হলো- ২ মার্চ থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত কি পরিস্থিতিতে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে সাহায্যের জন্যে সেনাবাহিনী তলব করা হয়েছিল। সুতরাং মৌলিক বিষয়টি এভাবেই স্থির করে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তদন্তের বিষয় ছিল বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে সাহায্যের জন্যে নিয়োগ না করে সেনাবাহিনীর নিয়োগ ও শক্তি প্রয়োগ রাজনৈতিক স্বার্থেই করা হয়েছিল কিনা? তাছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকৃতপক্ষে যেসব জোর-জুলুম করা হয়েছে এমন হাজার হাজার লোক হতাহত হয়েছে বলে সংবাদ পাওয়া গিয়েছে কমিশন এর সে ব্যাপারে তদন্তের পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। এর ফলে এমন কি হতাহতের সংখ্যা কত এবং কোন পরিস্থিতিতে নিরস্ত্র জনগণের প্রতি গুলিবর্ষণ করা হয়েছে তারও তদন্ত করা যাবে না।।
সুতরাং কমিশন কোনো সত্যিকার উদ্দেশ্য সাধন করতে পারবে না। ফলে, সত্যি ঘটনার মূল উদঘাটনের ব্যাপারে তদন্ত হবে না এবং এটা জনগণকে বিভ্রান্ত করার একটি ফন্দিমাত্র।
সুতরাং আমরা এরূপ কমিশন অনুমোদন করতে পারি না। বাংলাদেশের জনগণ কোনোক্রমেই এরূপ কমিশনের সাথে সহযোগিতা করতে পারে না। এ কমিশনে কারো কোনো সদস্য মনোনীত কিংবা কারো এর সদস্য হিসেবে কাজ করা উচিত নয়। জনগণের পক্ষ থেকে আমরা ৭ মার্চ ৪-দফা শর্ত উপস্থিত করেছি। তার মধ্যে একটি দাবি ছিল যথাযথ শর্ত সম্বলিত ন্যায্য, নিরপেক্ষ ও প্রকাশ্য তদন্ত। সেগুলোর মধ্যে কেবল নামমাত্র এবং খণ্ড খণ্ড দাবি গ্রহণ এবং যেভাবে এ দাবি গ্রহণ করা হয়েছে তার ফলে আমরা যে চরম সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছি সে সমস্যার সমাধান হবে না।
Reference:
পূর্বদেশ, ১৯ মার্চ ১৯৭১
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, আনু মাহমুদ, পৃষ্ঠা ১৫৫-১৫৬, প্রকাশকাল ২০১৭, ঢাকা, ন্যাশনাল পাবলিকেশন