You dont have javascript enabled! Please enable it! 1957.03.15 | পূর্ব পাকিস্তান ব্যবস্থা পরিষদে বৃহস্পতিবারে সর্বমােট ১৯টি সরকারী বিল পাশ- শাসন বিভাগ হইতে বিচার বিভাগকে পৃথককরণ | সংবাদ - সংগ্রামের নোটবুক

সংবাদ
১৫ই মার্চ ১৯৫৭
পূর্ব পাকিস্তান ব্যবস্থা পরিষদে বৃহস্পতিবারে সর্বমােট ১৯টি সরকারী বিল পাশ
শাসন বিভাগ হইতে বিচার বিভাগকে পৃথককরণ
ডিভিশন চাহিয়া বিপুল ভােটাধিক্যে বিরােধীদল পরাজিত
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতি গৃহিত

পূর্ব পাকিস্তান ব্যবস্থা পরিষদে গতকল্য (বৃহস্পতিবার) পাঁচ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে ঊনিশটি বিল গৃহীত হইয়াছে। পূর্ব পাকিস্তান ক্ষুদ্রায়তন ও কুটির শিল্প বিলের তফসিলের উপর ডিভিশন দাবী করিয়া বিরােধীদল চরমভাবে পরাজিত হইয়াছেন। বর্তমান অধিবেশনের এই প্রথম ডিভিশনে সরকার পক্ষ ১৪১ এবং বিরােধীদল ৮৩ ভােট পাইয়াছেন।
গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলির মধ্যে স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত পাঁচটি বিল ফৌজদারী কার্যবিধি (পূৰ্ব্ব পাক সংশােধনী) এবং ক্ষুদ্রায়তন ও কুটির শিল্প বিল অন্যতম। শেষােক্ত বিলটির উপর সর্বাধিক সময় আলােচনা হয়। স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত পাঁচটি বিল অনুযায়ী জেলাবাের্ড, মিউনিসিপ্যালিটি ও ইউনিয়ন বাের্ডের নির্বাচন প্রাপ্তবয়স্কদের ভােটে অনুষ্ঠিত হইবে। কোন প্রকার মানােন্নয়ন প্রথা থাকিবে না। প্রেসিডেন্টদের সরাসরি নির্বাচিত হইতে হইবে। ফৌজদারী কার্যবিধি (সংশােধনী) বিলের ফলে বিচার বিভাগ শাসন বিভাগ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়াছে। একটি সংশােধনীর ফলে পশু হত্যা নিবারণী বিল অনুযায়ী সাত বৎসর বয়সের কম হইলে কোন গবাদিপশু হত্যা করা চলিবে না। মূল বিলে বয়ঃসীমা দশ করা হইয়াছিল। গতকল্য বিরােধী দলীয় অধিকাংশ সদস্য রাত্রি সাড়ে নয়টার পর বিলের আলােচনায় অংশগ্রহণ করিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। অধিবেশনের শেষের দিকে মাত্র তিন চারিজন বিরােধী সদস্য আসনে বসিয়া ছিলেন। বাকী সমস্ত সদস্য পরিষদ কক্ষ ত্যাগ করিয়া চলিয়া যান। তাঁহাদের মাত্র রাত্রি সাড়ে নয়টার পর অধিবেশন করার দাবীকে অনেকে “কর্তব্যের প্রতি উদাসিন্য” বলিয়া অভিহিত করেন। অপরাহ্নে সাড়ে পাঁচ ঘটিকায় স্পীকার জনাব আবদুল হাকিমের সভাপতিত্বে অধিবেশন বসে। জনাব স্পীকার কতিপয় বিরােধী দলীয় সদস্যদের দাবী ও অনুরােধে বেসরকারী কার্য্যের জন্য বর্তমান অধিবেশনে একটি দিন ধার্য্যকরার আশ্বাস দান করেন। পরিষদের কাৰ্য্যের মধ্যে উপবিষ্ট অবস্থায় অবস্থানের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টের জনাব আবদুল হামীদ প্রথমে আপত্তি উত্থাপন করেন। আরাে কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে পরিষদের নেতা জনাব আতাউর রহমান খানও সমর্থন করেন। কিন্তু স্পীকার উহা নিয়ম মাফিক নয় বলিয়া অগ্রাহ্য বলিয়া ঘােষণা করেন। ক্ষুদ্রায়তন ও কুটির শিল্প বিল নিয়ে অধিবেশনে সর্বাধিক আলােচনা হয়। উক্ত সংশােধনীতে কর্পোরেশনের শেয়ার ইউনিট একশত টাকার স্থলে দশ টাকা এবং শেয়ার ক্রেতাদের অবাধে শেয়ার ক্রয়ের সুবিধা না দিয়া উহার সীমা নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়ার দাবী করা হইয়াছিল। উক্ত বিল অনুযায়ী সরকার প্রদেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রসার ও উন্নয়নের উদ্দেশ্যে একটি কপোরেশন গঠন করিবেন। এই কর্পোরেশন কুটির শিল্পীদের সাহায্য করিবে। বিলটির তফসিল পাশ করার সময় বিরােধীদল হইতে ডিভিশন দাবী করা হয়। এই ডিভিশনে ৫৯ ভােটের ব্যবধানে বিরােধীদল চরমভাবে পরাজিত হয়। বিল পাশের পর শ্রী পি সি লাহিড়ী বিলটির জন্য সরকারকে অভিনন্দন জানান। কিন্তু অনুরােধ করেন যে ভবিষ্যতে সরকার যেন গরীব জনসাধারণের সুবিধার জন্য অন্ততপক্ষে অধিকাংশ শেয়ার দশ টাকা মূল্যেও করার চেষ্টা করেন। শিল্প মন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমান বলেন সরকার প্রয়ােজন মনে করিলে বিলটি ভবিষ্যতে জনস্বার্থের জন্য নতুন করিয়া ঢালাই করিবেন। কারণ এই বিল জনকল্যাণের জন্যই প্রণিত।