সাপ্তাহিক সৈনিক
১লা ফেব্রুয়ারি ১৯৫৭
সম্পাদক উপ-নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগে গােলযােগ?
আসন্ন কাউন্সিল অধিবেশনকে কেন্দ্র করিয়া প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের মধ্যে যে কোন্দল গজাইয়া উঠিতেছে তারই প্রমাণ মিলিবে আওয়ামী লীগের কোন্দলরত অন্যতম গ্রুপের সমর্থক “নতুন খবরের নিম্নোক্ত বিবরণী হইতেঃ
“পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারীর পদ লইয়া আওয়ামী লীগের দক্ষিণ ও বামপন্থী দলের মধ্যে চরম বিরােধের সৃষ্টি হইয়াছে এবং তাহার ফলে আওয়ামী লীগে বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা গিয়াছে। নির্ভরযােগ্য সূত্রে জানা গেল যে, জেনারেল সেক্রেটারীর পদের জন্য নির্বাচনে যতগুলি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত করিয়াছেন তাহাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান। সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব অলী আহাদও আছেন।
“জনাব অলি আহাদ বিগত কিছু দিন যাবত প্রদেশের অভ্যন্তরে ব্যাপকভাবে সফর করিয়া বহু কাউন্সিলারের সমর্থন লাভের ব্যবস্থা করায় আওয়ামী লীগের উর্ধ্বতন মহলে আতঙ্কের সঞ্চার হইয়াছে। আরও প্রকাশ জনাব অলি আহাদের বিরুদ্ধে জনৈক। এম, পি, একে দাঁড় করানাে হইতেছে এবং তাহাকেই উর্ধ্বতন মহল নানাভাবে সমর্থন করিতেছেন। প্রকাশ কাউন্সিলার মহলে এই শেষােক্ত প্রার্থী তেমন পরিচিত নহে। “আরও প্রকাশ আওয়ামী লীগের বার্ষিক অধিবেশনটি ঢাকায় অনুষ্ঠানের জন্য কোন বিশেষ মহল হইতে জোর চেষ্টা করা হইয়াছিল, কিন্তু অপর এক মহল হইতে ইহাতে আপত্তি উত্থাপন করা হয়। শেষােক্ত মহল তাহাদের আপত্তিতে প্রকাশ করেন যে, ঢাকায় কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হইলে কাউন্সিলারগণের উপর নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের সুযােগ আছে। যেহেতু এই অধিবেশনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে সমালােচনা হওয়ার সম্ভাবনা আছে, সেই হেতু এই অধিবেশন মুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। প্রকাশ মওলানা ভাসানী এই যুক্তির সারমর্ম উপলব্ধি করিয়া কাউন্সিল অধিবেশন আগামী ৭ই ও ৮ই ফেব্রুয়ারী কাগমারীতে অনুষ্ঠানের আদেশ দিয়াছেন এবং তদনুযায়ী বর্তমান জেনারেল সেক্রেটারী ও প্রাদেশিক শিল্প, বাণিজ্য ও শ্রমসচিব জনাব শেখ মুজিবর রহমান তাহা ঘােষণা করিয়াছেন। প্রকাশ ইতিমধ্যে আবার জনাব অলি আহাদকে কতিপয় উচ্চ সরকারী চাকুরী গ্রহণের জন্যও আহ্বান করা হইয়াছিল এবং তাহা নাকি স্বসম্মানে প্রত্যাখ্যান করা হইয়াছে। এই দোটানার মধ্যে মওলানা ভাসানী কাহাকে সমর্থন করিবেন সে কথা লইয়াও যথেষ্ট জল্পনা-কল্পনা শুরু হইয়াছে। মওলানা সাহেব যদিও এই উপদলীয় কোন্দলে সরাসরি জড়াইয়া পড়েন নাই, তবে অনেকেরই ধারণা তিনি ব্যক্তিগতভাবে কাহাকেও সমর্থন করিবেন না, অধিকাংশ কাউন্সিলারদের বিচারবুদ্ধির উপরই তাহার সমর্থন জ্ঞাপন করিবেন। কেহ-কেহ বলিতেছেন যে জেনারেল সেক্রেটারী পদের নির্বাচনেও যাহাতে কোন প্রকার প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা না থাকে তাহার জন্যই মওলানা ভাসানী কাউন্সিল অধিবেশন কাগমারীতে আহ্বান করিয়াছেন।“প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য যে, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করিলে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার পদ হইতে অবসর গ্রহণ করিতে হয়।” “নির্ভরযােগ্য সূত্রে আরও জানা গেল যে, আওয়ামী লীগের একটি বিশেষ শক্তিশালী মহল ইতিমধ্যেই জনাব অলি আহাদের বিরুদ্ধে জোর প্রচারণায় মাতিয়াছে এবং তাঁহাকে কমুনিষ্ট-প্রভাবিত বলিয়া চিত্রিত করার জন্য নানাপ্রকার কারসাজির আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছে। এই মহল বিশেষ বিশেষ সুযােগ-সুবিধার লােভ ও নানাপ্রকার শাস্তির হুমকি দেখাইয়া কাউন্সিলারগণকে অলি আহাদ ব্যতীত অপর পার্টিকে সমর্থন করাইবার জোর প্রচেষ্টা চালাইয়াছে।”