সংবাদ
১১ই আগস্ট ১৯৫৭
প্রকৃত আওয়ামী লীগের অপমৃত্যু ঘটিয়াছে
দিনাজপুর, ৫ই আগষ্ট।- আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট কৰ্মী ও প্রভাবশালী সদস্য জনাব মইনুদ্দীন আহমদ বিশ্বাস আওয়ামী লীগের সহিত সকল সম্পর্ক ছিন্ন করিয়া নবগঠিত পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যােগদান করিয়াছেন। সংবাদপত্রে প্রকাশ, এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। আওয়ামী লীগের বিগত ঢাকা কাউন্সিল অধিবেশনে আমি যােগদান করিয়াছিলাম। ঐ কাউন্সিল অধিবেশনে সকল অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ আমি সচক্ষে দেখিয়াছি। ঐ কাউন্সিলে গৃহীত দেশ এবং জাতীয় স্বার্থবিরােধী সিদ্ধান্তসমূহের প্রতিবাদে সমগ্র প্রদেশের সৎ এবং প্রকৃত গণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ কর্মীগণ দলে দলে যখন আওয়ামী লীগ হইতে পদত্যাগ করিয়া চলিয়া যাইতেছিলেন সেই সময়ে আমি আওয়ামী লীগ হইতে আমার সমর্থন প্রত্যাহার করি নাই। কারণ ভাবিয়াছিলাম যে-আওয়ামী লীগের নেতৃবর্গবিশেষ করিয়া সােহরাওয়ার্দী-মুজিবর-আতাউর রহমান-তাহাদের অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপসমূহ এবং তাহাদের নেতৃত্বে যে আওয়ামী লীগের আদর্শচ্যুতি ঘটিতেছে তাহা উপলব্ধি করিতে পারিবেন এবং আওয়ামী লীগকে পুনরায় সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ বিরােধী সংগ্রামী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব হইবে । কিন্তু আমার এই ধারণা যে কতদূর ভ্রান্তিপূর্ণ ছিল তাহা আমি বুঝিতে পারিলাম পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত গুণ্ডামী হইতে। পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত গুণ্ডামী আমি সচক্ষে দেখিয়াছি। দেখিলাম আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংগৃহীত কতিপয় ভাড়াটিয়া গুণ্ডা ও সােহরাওয়ার্দীর সমর্থক আউয়াল উপচক্রটি ফ্যাসিষ্ট কায়দায় ডাণ্ডাবাজী শুরু করিয়া জনগণের প্রতিরােধের নিকট টিকিতে পারিল না-সেই সময় সরকার কর্তৃক ঘােষিত হইল ১৪৪ ধারা। পাকিস্তানী শাসকবর্গের ঐতিহ্য রহিয়াছে জনগণের বাক স্বাধীনতাকে পিষিয়া মারিবার। কিন্তু গণতন্ত্রের বক্তৃতায় সমৃদ্ধ শেখ মুজিবর রহমান সাহেবের দলেরও যে এই অল্পদিনে বিগত সরকারী দলগুলি তথা মুসলিম লীগ সরকারের ঐতিহ্যের প্রতি আকৃষ্ট হইবেন তাহা ভাবিতে পারি নাই। যে আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হইয়া আওয়ামী লীগের জন্য স্বার্থত্যাগ করিয়াছিলাম। আজ এ কথা পরিষ্কার যে, আওয়ামী লীগের সে আদর্শকে কতিপয় ক্ষমতা লােভী স্বার্থসর্বস্ব নেতা হত্যা করিয়াছেন। যে আওয়ামী লীগের প্রতি দেশের সর্বশ্রেণীর জনসাধারণ বিগত কয়েক বৎসর ধরিয়া সমর্থন জোগাইয়া আসিয়াছিলেন সেই প্রকৃত আওয়ামী লীগের অপমৃত্যু ঘটিয়াছে। তাই আজ এই ভুয়া আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠানের সদস্য বা সমর্থক হিসাবে আত্ম পরিচয় দিয়া জনগণের ধিক্কার কুড়াইতে চাই না। কিন্তু বিশেষ কোন ব্যক্তি, উপদল বা রাজনৈতিক দলের মৃত্যু ঘটিলে বা কোন রাজনৈতিক দল জনগণের প্রতি প্রদত্ত ওয়াদাসমূহের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিলেও-দেশ ও জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দুর্বার স্রোতকে ঠেকাইয়া রাখা যায় না। তাই পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অবিসম্বাদিত নেতা মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে নূতন করিয়া গড়িয়া উঠিয়াছে পাকিস্তানের উভয় অংশের মজলুম জনগণের সাচ্চা গণতান্ত্রিক কর্মীদের নিয়া “পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি।” আমি বিশ্বাস করি এই নবগঠিত দল পাকিস্তানকে গড়িয়া তুলিবে একটি সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসাবে। তাই আমি আওয়ামী লীগের সহিত সকল সম্পর্ক ছিন্ন করিয়া এই নবগঠিত পার্টিতে যােগদান করিলাম। ক্ষমতায় থাকার পর হইতে আওয়ামী লীগ দল যা কিছু অন্যায় বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে সেই সবকিছুর জবাব হইতেছে নবগঠিত পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে আমার এই যােগদান। আমার বিশ্বাস আজও যেসব সকর্মী ভ্রান্ত বিশ্বাসে আওয়ামী লীগে রহিয়া গিয়াছেন তাহারাও অচিরে আওয়ামী লীগের সহিত সম্পর্ক ছিন্ন করিয়া পল্টনের ময়দানে অনুষ্ঠিত বর্বর গুণ্ডামীর বলিষ্ঠ জবাব দিবেন এবং পাকিস্তানের জনগণের আশা বাস্তবে রূপ দিবার জন্য নবগঠিত পার্টিতে যােগদান করিবেন। পরিশেষে পূর্ব পাকিস্তানের সংগ্রামী ছাত্র সমাজের নিকট আমার আবেদন, ছাত্রসমাজ যেন অচিরে আউয়াল মােমিন তালুকদারের সকল অপকীর্তির জবাবস্বরূপ বলিষ্ঠ ছাত্র ঐক্য গড়িয়া তুলিয়া ব্যক্তিস্বাধীনতা তথা গণতন্ত্রের পতাকাকে উদ্ধে তুলিয়া ধরুন।