You dont have javascript enabled! Please enable it!

সাপ্তাহিক সৈনিক
৭ই জুন ১৯৫৭
আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে
অলি আহাদ বহিস্কৃতঃ ওয়ার্কিং কমিটিতে
নয়া সদস্য গ্রহণঃ মুজিবরের পদত্যাগপত্র গৃহিত না হওয়ার সম্ভাবনা

বিগত ৩রা জুন রাত্রে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটি পার্টির সংগঠনী সম্পাদক জনাব অলি আহাদকে তিন বৎসরের জন্য পার্টি হইতে বহিস্কার করিয়াছেন। পূর্বে জনাব অলি আহাদকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে এবং সাধারণ সম্পাদক জনাব মুজিবরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার অভিযােগে সাময়িকভাবে পদচ্যুত করা হইয়াছিল। ওয়ার্কিং কমিটি জনাব অলি আহাদের শূন্যপদে জনাব আবদুল হামিদ চৌধুরী এম, পি, এ কে সংগঠনী সম্পাদকরূপে কো-অপ্ট করিয়াছে। সভায় উজিরে আলা জনাব আতাউর রহমান সভাপতিত্ব করেন।
ওয়ার্কিং কমিটির সভায় উপস্থিত চারিজন মন্ত্রীসহ ষােলজন সদস্যই সর্বসম্মতিক্রমে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। জনাব অলি আহাদকে সাময়িকভাবে পদচ্যুৎ করার প্রতিবাদে বিগত ৩১শে মার্চ ওয়ার্কিং কমিটির যে নয়জন সদস্য পদত্যাগ করিয়াছিল তাহাদের স্থলে ওয়ার্কিং কমিটির এই সভায় নতুন সদস্য কো-অপ্ট করা হয়।
সাধারণ সম্পাদক জনাব শেখ মুজিবর রহমান সাংবাদিকদের জানান যে, অলি আহাদের নিকট চার্জসীট প্রেরণ করা হইয়াছিল এবং দীর্ঘকাল উহার কৈফিয়তের জন্য অপেক্ষা করা হইয়াছিল।
একটি রেজিষ্ট্রার্ড কভারে পিওনের হাতে চারিবার চার্জসীট প্রেরণ করা হইয়াছে এবং চারিবারই পার্টি অফিসে তাহা ফেরত পাঠানাে হইয়াছে। আওয়ামী লীগের দুইদিনব্যাপী কাউন্সিল অধিবেশন ১৩ই জুন স্থানীয় নিউ পিকচার্স হাউসে শুরু হইবে। কাউন্সিলে অন্যান্য বিষয়ের সহিত প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট জনাব আবদুল হামিদ খান ভাসানীর পদত্যাগপত্র সম্পর্কে বিবেচনা করা হইবে। মনে হয় এই কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সােহরাওয়ার্দী এবং ভাসানী উপদলের মধ্যে শেষ শক্তি পরীক্ষা হইয়া যাইবে। এই শক্তি পরীক্ষার উপরই আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ ভূমিকা নির্ভরশীল। ওয়াকেবহাল মহলের এক খবরে জানা গিয়াছে যে, পূর্ব পাকিস্তানের শিল্প, বাণিজ্য ও শ্রমমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমানের পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ার সম্ভাবনা রহিয়াছে। আওয়ামী লীগের বিগত কাগমারী অধিবেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জনাব মুজিবর গত ৩১শে মে মন্ত্রিসভা হইতে পদত্যাগ করেন। অতঃপর উজিরে আলা তাঁহাকে ১৫ই জুন পর্যন্ত কাজ চালাইয়া যাইতে অনুরােধ করেন। প্রকাশ, উজিরে আলা দুইটি কারণে শেখ মুজিবরের পদত্যাগের বিরােধী। প্রথমতঃ শেখ মুজিবর মন্ত্রিসভা ত্যাগ করিলে মন্ত্রিসভা অপেক্ষাকৃত দুর্বল হইয়া পড়িবে। দ্বিতীয়তঃ প্রদেশের উন্নয়নের জন্য ক্ষুদ্র শিল্প কর্পোরেশন, ফিল্ম ডেভলপমেন্ট করপােরেশন ও দুর্নীতি দমন বিভাগ প্রতি শিল্প মালিক বিরােধে সমঝােতা আনয়ন প্রভৃতি কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য শেখ মুজিবরের আরও কিছুকাল মন্ত্রী পদে সমাসীন থাকা বাঞ্ছনীয়। শেখ মুজিবর মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করিয়া জনাব ভাসানীর মত যদি সরকারী কার্যাবলীর তীব্র সমালােচনা করিতে থাকেন তবে সে ক্ষেত্রে এই সমালােচনার চাপ সহ্য করিয়া মন্ত্রিসভা টিকাইয়া রাখা জনাব আতাউর রহমানের পক্ষে কষ্টসাধ্য হইয়া পড়িবে। কাউন্সিল অধিবেশন উপলক্ষে জনাব সােহরাওয়ার্দী ঢাকা আগমন করিলে জনাব আতাউর রহমান শেখ মুজিবরের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিবেন। শেখ মুজিবরের পদত্যাগপত্র যদিও প্রত্যাহার করা না হয় তাহা হইলে হয়ত জনাব আতাউর রহমানও পদত্যাগ করিয়া আগামী নির্বাচন পর্যন্ত সাংগঠনিক কাজে মনােনিবেশ করিবেন। সে ক্ষেত্রে জনাব আবুল মনসুর আহমদ পূর্ব পাকিস্তানের উজিরে আলা হইবেন বলিয়া পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা।
পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করিলে জনাব মুজিবর জাতির বিরাট প্রয়ােজনের খাতিরেই মন্ত্রী রহিয়া গেলেন বলিয়া হয়ত বিবৃতি ঝাড়িবেন। সেই বিরাট প্রয়ােজনের খাতিরেই হয়তাে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র ও সংশােধিত হইয়া যাইতে পারে, যদি জনাব সােহরাওয়ার্দীর দল সংখ্যায় ভারী থাকেন এবং সে ক্ষেত্রে জনাব মুজিবর মন্ত্রী এবং সেক্রেটারী উভয় পদ অলংকৃত করিয়া থাকিবার সুযােগ পাইবেন।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!