You dont have javascript enabled! Please enable it! 1957.08.04 | প্রতিশ্রুতি পূরণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা | সংবাদ - সংগ্রামের নোটবুক

সংবাদ

৪ঠা আগস্ট ১৯৫৭

প্রতিশ্রুতি পূরণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা

শ্রমমন্ত্রীর সাফাইয়ের উত্তরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও সদস্যের পাল্টা অভিযােগ সম্প্রতি শ্রম বিভাগের মন্ত্রী জনাব মুজিবুর রহমান এক সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ সম্পর্কে যে মন্তব্য করেন তাহার প্রতিবাদে পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সংগঠনী কমিটির সদস্য জনাব মফিজুর ইসলাম নিম্নলিখিত বিবৃতি প্রদান করিয়াছেন।

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব শেখ মুজিবুর রহমান তাহার সাম্প্রতিক সাংবাদিক সম্মেলনে অনেকগুলি বেসামাল উক্তি করিয়াছেন। মানুষের স্মৃতিশক্তি নাকি খুব দুর্বল। সম্ভবতঃ এই কারণেই জনাব মজিবুর রহমান পুর্বাপর ঠিক রাখিয়া এবং সমস্ত ব্যাপার নিজের দায়িত্ব নির্ণয় করিয়া কথা বলিতে পারেন নাই। জনাব রহমান বলিয়াছেন, ২১ দফার মাত্র কয়েকটি ওয়াদা পূরণই বাকি আছে। এবং সেগুলি শাসনতন্ত্রের সংশােধন ব্যতীত পূরণ করা সম্ভব নয়। শাসনতন্ত্রের সংশােধন সম্বলিত তাহার যুক্তি মানিয়া লইলেও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রবর্তন সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের পার্থক্য বিলােপ করিয়া শিক্ষা ব্যবস্থার আশু সংস্কার সাধন ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়দ্বয়কে সরকারি কর্তৃত্বের আওতামুক্ত করিয়া পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানরূপে পরিণত করিতে শাসন সংস্কারের প্রয়ােজন হইত না। মাথাভারী শাসন ব্যবস্থার অবসান করিয়া উচ্চপদস্থ ও নিমপদস্থ সরকারি কর্মচারিদের বেতনের হারের সামঞ্জস্য বিধান ও শাসন বিভাগ হইতে বিচার বিভাগকে স্বতন্ত্রকরণ এবং অনুরূপ আরও কতিপয় শাসনতন্ত্রের সংস্কার সাধন একান্ত অপরিহার্য হইয়া পড়িয়াছে।

জনাব রহমানের নিশ্চয়ই স্মরণ আছে যে, প্রায় ৬ মাস পূর্বে প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রী জনাব আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পূর্ব পাক আওয়ামী লীগের কার্যকরী সমিতির সভায় অবিলম্বে ঢাকায় ঘােড়দৌড় খেলা বন্ধের জন্য এক নির্দেশ জারি করা হয়। কিন্তু সেই তথাকথিত খেলা আজও বহাল তবিয়তে চলিতেছে। এক্ষণে জনাব রহমানকে জিজ্ঞাস্য তাহাও কি শাসনতান্ত্রিক সংকটের জন্য? আওয়ামী লীগের পদত্যাগকারী সদস্যদের সম্পর্কে জনাব রহমান-এর মন্তব্য সত্যই বেদনাদায়ক। আমি নিজেও ৯২-ক ধারা শাসনের অব্যবহিত পরে আওয়ামী লীগে যােগদান করি। যদি “অসৎ উদ্দেশ্য লইয়া যােগদান করিয়াছিলামই তবে আমার বিবৃতি পত্রিকায় প্রকাশের পর জনাব রহমান উচ্ছসিত ভাষায় আমাকে অভিনন্দন জানাইয়া যে তারবার্তা ও পত্র প্রেরণ করিয়াছিলেন তাহার সবটাই কি শঠতাপূর্ণ? আমাদের দেশের নির্যাতিত খাটি দেশপ্রেমিকগণ আওয়ামী লীগে যােগদানে “গণতন্ত্র ও সুষ্ঠুরাজনীতির পক্ষে যে কতটুকু সহায়ক হইবে তাহা কি তখন তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় স্বীকার করেন নাই? আসল কথা হইল তদানীন্তন ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জনাব ফজলুল হক পরিচালিত যুক্তফ্রন্টের সাঁড়াশী আক্রমণের মুখে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব টিকাইয়া রাখিবার জন্য নির্যাতিত খাটি কর্মীদের প্রয়ােজন ছিল এবং তাহাদের প্রচেষ্টাতেই আওয়ামী লীগ ১৯৫৫ সালে সর্বপ্রথম জনগণের প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিণত হয় ও প্রতি ইউনিয়নে তাহার শাখা গড়িয়া ওঠে। কিন্তু ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর জনাব রহমান অতীতের সব প্রতিশ্রুতিই ভুলিয়াছেন।